Sunday, April 10, 2011

পাইরেসি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ

আপনি যদি বাংলাদেশে বাস করেন তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন। ৪০০০ ডলারের সফটঅয়্যার আপনি কেনার সুযোগ পান ৪০ টাকায়। সেটা হাতে পেয়ে নিজেকে বলেন, এই সফটঅয়্যার শিখে মানুষ কোটি কোটি ডলার উপার্জন করে। আমিও করব। ওইতো সবাই বলছে আউটসোর্সিং হবে এদেশের প্রধান আয়। বাংলাদেশ দরীদ্র দেশ থেকে ধনী দেশে পরিনত হবে।
এখনও যদি একথা বিশ্বাস করেন তাহলে বলতেই হচ্ছে, আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। চোখ খুলে একবার চারিদিকের বাস্তবতা দেখার চেষ্টা করুন।
শুরুতে দেখা যাক এই ধারনা সমাজে প্রবেশ করেছে কিভাবে। যারা এই কথাগুলো ক্রমাগত বলে চলেছেন তাদের দিকে একবার দৃষ্টি দিন।
এদের কেউ শিক্ষক, কেউ হার্ডঅয়্যার ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষা ব্যবসায়ী, কেউ আমদানী-রপ্তানী ব্যবসায়ী, বাকিরা সাধারন ব্যবসায়ী-শিল্পপতি এবং রাজনৈতিক নেতা। এসব কথা বলে তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। শিক্ষককে সন্মান করতে হয় একথা ভেবে বলতেই পারেন তারা যোগ্যতাসম্পন্ন বলেই তো শিক্ষা দেন।
এটা মারাত্মক ভুল ধারনা। যদি তারা নিজেরা একথা বিশ্বাস করেন তাহলে তারা ভন্ড এবং মিথ্যেবাদী। এধরনের কথা বলে তারা সমাজের মাথায় বসে খাচ্ছেন। সফটঅয়্যার নিয়ে যারা কাজ করেন তারা পেশাদার সফটঅয়্যার ডেভেলপার, শিক্ষক নন। যারা জীবনে দুলাইন কোড লেখেননি, সফটঅয়্যারের বাস্তব সমস্যা দেখেননি এমন ব্যক্তির সেদিকে কথা বলার যোগ্যতা নেই। অথচ প্রতিনিয়ত তারা বলছেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্গালুরু-চেন্নাই এর মত হবে। এবং আপনি প্রশ্ন না করেই শুনে যাচ্ছেন। একবার নিজেকে এবং তাদেরকে প্রশ্ন করুন, বেঙ্গালুরুর একটি প্রতিস্ঠানে যারা কাজ করেন তাদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা কি, কোন যোগ্যতাসম্পন্ন কি পরিমান মানুষ সেখানে কাজ করে, কি কাজ করে এবং কত টাকার কাজ করে। এ প্রশ্নগুলির উত্তর তারা জানেন না, অথবা সেগুলি থেকে আপনাদের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতেই অন্যধরনের কথা বলেন।
এবারে নিজের দিকে দৃষ্টি দিন। আপনি সফটঅয়্যার শিখে নিজেই যোগাযোগ করে বাইরের কাজ (তাদের ভাষায় আউটসোর্সিং) করবেন। একথা ঠিক আপনি চেষ্টা করে ৫০ ডলার কিংবা ৫০০ ডলারের কাজ পাবেন এবং করতেও পারবেন। ৫ লক্ষ ডলারের কাজ কখনোই পাবেন না। ভারতের বহু প্রতিস্ঠান কাজ করে শতকোটি ডলারের।
কারন ?
