Tuesday, March 29, 2011

মাইক্রোসফট অফিস টিউটোরিয়াল : মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সফটঅয়্যার মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। এমন এক কাজের জন্য যা প্রত্যেক কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে কমবেশি করতে হয়। ব্যক্তিগত কিছু লিখুন, অফিসের রিপোর্ট লিখুন কিংবা ছাপাখানায় ছাপা হবে এমন ডকুমেন্ট তৈরী করুন, প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। উল্লেখ করা যেতে পারে ছাপা কাজে ব্যবহৃত পেজমেকিং সফটঅয়্যারে ব্যবহারের জন্য টাইপিং এর কাজ করে নেয়া হয় এখানেই।
কারন, এটা ব্যবহার করা খুবই সহজ। টাইপিং এর জন্য যাকিছু প্রয়োজন সবই রয়েছে। কাজগুলি শিখে নেয়া যাক।
প্রথমে কিছু বিষয় স্পষ্ট করে নেয়া ভাল। বহু বছর ধরে জনপ্রিয় এই সফটঅয়্যার শুধুমাত্র ওয়ার্ড প্রসেসিং কাজে সীমাবদ্ধ নেই। ছবিসহ আকর্ষনীয় লিফলেট তৈরী, ডায়াগ্রাম তৈরী থেকে শুরু করে ওয়েব পেজ তৈরী পর্যন্ত সবকিছুই করা যায় এতে। তারপরও, মুল্য লক্ষ্য ওয়ার্ড প্রসেসিং। এই টিউটোরিয়ালে ওয়ার্ডপ্রসেসিং এর জন্য অত্যাবশ্যক বিষয়গুলি উল্লেখ করা হচ্ছে। অবশ্যই অন্য বিষয়গুলি অন্য টিউটোরিয়াল থেকে শিখতে পারেন। একথা আগেই বলার উদ্দেশ্য, ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটঅয়্যার ওয়ার্ড প্রসেসিং কাজের জন্যই সবচেয়ে বেশি উপযোগি। পেজমেকিং এর জন্য এডবি ইন-ডিজাইন কিংবা কোয়ার্ক এক্সপ্রেস এর যে সুবিধে তা এখানে পাবেন না। এখানে সেকাজ করতে গেলে একসময় জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
ওয়ার্ড প্রসেসিং এর মুল কাজ লেখা। আপনি টাইপ করবেন, বানান ঠিক আছে কিনা যাচাই করবেন, লেখাকে সুন্দরভাবে সাজাবেন, পরে ব্যবহারের জন্য সেভ করে রাখবেন, প্রিন্ট করবেন ইত্যাদি। একাজগুলি করার পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে এখানে।
এই টিউটোরিয়ালে ওয়ার্ড ২০০৩ ভার্শন ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য ভার্শনে স্ক্রীন কিছুটা অন্যরকম দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ২০০৭ এবং পরবর্তী ভার্শনে। ২০০৭ এ রিবন মেনু বাদ দেয়া হয়েছিল। এর ব্যবহার এতটাই সহজ এবং এটা এতটাই জনপ্রিয় যে ২০১০ ভার্শনে তাকে আবার ফেরত আনা হয়েছে। যারা নিয়মিত কাজ করেন তারা পছন্দ করেন ওয়ার্ড এক্সপি অথবা ২০০৩ ভার্শন।

প্রোগ্রাম শুরু করুন। ওয়ার্ড নিজে থেকেই একটি নতুন ডকুমেন্ট তৈরী করবে। অর্থাত প্রোগ্রাম চালু করেই আপনি টাইপ শুরু করতে পারেন। কিছু টাইপ করুন। শেখার জন্য সামনে কোন লেখা রেখে সেটা দেখে টাইপ করাই উত্তম।
প্রথমে সেভ করার বিষয়টি দেখে নেয়া যাক।
কয়েক পদ্ধতিতে সেভ করা যায়। টুলবারে Save বাটনে (ফ্লপি ডিস্কের ছবি) ক্লিক করে, মেনু থেকে File – Save সিলেক্ট করে অথবা কিবোর্ড Ctrl – S শর্টকাট চাপ দিয়ে। যাই ব্যবহার করুন না কেন, আপনি সেভ করার যায়গা এবং ফাইল নাম দেয়া ডায়ালগ বক্স পাবেন।
আপনার ডকুমেন্টকে সাজানো অবস্থায় রাখার জন্য সবসময়ই নিজের পছন্দমত একটি ফোল্ডার ব্যবহার করুন। প্রথমে সেই ফোল্ডার সিলেক্ট করে নাম টাইপ করে দিন। কাজ এটুকুই।

