ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং সম্পর্কে এতটাই প্রচার করা
হয়েছে কমবেশি সবাই জানেন এর সুফল কি। দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে, ধনী দেশে
পরিনত হবে, দেশের প্রধান আয়ের উতস হবে ইত্যাদি। একজন হিসেব করে বলেছেন বাংলাদেশ
বিশ্বে ২২ নম্বর ধনী দেশ হবে।
মুল বিষয়ে যাওয়ার আগে অন্তত একটা উদাহরন দেখা যাক। কয়েক
বছর আগে বলা হয়েছিল কলসেন্টারের মাধ্যমে বিপুল আয় করা যাবে, লক্ষ লক্ষ মানুষের
কর্মসংস্থান হবে। শতশত প্রতিস্ঠান হন্নে হয়ে লাইসেন্স নিয়েছে। এদের বেশিরভাগই চালু
হয়নি, যেগুলি চালু হয়েছিল তার অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে, যে সামান্য কয়টি চালু রয়েছে
সেগুলিও বন্ধ হওয়ার পথে।
অন্য উদাহরনগুলি উল্লেখ না করলেও চলে। অনেকেরই হয়ত মনে
আছে ডাটা এন্ট্রি, মেডিকেল ডাটা ট্রান্সক্রিপশন, মাল্টিমিডিয়া, ওয়াপ কনভার্শন ইত্যাদির
কথা। সেগুলি মনে থাকলে মনে করা হয়ত অস্বাভাবিক না, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংও
একই পরিনতির দিকে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আলোচনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। যারা ঘরে বসে সহজে
আয়ের কথা শুনে চেষ্টা করেছিলেন তাদের কেউ প্রতারনার শিকার হয়েছেন, কেউ আয় সহজ না
দেখে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। যারা একবার শুরু করলে হাল ছাড়েন না তারা চেষ্টা করে
যাচ্ছেন।
সরকারী-বেসরকারী এবং অন্যান্য মহল থেকে ফ্রিল্যান্সিং
সম্পর্কে যত সুন্দর কথাই বলা হোক না কেন, কাজের বিষয়ে সবার ভুমিকা এক। তারা কথাই
বলবেন, কাজে সহায়তা দুরের কথা, যতভাবে সম্ভব বাধা তৈরী করে রাখবেন।
যে সমস্যাগুলির কথা বহু বছর ধরে প্রচলিত সেগুলি আরেকবার স্বরন
করা যেতে পারে;
.
ইন্টারনেট সহজ্যলভ্য করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে পুরো দেশ
ইন্টারনেটের আওতায়, মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের অর্ধেকই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
বাস্তবতা সেকথা বলে না। মেগাবাইটপ্রতি ১ টাকার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, নেটওয়ার্ক পাওয়া
যায় না এগুলি খোদ ঢাকা শহরের সমস্যা। ঢাকার বাইরের কথা না তোলাই ভাল। আনলিমিটেড শব্দটি
বাংলাদেশে ভিন্ন অর্থ বহন করে। ইন্টারনেট সহজলভ্য না করে ফ্রিল্যান্সিং এ ভাল করার
সুযোগ নেই।
.
অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা সহজ করা হচ্ছে না।
পেপল-ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার চালূ না করে এবং ব্যাংকিং সহজ না করে অর্থ আয়ের চিন্তা
না করাই ভাল। কাজ করবেন অথচ টাকা পাবেন না এই নিয়মে কেউ কাজ করে না। অনলাইনে
কেনাকাটার পদ্ধতি চালু না হলে গুগল এডসেন্স, এফিলিয়েটেড মার্কেটিং ইত্যাদি থেকে
আয়ের পদ্ধতিগুলি কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।
.
প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নিয়ে আদৌ কোন কথা বলা হয় না। ধরে
নেয়া হয় কেউ নিজের চেষ্টায় অথবা ট্রেনিং সেন্টার নামের ব্যবসা প্রতিস্ঠানে শিখে সারা
বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করবেন। এভাবে গ্রাফিক ডিজাইন কিংবা এনিমেশন শিখে সেই
বিষয়ে গ্রাজুয়েট কারো সাথে প্রতিযোগিতায় টেকার সুযোগ পাওয়া কম ব্যক্তির পক্ষেই
সম্ভব।
বলা হয় বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বছরে ২৫ লক্ষ।
কেউ বলেন সত্যিকারের হিসেব আরো বেশি। প্রতিবছর কর্মসংস্থানের উপযোগি হচ্ছে এদের
সংখ্যা এরথেকে খুব কম হওয়ার কথা না। বছরে ১৫ কিংবা ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের
সুযোগ সৃষ্টি করার পদ্ধতি কি সেকথা কেউ বলছেন না। এতদিন কর্মসংস্থানের কথা উঠলেই
অন্যদেশে শ্রমিক পাঠানোর কথা বলা হত। বর্তমানে সেই বাজার প্রায় বন্ধ। দেশে শিক্ষিত
এবং অশিক্ষিত যে বেকার জমা হচ্ছে তাদের জন্য কোন পথনির্দেশ কি কেউ দেবেন?
সাধারনভাবে সমস্যায় পড়লে মানুষ মনে করে কোন একভাবে, কোন
একসময় সমাধান হবে। এই সমস্যার সমাধান অন্তত আমার জানা নেই। একমাত্র ফ্রিল্যান্সিং
ছাড়া।
ফ্রিল্যান্সিং সমাধান দিতে পারে কয়েকটি কারনে।
.
পুরো বিশ্বেই কাজের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। একসময় যেসব
কাজের জন্য বেতনভোগি লোক নিয়োগ দেয়া গত এখন সেগুলি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করা
হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া আরো বৃদ্ধি পাবে।
.
এজন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই। কলকারখানা তৈরী
করতে হবে না। প্রযুক্তি কিংবা কাচামাল প্রয়োজন হবে না। এমনকি কারো দায়িত্বও নিতে
হবে না। শুধুমাত্র পথ দেখানো এবং বাধাগুলি দুর করাই যথেষ্ট।
আগে তিনটি সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে। শুধুমাত্র এই তিনটি
বিষয়ে দৃষ্টি দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সেটা না করা হলে একদিকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে জনগনকে
বিভ্রান্ত করা হবে অন্যদিকে প্রতারকদের প্রতারনার পথ তৈরী হবে। সেটাই হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment