নাম থেকে আফটার ইফেক্টস (Adobe After Effects) এর কাজ সম্পর্কে ধারনা করতে পারেন, এতে ভিডিওর ওপর ইফেক্ট দেয়া যায়। কথাটা ঠিক। সাধারন একটা বাড়ির ভিডিওর ওপর আগুন দেখাতে পারেন, সাধারন পরিবেশের ভিডিওতে বৃষ্টি দেখাতে পারেন, নানারকম রঙের কম্পোজিশন তৈরী করতে পারেন। হলিউডি ছবিতে যাকিছু ইফেক্টস দেখা যায় সেগুলি করতে পারেন খুব সহজেই। কিন্তু এর কাজ শুধুমাত্র ইফেক্ট তৈরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না। কম্পোজিট ভিডিও তৈরীর ক্ষেত্রে এটা অতুলনীয় সফটঅয়্যার, এছাড়া সরাসরি এনিমেশনের কাজেও ব্যবহার করেন অনেকে। এমনকি ক্যারেকটার এনিমেশনের কাজেও।
কম্পোজিশনের বিষয়টি একটু জেনে নেয়া যাক। এডবির আরেক সফটঅয়্যার ফটোশপ সম্পর্কে যদি জানেন তাহলে অনায়াসে একে ফটোশপের সাথে তুলনা করতে পারেন। ফটোশপে বিভিন্ন লেয়ারে বিভিন্ন ছবি বসিয়ে নানারকম ইফেক্ট ব্যবহার করে নতুন কিছু তৈরী করা যায়। আফটার ইফেক্টসে একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন লেয়ারে ইমেজ, ড্রইং, টেক্সট, এনিমেশন, ভিডিও ইত্যাদি বসিয়ে কম্পোজিশন তৈরতে পারেন। পার্থক্য হচ্ছে এর প্রতিটি বিষয়কে পৃথকভাবে এনিমেট করার সুবিধে।
যাদুর চাদরে করে একজন মানুষ আকাশে মেঘের মধ্যে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, আফটার ইফেক্টসে সহজ একটি কাজ। আপনার প্রয়োজন একজন মানুষের ছবি, একটি চাদরের ছবি এবং একটি মেঘসহ আকাশের ছবি। যদি মেঘসহ আকাশের ভিডিও না থাকে তাহলে সেটাও তৈরী করে নেয়া যায় এখানেই।
এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার সবসময়ই দেখছেন টিভিতে। কোন টিভি অনুষ্ঠানে যখন নাম দেখানো হয় তার অধিকাংশই তৈরী হয় আফটার ইফেক্টস ব্যবহার করে। বিষয়টি তুলনামুলক সহজ। ভিডিও বা এনিমেশনকে এক বা একাধিক লেয়ারে রেখে আরেক লেয়ারে টেক্সট ব্যবহার।
আর এনিমেশনের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার এতটাই প্রচলিত যে নতুন ভার্শনগুলিতে ক্যারেকটার এনিমেশনের জন্য নানারকম ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে।
আফটার ইফেক্টস ব্যবহার করার সময় আপনাকে যে কাজগুলি করতে হবে সেগুলি সম্পর্কে একবার জেনে নিন।
. আফটার ইফেক্টস সফটঅয়্যার চালু করলে নিজে থেকে কোন ডকুমেন্ট ওপেন হয় না। আপনাকে একটি নতুন ডকুমেন্ট (প্রোজেক্ট) তৈরী নিতে হয়। আফটার ইফেক্টস এর প্রতিটি কাজ কম্পোজিশন নামে পরিচিত। আপনি যে প্রোজেক্ট তৈরী করবেন তারমধ্যে অনেকগুলি পৃথক পৃথক কম্পোজিশন থাকতে পারে। কম্পোজিশন তৈরীর সময় তার সময়, আউটপুট ভিডিওর মাপ, ফ্রেমরেট ইত্যাদি বলে দিতে হবে।
ছোট কাজের জন্য প্রোজেক্ট তৈরী না করে সরাসরি কম্পোজিশন তৈরী করতে পারেন।
ছোট কাজের জন্য প্রোজেক্ট তৈরী না করে সরাসরি কম্পোজিশন তৈরী করতে পারেন।
. যে ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি ব্যবহার করবেন (ফুটেজ) সেগুলি ইমপোর্ট করতে হবে।
. সেগুলিকে কম্পোজিশন উইন্ডোতে বসাতে হবে।
. টাইমলাইনে কোন সময়ে কি কাজ হবে সেটা বলে দিতে হবে।
. সবকিছু ঠিক থাকলে রেন্ডার করে ফাইনাল ভিডিও তৈরী করতে হবে।
কম্পোজিশন তৈরী
. আফটার ইফেক্টস চালু থাকলে মেনু থেকে File – New – New Project সিলেক্ট করে (কিবোর্ডে Ctrl + Alt + N) প্রোজেক্ট তৈরী করুন। অন্যান্য প্রোগ্রামের মত একই পদ্ধতিতে সেটা সেভ করুন।
. মেনু থেকে Composition – New Composition সিলেক্ট করে (কিবোর্ডে Ctrl + N) কম্পোজিশন তৈরীর কমান্ড দিন। কম্পোজিশন সেটিং উইন্ডোতে কম্পোজিশনের নাম, ভিডিওর মাপ (প্রিসেট ব্যবহার করতে পারেন অথবা সরাসরি মান বলে দিতে পারেন), ফ্রেম রেট এবং সময় ঠিক করে দিন।
