মাল্টিমিডিয়া
তৈরীর কথা বললে অনেকেই ধরে নেন, ওকাজ আমাকে দিয়ে হবে না।
মাল্টিমিডিয়া
তৈরীর জন্য ভিজুয়াল সি কিবা ভিজুয়াল বেসিককে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে ধরে নিলে
কথাটা ঠিক। এগুলি ব্যবহার করে সফল মাল্টিমিডিয়া তৈরীর জন্য যাকিছু প্রয়োজন তা
সকলের নেই। উদাহরন হিসেবে বিশ্বখ্যাত কোন মাল্টিমিডিয়ার কথা যখন বলা হয় তখন সাথে
এই নামগুলি চলে আসে।
মাল্টিমিডিয়ার
ক্ষেত্রে সুখবর হচ্ছে, এদের বাইরে মাল্টিমিডিয়া তৈরীর সহজ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে যা
শেখা এবং ব্যবহার করে বানিজ্যিক মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা সম্ভব অধিকাংশের পক্ষেই।
এই
লেখা মুলত যারা সরাসরি প্রোগ্রামিং এর সাথে যুক্ত নন অথচ সৃষ্টিশীল কাজ করতে
আগ্রহি তাদের জন্য। নিজের চেষ্টায় শেখা সম্ভব এমন কিছু সফটঅয়্যারের পরিচিতি তুলে
ধরা হচ্ছে এখানে।
এডবি
ডিরেক্টর
গ্রাফিক
ডিজাইনের ক্ষেত্রে এডবি ফটোশপকে বলা হয় ইন্ডাষ্ট্রি ষ্ট্যান্ডার্ড। মাল্টিমিডিয়া
অথরিং এর ক্ষেত্রে ডিরেক্টরকে একই মর্যাদা দেয়া হয়। ম্যাক্রোমিডিয়া নামে কোম্পানী
এটি তৈরী করলেও বর্তমানে এর মালিকানা এডবির। ম্যাক্রোমিডিয়ার কাছে কেনা ফ্লাশ,
ড্রিমওয়েভার ইত্যাদিকে ক্রিয়েটিভ স্যুট (সিএস) এর সাথে যোগ করলেও ডিরেক্টর বিক্রি
করা হয় পৃথকভাবে।
ডিরেক্টরে
যে কাজ করা হয় তার নাম মুভি, যেখানে কাজ করা হয় তার নাম ষ্টেজ,
লেখা-ছবি-শব্দ-ভিডিও ইত্যাদি যাকিছু ব্যবহার করা হয় তাদের নাম কাষ্ট। বাস্তবে
সিনেমা তৈরীর মতই তাদেরকে ষ্টেজে আনবেন, কে কখন কি করবে বলে ইন্টারএকটিভিটি যোগ
করবেন। আপনার মাল্টিমিডিয়া তৈরী।
ডিস্কভিত্তিক
মাল্টিমিডিয়া, প্রেজেন্টেশন, গেম ইত্যাদির জন্য ডিরেক্টর বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয়।
ডি-কে মাল্টিমিডিয়ার মত কোম্পানী তাদের অধিকাংশ মাল্টিমিডিয়া তৈরীতে এটা ব্যবহার
করে। বাজারে পাওয়া গেমগুলির মধ্যে ডিরেক্টরে তৈরী গেমের দেখা পাবেন। বাংলাদেশে
তৈরী মাল্টিমিডিয়াগুলির অধিকাংশই ডিরেক্টরে তৈরী।
ডিরেক্টরের
নিজস্ব স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ রয়েছে যা সি এর মতই শক্তিশালি। মাল্টিমিডিয়ার ভেতর
থেকে ফন্ট ইনষ্টল করা, ডিসপ্লে প্রোপার্টি পরিবর্তন থেকে শুরু করে কপি ডিস্ক কপি
প্রোটেকশনের মত সিষ্টেম লেভেলের কাজ করা যায়।
সব
ধরনের মিডিয়া সরাসরি ইমপোর্ট করে ব্যবহার করা যায় ডিরেক্টরে। এরপরও অতিরিক্ত
সুবিধের জন্য এক্সট্রা (xTra) নামে প্লাগইন ব্যবহারের
সুযোগ রয়েছে। ট্রানজিশন, ইফেক্ট, সরাসরি সাপোর্ট করে না এমন মিডিয়া ব্যবহার,
ডাটাবেজ, পিডিএফ ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধে দেয়ার জন্য এক্সট্রা রয়েছে।
এডবি
ফ্লাশ
ফ্লাশ
সফটঅয়্যারের পরিচিতি বর্ননা করা প্রয়োজন হয় না। কম্পিউটার ব্যবহারকারী প্রত্যেকেই
কমবেশি ফ্লাশ এনিমেশন, ফ্লাশ ভিডিও, ফ্লাশ গেম ইত্যাদি ব্যবহার করেন। কারো কাছে
ফ্লাশ এনিমেশন সফটঅয়্যার, কারো কাছে গেম তৈরীর সফটঅয়্যার, কারো কাছে ওয়েবসাইট
তৈরীর সফটঅয়্যার কারো কাছে মাল্টিমিডিয়া তৈরীর সফটঅয়্যার।
ফ্লাশের
উতপত্তি ডিরেক্টর থেকে। একসময় ডিরেক্টর থেকে শুধুমাত্র ভেক্টর অংশটুকু আলাদা করে
ফ্লাশ নামে নতুন সফটঅয়্যার তৈরী করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল ছোট এবং দ্রুত কাজ করে এমন মাল্টিমিডিয়া
কন্টেন্ট তৈরী। জনপ্রিয়তায় বর্তমানে সেটা নিজস্ব ষ্টান্ডার্ড তৈরী করেছে।
ইন্টারফেস
এবং কাজের ধরনের দিক থেকে ফ্লাশ এর সাথে ডিরেক্টরের মিল অনেকটাই। একটি ব্যবহার
করলে সহজে আরেকটি ব্যবহার করা যায়। ফ্লাশের সুবিধে হচ্ছে ভেক্টর ড্রইং ব্যবহারের
কারনে ফাইল সাইজ খুব ছোট রাখা যায়, অন্যদিকে বড়-ছোট করলেও বিটম্যাপের মত মান নষ্ট
হয় না।
ফ্লাশের
স্ক্রিপ্টিং ব্যবস্থার নাম একশনস্ক্রিপ্ট। আর ব্যবহারের কথা আগেই উল্লেখ করা
হয়েছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক হোক আর ডিস্কভিত্তিক হোক, ইন্টারএকটিভ যেকোন কিছুই তৈরী
করা সম্ভব ফ্লাশ ব্যবহার করে।
এডবি
ফ্লাশ এডবি ক্রিয়েটিভ স্যুট এর সাথে অথবা আলাদাভাবে ইনষ্টল করে ব্যবহার করা যায়।
মাইক্রোসফট
পাওয়ারপয়েন্ট
বিজনেস
প্রেজেন্টেশন সফটঅয়্যার হিসেবে পাওয়ারপয়েন্ট সবচেয়ে জনপ্রিয়। মাইক্রোসফট অফিসের
সাথে থাকে বলে প্রায় সমস্ত কম্পিউটারেই এর দেখা পাওয়া যাবে, এর ব্যবহার খুব সহজ,
সেইসাথে প্রেজেন্টেশন তৈরী সবকিছুই এতে রয়েছে।
পাওয়ারপয়েন্ট
ব্যবহার করে বানিজ্যিক মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা হয়েছে এমন উদাহরন হয়ত খুববেশি পাওয়া
যাবে না, কিন্তু বিজনেস প্রেজেন্টেশন থেকে শুরু করে শিক্ষাউপকরন তৈরীতে এর ব্যবহার
ব্যাপক। অনেক শিক্ষাপ্রতিস্ঠানে ক্লাশ নেয়ার সময় পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন
ব্যবহার করা হয়।
পাওয়ারপয়েন্টের
সাথে ভিজুয়াল বেসিক কোড ব্যবহার করা যায়। কাজের কাজের ক্ষেত্রে আসলে কোন
সীমাবদ্ধতা নেই।
এডবি
এক্রোব্যাট প্রো
পিডিএফ
ডকুমেন্ট বিষয়টি এমনভাবে পরিচিত যে একে মাল্টিমিডিয়া বললে অনেকে অবাক হবেন। পিডিএফ
এর একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আগে উল্লেখ করা অন্যান্য সফটঅয়্যারের মত নিজে থেকে চলার
উপযোগি সফটঅয়্যার পাওয়া যায় না। ব্যবহার জন্য এক্রোব্যাট রিডার বা অন্য সফটঅয়্যার
প্রয়োজন হয়। এই বিষয় বাদ দিলে তথ্যভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া তৈরীর অন্য সব সুবিধেই
রয়েছে।
টেক্সট,
ইমেজ, ভিডিও, এনিমেশন, শব্দ ইত্যাদি যায়গামত বসিয়ে তাকে পিডিএফ ফাইল বানাতে পারেন।
বিভিন্ন যায়গায় লিংক তৈরী করে করে ইন্টারএকটিভিটি যোগ করতে পারেন।
ই-বুক
তৈরীর জন্য এক্রোব্যাট প্রো সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয়। এর নিজস্ব পাশওয়ার্ড
প্রোটেকশন ব্যবস্থা থাকা অতিরিক্ত সুবিধে।
ওয়েব
ডিজাইন সফটঅয়্যার
ওয়েবসাইট
তৈরীর জন্য সফটঅয়্যারের সংখ্যা এতই বেশি যে নির্দিস্ট করে নাম উল্লেখ করা কঠিন।
একেকজন একেকটা পছন্দ করেন। ভিজুয়াল ওয়েব বিল্ডার থেকে শুরু করে কোড ব্যবহার করে ওয়েবসাইট
তৈরী করা যায়।
মাল্টিমিডিয়ার
কথায় ওয়েব ডিজাইন বিষয়টি এলো কেন ? আপনি তো
মাল্টিমিডিয়া তৈরী করতে চান ?
মাল্টিমিডিয়াকে
একটি ওয়েবসাইট হিসেবে কল্পনা করুন। আসলে বিষয় তো একই, একটি ডিস্কে রাখার জন্য
আরেকটি ওয়েব সার্ভারে। যে কোন ভিজুয়াল টুল ব্যবহার করেই ওয়েবভিত্তিক আকর্ষনীয়
মাল্টিমিডিয়া তৈরী করতে পারেন।
এগুলি
জনপ্রিয় কয়েকটি সফটঅয়্যার। এর বাইরে একদিকে আছে ভিজুয়াল বেসিক সহ অন্যান্য
সফটঅয়্যার অন্যদিকে মাল্টিমিডিয়া বিল্ডার, স্কালা মাল্টিমিডিয়া, ইলুমিনেটাস
ইত্যাদি তুলনামুলক কম প্রচলিত মাল্টিমিডিয়া অথরিং সফটঅয়্যার। এদের অনেকগুলির
ব্যবহার অত্যন্ত সহজ। যেকোনটি ব্যবহার করেই মাল্টিমিডিয়া তৈরী শুরু করতে পারেন।
মাল্টিমিডিয়া
হচ্ছে নানা ধরনের মিডিয়া। অথরিং সফটঅয়্যারে মিডিয়াগুলিকে একসাথে করা হয়। তৈরীর
জন্য বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া তৈরীতে কি শেখা প্রয়োজন, কিভাবে শিখতে পারেন সেবিষয়ে
লেখা আগামী পর্বে।
No comments:
Post a Comment