এধরনের কাজ না পাওয়ার কারন আপনার যোগ্যতা। ৫ লক্ষ ডলারের কাজ করার জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমান অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং জনবল। সেটা একদিনে গড়ে ওঠে না। গড়ে তুলতে হয় বছরের পর বছর কাজ করে, ছোট কাজ থেকে বড় কাজ এই নিয়মে। আপনি কখনোই ছোট কাজ করার সুযোগ পাননি, বড় কাজে হাত দেবেন কিভাবে ?
ছোট কাজ কেন করার সুযোগ পাচ্ছেন না ?
কারন পাইরেসি। ৪০ টাকায় যেখানে আমেরিকান সফটঅয়্যার পাওয়া যায় সেখানে আপনাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করাবে কে ? তাদের প্রশ্ন, আপনি কি তাদের চেয়ে বড় প্রোগ্রামার!
ফল যা হবার তাই, বিশ্বে এমন কোন সফটঅয়্যার নেই যা আপনার হাতে নেই অথচ আপনি বেচে থাকার মত কাজ পাচ্ছেন না। কাজেই দক্ষতা বাড়ছে না, অভিজ্ঞতা হচ্ছে না। কখনোই বড় কাজ হাতে পাওয়ার সুযোগ তৈরী হচ্ছে না। এজন্য পাইরেসি দায়ী কি-না এপ্রশ্ন যদি এখনও থেকে থাকে তাহলে বর্তমানের দিকে একবার দৃষ্টি দিন। পাইরেসির কারনে বাংলা গান হারিয়ে গেছে। দুদশক আগে যেসব নামী শিল্পী নিয়মিত রেকর্ড বের করতেন তারা গান করা ছেড়ে দিয়েছেন, বড়জোর আয় করছেন টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক-বিচারক হয়ে।
আরেকটি ভুল কথা প্রচার করা হয় সবসময়। বলা হয় ভারতের সাধারন মানুষ তুলনামুলক ভাল ইংরেজি জানে বলে আউটসোসিং কাজের সুবিধে হয়। আউটসোসিঙ বলতে যদি কল সেন্টার বুঝানো হয় তাহলে সেটা ঠিক। কারন সেখানে একটামাত্র কাজ, তা হচ্ছে কথা বলা। আর যদি কাজ করা বলতে সফটয়্যার ব্যবহার বুঝায় তাহলে এটা ধোকা দেয়া বক্তব্য। আপনি যদি প্রোগ্রামার হন তাহলে ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে কেন ? প্রোগ্রামের সমস্যা নিয়ে চিন্তা না করে তোতাপাখির মত ইংরেজি মুখস্ত করতে হবে কেন ? একাজ করার জন্য কোম্পানীতে ইংরেজি জানা একজন লোকই যথেষ্ট। জাপানের মানুষের ইংরেজির দক্ষতা বাংলাদেশীর থেকে অনেক কম, তারপরও তারা বিশ্বের সেরা হয়ে রয়েছে কিভাবে ?
যদি কাজ করতে হয় তাহলে কাজের কথা বলুন, যেভাবে কাজ হবে সেভাবে চলুন। বলার আগে একটু ভেবে নিন কি বলছেন।
যদি এখনও একযুগ আগের চিন্তা মাথায় নিয়ে বলে বসেন, পাইরেসি বন্ধ হলে সফটঅয়্যার কেনার টাকা পাব কোথায় ? মাইক্রোসফটকে আরো ধনী বানিয়ে লাভ কি ?
তাহলে আপনি এখনো একযুগ পিছিয়ে রয়েছেন। বর্তমানের এমন কোন কাজ নেই যা বিনামুল্যের ওপেনসোর্স সফটঅয়্যার দিয়ে করা যায় না।
যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হয়, তথ্যপ্রযুক্তিকে কর্মসংস্থান এবং জীবনে ব্যবহার করতে চান তাহলে প্রথম শ্লোগান হওয়া উচিত, আর কোনকথা না বলে পাইরেসি বন্ধ করুন।

1 comment:

  1. আমি একজন অবাঙালী ভারতীয়।আপনাৰ লেখাটা খুব ভাল লাগল।ধন্যবাদ।

    ReplyDelete