মাল্টিমিডিয়ায়
টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও, এনিমেশন, শব্দ ইত্যাদি থাকবে ধরে নেয়া হয়। বিশেষ
মাল্টিমিডিয়ায় এদের সবগুলি নাও থাকতে
পারে, তাহলেও মুল লক্ষ সবগুলি রাখা।
কাজেই
মাল্টিমিডিয়া তৈরীর জন্য কাজের ধাপগুলি হচ্ছে যে বিষয়ের মাল্টিমিডিয়া সেই বিষয়ের
তথ্য সংগ্রহ করা এবং তৈরী করা, মারসাথে মানানসই ইমেজ, ভিডিও, এনিমেশন, সাউন্ড
ইত্যাদি তৈরী করা বা সংগ্রহ করা।
কোন
ধরনের মিডিয়ার জন্য কি প্রয়োজন উল্লেখ করা হচ্ছে এই পোষ্টে।
টেক্সট
ইংরেজিতে
মাল্টিমিডিয়া তৈরীর তুলনায় বাংলা মাল্টিমিডিয়া তৈরীর বিষয়টি বেশ জটিল। বাংলা নিয়ে
যত গর্বই করা হোক, এখনও সার্বজনিন কোন
বাংলার প্রচলন নেই। কোন ফন্ট ব্যবহার করেই আপনি নিশ্চিত হতে পারেন না সেই
ফন্ট ব্যবহারকারীর কাছে থাকবে। ট্রুটাইপ ফন্ট ব্যবহার করলে ডাটাবেজে
সার্চ-ইনডেক্স-সর্ট ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ নেই। অনেক সফটঅয়্যারেই ওপেনটাইপ ফন্ট
ব্যবহার করা যায় না।
এই
সমস্ত সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলা মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা হয়। অনেকে ডিরেক্টরে
সরাসরি টেক্সট ব্যবহার না করে ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করেন। এটা মুলত বাধ্য হয়ে করতে
হয়।
টেক্সট
কিভাবে ব্যবহার করা হবে বিষয়টি নির্ভর করে মাল্টিমিডিয়া তৈরীর জন্য কোন সফটঅয়্যার
ব্যবহার করা হবে তার ওপর। যদি বিশেষ কোন ফন্ট ব্যবহার করতে হয় তাহলে মাল্টিমিডিয়ার
সাথে সেই ফন্ট দিয়ে দেয়া জরুরী। সেইসাথে ইনষ্টল করা না থাকলে নিজে থেকে সেই ফন্ট
ইনষ্টল করার ব্যবস্থা রাখলে ভাল হয়।
ফন্ট
নিয়ে অপ্রয়োজনীয় এই ঝামেলাযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রয়োজন তথ্যকে নির্ভুলভাবে
সাজানো। মাল্টিমিডিয়ায় অন্য যাই থাকুক না কেন, মুল বিষয় টেক্সট। একে সহজ এবং
আকর্শনীয় করার জন্যই ভিডিও-শব্দ-এনিমেশন ইত্যাদি। কোন তথ্য ব্যবহারের আগে তথ্য
নির্ভুল কিনা যাচাই করে নেয়া অত্যন্ত জরুরী।
ইমেজ
ইমেজ
এডিটিং এর জন্য ফটোশপের সাথে অন্যকিছুর তুলনা হয় না। মাল্টিমিডিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড
ইমেজ, বাটন থেকে শুরু করে কোন বিষয়ের সাথে মানানসই ছবি সবই তৈরী করে নিতে হয়। মাল্টিমিডিয়া
তৈরীর টিমে অন্তত একজন ফটোশপ জানা কারো থাকা প্রয়োজন।
কোন
সুত্র থেকে ছবি সংগ্রহ করার সময় মনে রাখা প্রয়োজন, ইন্টারনেটে পাওয়া অধিকাংশ ছবিই
কপিরাইট করা। তাদের অনুমতি ছাড়া সেগুলি বানিজ্যিক কারনে ব্যবহার করা যায় না। নিজে
ছবি উঠাতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়।
ভিডিও
কোনকিছু
ভিডিওতে দেখালে লিখিত বর্ননার চেয়ে সহজে বোঝা যায়। এজন্যই মাল্টিমিডিয়ায় ভিডিও
বেশি জনপ্রিয়। কম্পিউটারের টিউটোরিয়ালে সাধারনত স্ক্রিন ক্যাপচার করে ভিডিও তৈরী
করা হয়। এজন্য স্নাগইট অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সফটঅয়্যার। স্ক্রিন ক্যাপচারের সময়ই
ধারাবর্ননা রেকর্ড করা যায় এবং সরাসরি ব্যবহার করা যায়।
অন্যান্য
ভিডিও নিজে রেকর্ড করে নেয়া যেতে পারে। বর্তমানে ডিজিটাল ক্যামেরার কল্যানে কম
খরচে খুব সহজেই যে কেউ ভিডিও করতে পারেন।
ভিডিও
এডিটিং এর জন্য প্রিমিয়ার বা অন্য পেশাদারী সফটঅয়্যার ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। বরং
কোরেল ভিডিও ষ্টুডিও এর মত তুলনামুলক সহজ সফটঅয়্যার দিয়ে কাজ চালানো যায়।
কোন
ফরম্যাটের ভিডিও ব্যবহার করা হবে সেটা আগেই ঠিক করে নেয়া ভাল। মাল্টিমিডিয়ার জন্য
কুইকটাইম একটি জনপ্রিয় ফরম্যাট। বর্তমানে অনেকেই উইন্ডোজ মিডিয়া ভিডিও কিংবা ফ্লাশ
