Saturday, April 30, 2011

বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে আয়ের সমস্যা কি

ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় বর্তমান বাংলাদেশের একটি অন্যতম আলোচিত বিষয়। এই সাইটে সবচেয়ে বেশি ভিজিট করা পোষ্টগুলি সেটাই প্রমান করে। মানুষ নিজে কিছু করতে চায়। ডলারে আয় করলে সেটা বাংলাদেশের হিসেব যথেস্ট, বিনিয়োগ প্রয়োজন হচ্ছে না, চাকরী খুজতে হচ্ছে না, ব্যবসার ঝুকি নিতে হচ্ছে না, এই সবগুলি বিষয় কাজ করে এই বিবেচনায়। কিন্তু বাস্তবে এই পদ্ধতিতে অনেকগুলি সমস্যা রয়ে গেছে। অনেকগুলি এতটাই বড় সমস্যা যে আপনাকে আগেই ভেবে নিতে হয় একাজে হাত দেবেন কি-না।
প্রথম সমস্যা অত্যন্ত পরিচিত। যা নিয়ে বহু কথা বলা হয়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। অনলাইনে অর্থ লেনদেনের সুযোগ তারা দেবেন না। যদিও বক্তৃতা-বিবৃতিতে তারা পিছিয়ে নেই। কদিন আগে এধরনের কোন এক প্রতিস্ঠানের দায়িত্বে থাকা একজন বিটিভির অনুষ্ঠানে জানালেন তাদের হার্ডঅয়্যার কেনা হয়ে গেছে এখন শুধু সফটঅয়্যার কেনা বাকি। বলা প্রয়োজন নেই এধরনের কথা বলার বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এধরনের পদে যাওয়ার সুযোগ পান। অর্থমন্ত্রীও একবার বলেছেন এতে তিনি কোন সমস্যা দেখেন না। বিষয়টি ওপর্যন্তই।
কাজেই আপনার প্রধান সমস্যা হচ্ছে, আপনি অর্থ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে পে-পল ব্যবহার। বাংলাদেশে সেটা ব্যবহারের অনুমতি নেই। আপনি ঘুরপথে সেটা ব্যবহার করতে পারেন, তাতে সরকারের আপত্তিও নেই। সরলপথে যেতেই যত আপত্তি। আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে পে-পলের আইনবিরোধী কাজ করতে, যার ফল হিসেবে যেকোন সময় আপনার টাকাসহ একাউন্ট বাতিল হতে পারে।
এই সমস্যাগুলি এড়িয়ে আপনি যা করতে পারেন সেদিকে হয়ত দৃষ্টি দিলেন। গুগল সহ অনেক প্রতিস্ঠান চেক পাঠায়। ব্যাংকের মাধ্যমে সেটা ভাঙ্গানোও যায়। কাজেই আপনাকে প্রথম খোজ করতে হয় কোন কোম্পানী বা ব্যক্তি চেক দেয়।
ইন্টারনেটে আয়ের বড় ধরনের সুত্রগুলির দিকে একবার দৃষ্টি দিন। ফ্রিল্যান্স কাজের যায়গা ওডেস্ক কিংবা ফ্রিল্যান্সার আপনাকে চেক পাঠাবে না। কাজেই চেক পাওয়ার আশায় সেকানে কাজ খোজ করবেন না। কেউ কেউ পে-পলের বিকল্প হিসেবে মানিবুকারস ব্যবহার করে যা বাংলাদেশে বৈধ, এই পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন অনেকে।
আপনি কিছু বিক্রি করতে চান অথচা আপনাকে প্রথমে খোজ করতে হচ্ছে ক্রেতা আপনাকে কিভাবে অর্থ দেবে সেটা। এই প্রতিযোগিতার বাজারে এটা কখনোই ব্যবসা হতে পারে না।
আপনি যদি কিছু কিনতে চান তখনকার অবস্থাটা আরো করুন। আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি সার্ভার ভাড়া করতে চান, তাকে টাকা দেবার ব্যবস্থা নেই। আপনি কোন সফটঅয়্যার কিনতে চান তাকে টাকা দেবার ব্যবস্থা নেই। বদলে বাংলাদেশে রয়েছে পাইরেটের সফটঅয়্যারের বাজার। যারা ইন্টারনেটে ব্যবসা করতে চান তারা ভাল করেই জানেন, এজন্য কিছু সফটঅয়্যার কিনতে হয়। সেখানে পাইরেসি চলে না।
আপনি হয়ত নিজেকে সংকুচিত করে নিলেন যতটা করা যায়। যারা বংলাদেশের সাথে মানানসই তাদের সাথে ব্যবসা করবেন।
ক্লিক-ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রতিস্ঠান। তাদের লক্ষ লক্ষ পন্য থেকে বাছাই করে নিজের সাইটে রাখতে পারেন। কেউ সেখানে ক্লিক করে পন্য বা সেবা নিলে প্রচারে সহায়তা করার জন্য আপনি পাবেন কমিশন। ১% থেকে ৭০% পর্যন্ত। অনেকেই এভাবে বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করেন। আপনিও আগ্রহি হয়ে তাদের সাইটে গেলেন বিনামুল্যে নিজের নাম লেখানোর জন্য। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলেন তাদের সাইটে বাংলাদেশের নামই নেই।
নতুন করে আর বলার কিছু নেই। আপনি অনলাইনে যদি কোন পন্য কিনে আন্তর্জাতিক কুরিয়ারে সেটা পেতে আশা করেন, অধিকাংশ অনলাইন ষ্টোর বলে দেয় বাংলাদেশের জন্য তাদের সে ব্যবস্থা নেই। যদি কোনভাবে সেটা পাঠানোও হয়, আপনি পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। একটা উদাহরন দিয়ে বলতে পারি, একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকার ১ বছরের গ্রাহক হয়ে শুধুমাত্র প্রথম সংখ্যা হাতে পেয়েছি, এরপর বছরশেষে তাদের চিঠি পেয়েছি যেখানে বলা হয়েছে মেয়াদ শেষ হওয়ার খবর এবং নতুনভাবে টাকা দেয়ার তাগিদ।
যদি কোনভাবে জিনিষ পৌছে, কাষ্টমস এর লোকেরা আপনাকে কতটা ঘোলাপানি খাওয়াবে সেটা তাদের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে। আবারও আরেক উদাহরন, সামনেই এক জাপানীকে বলা হল, অত টাকা দিবেন কিনা কন।  না দিলে জিনিষ ভাইঙ্গা ফালামু।
বাংলাদেশের মানুষ দেশের ভাবমুর্তি বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। এসব কথা লোকের কানে গেলে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়, কাজেই মুখবন্ধ করে থাকাই ভাল। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এখনও সময় আছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুব সহজে হাজার ডলার আয় করার।
বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বাইরের সমস্যা অনেক। বহু ওয়েবসাইট বাংলাদেশের জন্য বন্ধ, বহু সেবা বন্ধ। পুরোপুরি বাংলা ওয়েবসাইটে গুগলের এডসেন্স পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় না। তার ওপর যদি কর্তৃপক্ষ মানুষের হাতপা বেধে রাখেন তাহলে অচিরেই মানুষের উতসাহ কমে যাবে।
লোকে বলে শিশু না কাদলে মা তাকে খেতে দেয় না। বাংলাদেশের জনগন হয়ত শিশুর যোগ্যতাও হারিয়েছে।

No comments:

Post a Comment