ফুটেজ ইমপোর্ট করা
. কম্পোজিশনে ব্যবহারের জন্য ফুটেজ ইমপোর্ট করার জন্য মেনু থেকে File – Import – File (কিবোর্ডে Ctrl + I) কমান্ড দিন।
. ইমপোর্ট ডায়ালগ বক্স থেকে ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সিলেক্ট করুন। ফুটেজকে প্রোজেক্ট প্যানেলে পাওয়া যাবে।
কম্পোজিশনে ফুটেজ ব্যবহার
. কোন ফুটেজকে কম্পোজিশনে ব্যবহারের জন্য তাকে ড্রাগ করে কম্পোজিশন উইন্ডোতে আনুন।
. অথবা কিবোর্ডে Ctrl + / কমান্ড দিন। টাইমলাইনে আপনার পয়েন্টার যেখানে থাকবে সেই সময়ে ফুটেজটি কম্পোজিশনের ঠিক মাঝখানে পাবেন।
. প্রয়োজনে ফুটেজকে পছন্দমত যায়গায় সরানো, বড়ছোট করা ইত্যাদি কাজ করে নিন।
এনিমেট করা
উদাহরনে একটি ইমেজকে বড় থেকে ছোট করে নির্দিষ্ট যায়গায় সরানো এবং বাইরে থেকে টেক্সট ভেতরে আনার এনিমেশন উল্লেখ করা হচ্ছে। এই একই পদ্ধতিতে জটিল এনিমেশন করা যাবে।
. টাইমলাইনে পয়েন্টার শুরুতে থাকা অবস্থায় ফুটেজ (ভিডিও বা ইমেজ) টাইমলাইনে আনুন এবং তাকে পুরো স্ক্রীন জুড়ে রাখুন।
. পয়েন্টারকে টাইমলাইনে ২ সেকেন্ড অবস্থানে আনুন।
. টাইমলাইনে লেয়ারের নামের বামদিকে ত্রিকোনাকার অংশে ক্লিক করে Transform ওপেন করুন।
. Scale লেখার বামপাশের ষ্টপওয়াচ চিহ্নে ক্লিক করে সেটা অন করুন। এখানে একটি কি-ফ্রেম তৈরী হবে এবং এরপর যাকিছু পরিবর্তন করবেন সেটা এনিমেট করবে।
. পয়েন্টারকে ৩ সেকেন্ড অবস্থানে আনুন।
. ফুটেজকে ছোট করে স্ক্রিনের সুবিধেজনক যায়গায় আনুন। এখানে সাইজ-এর আরেকটি কিফ্রেম তৈরী হবে।
. প্রিভিউ বাটন অথবা স্পেসবার চাপ দিয়ে এনিমেশন দেখে নিন।
টেক্সট যোগ করা
টেক্সট ব্যবহারের অন্য কোন সফটঅয়্যারে (ফটোশপ বা ইলাষ্ট্রেটর) লিখে সেই ফাইলকে ইমপোর্ট করতে পারেন অথবা সরাসরি এখানেই টাইপ করে নিতে পারেন। সরাসরি টেক্সট ব্যবহারের সুবিধে হচ্ছে ইচ্ছে করলে অক্ষরগুলিকে এনিমেট করা যায়।
. টুলবারে টেক্সট বাটন ক্লিক করুন
. কম্পোজিশন উইন্ডোতে সুবিধেমত যায়গায় ক্লিক করুন এবং টাইপ করুন। লেখা শেষ করার জন্য টুলবারে পয়েন্টার বাটনে ক্লিক করুন।
. প্রয়োজন হলে টেক্সট এর জন্য ফন্ট, সাইজ, রং ইত্যাদি পরিবর্তন করে নিন।
টেক্সট এনিমেট করা
এই এনিমেশনে লেখাটি ৩ সেকেন্ড সময়ে ডানদিক থেকে ভেতরে এসে ৪ সেকেন্ডের সময় ছবির নিচে এসে থামবে।
. পয়েন্টারকে ৩ সেকেন্ড স্থানে আনুন।
. টেক্সটে ডানদিকে সরিয়ে স্ক্রিনের বাইরে নিয়ে যান। কিবোর্ডে সিফট চেপে ধরলে সরলপথে সরানো যাবে।
. টেক্সট লেয়ারের জন্য ট্রান্সফর্ম ওপেন করুন এবং এর পাশের টাইমার অন করুন।
. পয়েন্টারকে ৪ সেকেন্ড অবস্থানে আনুন।
. টেক্সটকে এনিমেশন শেষে যেখানে রাখতে চান সেখানে রাখুন।
. এনিমেশন প্রিভিউ করে দেখুন।
রেন্ডার করা
কম্পোজিশনের সবকিছু ঠিক থাকলে রেন্ডার করে ফাইনাল ভিডিও তৈরী করুন। এজন্য
. মেনু থেকে কমান্ড দিন Composition – Make Movie (কিবোর্ডে Ctrl + M)
. আউটপুট ভিডিও ফাইলের নাম দিন। কম্পোজিশন রেন্ডার কিউতে জমা হবে। এখানে ভিডিও ফাইলের জন্য ফরম্যাট, সাইজ, কোয়ালিটি ইত্যাদি ঠিক করার সুযোগ রয়েছে।
. রেন্ডার বাটনে ক্লিক করুন।
রেন্ডারিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। কম্পোজিশনের জটিলতা অনুযায়ী যথেস্ট সময় লাগতে পারে। একসময় কম্পোজিশন অনুযায়ী তৈরী ভিডিও পাবেন।
** আফটার ইফেক্টস সিএস-৪ অনুযায়ী লেখা। অন্য ভার্শনে সামান্য পরিবর্তন থাকতে পারে।
No comments:
Post a Comment