বিয়ের ভিডিও রেকর্ড করা সারা বিশ্বের একটি পরিচিত পেশা। প্রতিমাসে বহু সংখ্যক বিয়ে হচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকেই চান তাদের জীবনের সেই মুহুর্তগুলিকে ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে ধরে রাখতে। এজন্য রয়েছে ওয়েডিং এন্ড প্রোর্ট্রেট ফটোগ্রাফারস ইন্টারন্যাশনাল (WPPI) নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সারা বিশ্বের ফটোগ্রাফার এবং ভিডিওগ্রাফাররা সদস্য হয়ে নিজেদের মত বিনিময় করতে পারে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসে নানারকম পরামর্শ। নানারকম নিয়মকানুন। সেই নিয়মগুলি মেনে উপকৃত হন অন্যরাও।
এদের অনেকেই পেশাদার ভিডিওমেকার। তারা বিয়ের ভিডিওকে শুধুমাত্র ভিডিও রেকর্ড করা মনে করেন না, একধরনের ডকুমেন্টারী মনে করেন। এর মাধ্যমে তারা আকর্ষনীয় একটি ভিডিও তৈরী করে দেন।
যারা এই পেশায় তুলনামুলক নবিন তারা অনেকসময় সাধারন নিয়মগুলি না মেনে সমস্যায় পড়েন। কি কি বিষয়ে দৃষ্টি রাখলে সমস্যা এড়ানো যায় তা উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে।
. ক্লায়েন্টকে দেখানোর জন্য একটি ডেমো তৈরী করুন।
. একে ৪-৫ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। কেউই বেশি সময় নষ্ট করতে পছন্দ করে না।
. শুধুমাত্র নিজের করা কাজ থেকে সবচেয়ে ভাল অংশগুলি সেখানে রাখুন। ভিডিও এবং অডিও দুদিকেই দৃষ্টি রাখুন।
. ক্লায়েন্টের সাথে চুক্তি করার জন্য একটি ফরম তৈরী করুন। ক্লায়েন্টকে দিয়ে সেটা পুরন করিয়ে নিন। সেখানে থাকবে অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট তারিখ, সময়, কোন কোন দৃশ্য রেকর্ড করতে হবে, অনুষ্ঠানের বিশেষ ব্যক্তিদের নাম (এডিটিং এর সময় প্রয়োজন হবে) ইত্যাদি।
. ফাইনাল ভিডিও কত সময়ের হবে সেটা আগেই ঠিক করে নিন।
. কোন মাধ্যমে কত কপি দেয়া হবে সেটা আগেই ঠিক করে নিন।
. ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হলে সেটা ঠিক কি, সে সরবরাহ করবে এগুলি নির্দিষ্ট করে নিন। অনেক ক্ষেত্রে মিউজিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কপিরাইটের প্রশ্ন আসতে পারে।
. কাজ এবং পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব দেখান। আপনার কাজের মান যদি সৌখিন ভিডিওগ্রাফারের মত হয় আপনি পেশাদার ভিডিওর সমান অর্থ পাবেন না। আবার সৌখিন ভিডিওগ্রাফারের সমান অর্থ নিয়ে পেশাদার কাজ করতে পারেন না। কাজের মান যেমন নিচের দিকে নেবেন না তেমনি পেমেন্টও নিচের দিকে নেবেন না।
বিয়ের ভিডিও এমনই এক অনুষ্ঠান যেখানে আপনি ভিডিও করার সুযোগ পাবেন একবারই। ভুলে যাবেন না, প্রধানমন্ত্রীও ক্যামেরা রেডি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন, কিন্তু বিয়ের অনুস্ঠান ক্যামেরার জন্য থেমে থাকে না। কাজেই যা করতে পারেন,
. একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করুন। অন্তত দুটি ক্যামেরা ব্যবহার করলে দুটি ভিন্ন কোন থেকে ভিডিও পাওয়া যাবে। এতে ভিডিওর মানে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
. অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে কেউ যেন ক্যামেরাম্যানকে ধাক্কা না দেন সেটা নিশ্চিত করতে একজনকে রাখুন। দুঃখজনক সত্যি হচ্ছে বাংলাদেশের বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকেই এধরনের কাজে আনন্দ পায়। ফল কি হবে ভেবে দেখে না।
বিয়ের ভিডিও জন্য কিকি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে অনুষ্ঠান কোথায় হবে তার ওপর। সাধারনভাবে যা প্রয়োজন হতে পারে তা হচ্ছে;
. মধ্যম মানের ক্যামেরা। বর্তমানের ছোট আকারের ক্যামেরা বিয়ের ভিডিওর জন্য যথেষ্ট। অনেক ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট মনে করেন ক্যামেরার সাইজ বড় মানেই ভাল ভিডিও। তাকে বুঝানোর দায়িত্ব আপনার। এটুকু যদি না বোঝে তাহলে সেকাজে হাত না দেয়াই ভাল।
. ক্যামেরার জন্য ট্রাইপড। এতে টিভির মত স্থির ভিডিও পাওয়া যাবে।
. পর্যাপ্ত এবং পরিকল্পিত আলোর ব্যবস্থা করা। কোন পরিবেশে কোন ধরনের আলো প্রয়োজন হয়, নানাদিক থেকে কিভাবে সেগুলি ব্যবহার করতে হয় জেনে নিন।
বিয়ের ভিডিও (কিংবা এধরনের অন্যান্য অনুষ্ঠান) সাধারনভাবে সরল চোখে দেখা হয়। একে একটি ডকুমেন্টারী কিংবা নাটক হিসেবে কল্পনা করুন। আপনার কাজে যখন পরিকল্পনার ছাপ দেখা যাবে তখন তারসাথে মানানসই পারিশ্রমিক পাবেন। ক্রমে পরিচিতি এবং কাজ বাড়বে।
আর যদি মান ঠিক না থাকে, ক্লায়েন্ট আপনাকে বাধ্য করবে ক্রমেই কম পারিশ্রমিক দিকে। কাজ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে আপনিও ক্রমাগত নিচের দিকে নামতে থাকবেন।
No comments:
Post a Comment