ভিডিও ব্যবহার করেন। এমপেগ সুবিধেজনক ফরম্যাট হলেও অনেক সফটঅয়্যারে সরাসরি ব্যবহার
করা যায় না। এছাড়া নানা ধরনের কোডেক ব্যবহার করে ভিডিওর মান ঠিক রেখে ছোট আকারের
ভিডিও ফাইল তৈরী করা যায়।
যে
ফরম্যাটই হোক না কেন, যে কোডেক ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা সার্বজনীন হওয়া ভাল। নয়ত
ভিডিওর সাথে কোডেক দেয়া প্রয়োজন।
সাউন্ড
ধারাবর্ননার
জন্য কথা রেকর্ড করতে হয়। যার কথা রেকর্ড করা হবে (ভয়েস ট্যালেন্ট) তার উচ্চারন
স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এমন ঘরে শব্দ রেকর্ড করুন যেখানে বাইরের শব্দ সমস্যা তৈরী
করবে না।
সাধারনত
সরাসরি কম্পিউটারে সাউন্ড কার্ড ব্যবহার করে রেকর্ড করেই ভাল মানের শব্দ পাওয়া
যায়। মাইক্রোফোন হিসেবে কিছুটা ভাল মানের হেডফোন ব্যবহার করে কাজ চলতে পারে।
রেকর্ড
এবং এডিট কাজের জন্য ওপেনসোর্স অডাসিটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া সাউন্ডফোর্জ
বা এডবি সাউন্ডবুথ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাল্টিট্রাক এডিটিং এর কাজ সাউন্ডবুথে
সরাসরি করা যায়। অনেকে সাউন্ডফোর্জের সাথে এসিড ব্যবহার করেন। লুপ তৈরীর জন্য
এগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া পেশাদারী কাজে ব্যবহৃত সোনার, রিজন, নুয়েনডো
ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কম
খরচে তৈরী মাল্টিমিডিয়ার জন্য সাধারনত নিজস্ব মিউজিক কম্পোজ করা হয় না। অন্যের
মিউজিক ব্যবহারের সময় কপিরাইট বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন।
এনিমেশন
ভিডিওতে
দেখানো যায় না এমন কিছু দেখানোর জন্য এনিমেশন প্রয়োজন হয়। মাল্টিমিডিয়ায় এনিমেশনের
ব্যবহার বিচিত্র হতে পারে। শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়ায় গ্রাফ থেকে শুরু করে
ইন্টারএকটিভ এনিমেশন ব্যবহার করে খুব সহজে জটিল বিষয় শেখানো যায়।
এনিমেশন
কাজটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে প্রথমদিকে এনিমেশন বাদ দিয়ে
মাল্টিমিডিয়ার কথা ভাবতে পারেন।
টুডি
এনিমেশনের জন্য বর্তমানে ফ্লাশের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। থ্রিডি এনিমেশনের জন্য
জনপ্রিয় থ্রিডি ষ্টুডিও ম্যাক্স।
আবারও
মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, যিনি মাল্টিমিডিয়া তৈরী করবেন শুধুমাত্র মাল্টিমিডিয়া তৈরীর
জন্য ম্যাক্স শেখার চেষ্টা না করাই ভাল। বরং নিয়মিত কাজ করেন এমন কারো সাহায্য
নিন।
সাধারনত
মাল্টিমিডিয়া তৈরীর জন্য একটি দল প্রয়োজন হয় যেখানে একেকজন একেক বিষয়ে দক্ষ হবেন।
তাদের সম্মিলিত কাজের ফল মাল্টিমিডিয়া। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে এখানে একজনকেই
সব কাজ করতে হয়।
যদি
এককভাবে কাজ করতে হয় তাহলে শুরুতেই হিসেব করে নেয়া ভাল একা কতটুকু করা
বাস্তবসম্মত। কোন ব্যক্তি সব বিষয়ে এক্সপার্ট হন না। সববিষয়ে কিছু দক্ষতা অর্জন
করলে কোন বিষয়েই এক্সপার্ট হওয়া যায় না।
বাস্তবসম্মত
পরিকল্পনার জন্য কার্যকর পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন। কাগজ-কলম নিন। সেখানে কাজের
উল্লেখ করুন। সেইসাথে কোন কাজ কোন সফটঅয়্যারে করা যেতে পারে সেগুলির তালিকা তৈরী
করুন। তাদের কোনটি কতটুকু ব্যবহার সম্ভব যাচাই করুন। প্রয়োজনে এক সফটঅয়্যারের বদলে
অন্য সফটঅয়্যার বাছাই করুন। এরপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
সেরা
সফটঅয়্যার ব্যবহার করলে সেরা মাল্টিমিডিয়া তৈরী হবে এমন কথা নেই। সহজভাবে মুল
বক্তব্য প্রকাশ করাই মুখ্য বিষয়।
কি
কাজ করবেন, সেজন্য কি শিখতে হবে এসব জানার পর প্রশ্ন আসে কিভাবে শিখবেন, কিংবা
কোথায় শিখবেন। এবিষয়ে লেখা পাবেন আগাম পর্বে।
No comments:
Post a Comment