সেভ করা ফাইল ওপেন করা
সেভ করা ফাইল ওপেন করার জন্য প্রথমে ফাইলটি বন্ধ করুন। এজন্য মেনু থেকে কমান্ড দিন, অথবা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বন্ধ করে নতুনভাবে চালু করুন।
টুলবারে Open বাটনে ক্লিক করুন, অথবা মেনুবার থেকে File – Open সিলেক্ট করুন, অথবা কিবোর্ডে Ctrl – O চাপ দিন
ওপেন ডায়ালগ বক্স থেকে নির্দিষ্ট ফোল্ডার এবং ফাইল সিলেক্ট করুন।

অন্য ফরম্যাটে সেভ করার সুবিধে
আপনি নিশ্চয়ই জানেন কোন সফটঅয়্যারে আগের ভাশর্নে কাজ করলে তাকে পরবর্তী ভার্শনে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু নতুন ভার্শনে কাজ করলে তাকে পুরনো ভার্শনে ব্যবহার করা যায় না। ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বপুর্ন। আপনি হয়ত নতুন ভার্শনে কাজ করেছেন, অন্য কম্পিউটারে তারচেয়ে পুরনো ভার্শনে সেটা ওপেন করা যাবে না। সেভ করার সময় বিশেষ ফরম্যাট ব্যবহার করে এই সমস্যা এড়ানো যায়।
প্রথমবার সেভ করার সময় এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন, অথবা আগে সেভ করা থাকলে কমান্ড ব্যবহার করুন
সেভ ডায়ালগ বক্সের Save as type অংশে Rich Text Format সিলেক্ট করুন।
যদি বাংলায় টাইপ করেন তাহলে সবসময়ই রিচ টেক্সট ফরম্যাটে সেভ করুন। এরফলে অন্য সফটঅয়্যারে নেয়ার পরও যুক্তাক্ষরগুলি ঠিক থাকবে।
কখনো কখনো আগের ডকুমেন্ট ঠিক রেখে পরিবর্তনসহ ডকুমেন্টকে অন্যনামে সেভ করা প্রয়োজন হতে পারে। এজন্যও সেভ এ্যাজ কমান্ড ব্যবহার করুন এবং নতুন নাম দিন।

টাইপের নিয়ম
টাইপের জন্য সাধারন নিয়মগুলি হচ্ছে,
একটি লাইন শেষ করার জন্য Enter চাপ দিন। এর নাম লাইন ব্রেক। কতটুকু যায়গাকে একটি লাইন বলা হবে তা নিয়ে শুরুতে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। মুলত একটি প্যারাগ্রাফকে একটি লাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়, একটি বাক্য না। কাজেই একটি লাইন আসলে একাধিক লাইন বুঝানো হতে পারে। এরফলে কার্সর পরবর্তী লাইনের শুরুতে চলে যাবে।
ট্যাবষ্টপ ব্যবহারের জন্য ট্যাব কি ব্যবহার করুন। সাধারনভাবে .৫ ইঞ্চি পরপর ট্যাবষ্টপ থাকে, একে পরিবর্তন করা যায়। সেটা শিখবেন অন্য টিউটোরিয়ালে।
দুটি শব্দকে পৃথক করার জন্য স্পেসবারে একবার চাপ দিন (একাধিকবার স্পেবার চাপবেন না)।
ভুল সংশোধনের জন্য কার্সরকে ভুল অক্ষরের পাশে আনুন। Delete চাপলে কার্সরের ডানদিকে অক্ষর মুছবে, Backspace চাপলে বামদিকের অক্ষর। একাধিক যায়গা (শব্দ বা লাইন) মোছার জন্য সেই অংশটুকু সিলেক্ট করে ডিলিট চাপুন।

সিলেক্ট করা
বিভিন্ন কাজের জন্য একটি শব্দ, একটি লাইন, একটি প্যারাগ্রাফ কিংবা পুরো ডকুমেন্ট সিলেক্ট করা প্রয়োজন হতে পারে। সিলেক্ট করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কমান্ড ব্যবহার করলে শুধুমাত্র সেই অংশটুকু কাজ করবে।
একটি শব্দ সিলেক্ট করার জন্য সেই শব্দের ওপর ডাবল ক্লিক করুন।
একটি প্যারাগ্রাফ সিলেক্ট করার জন্য প্যারাগ্রাফের ভেতরে যে কোন যায়গায় তিনবার ক্লিক করুন।
একটি লাইন সিলেক্ট করার জন্য মাউস পয়েন্টারকে লাইনের বামদিকে মার্জিনে এনে সাধারন মাউস পয়েন্টার দেখা গেলে একবার ক্লিক করুন।
পুরো ডকুমেন্ট সিলেক্ট করার জন্য মেনু থেকে Edit – Select All সিলেক্ট করুন অথবা কিবোর্ডে Ctrl – A চাপ দিন।

ফন্ট পরিবর্তন
লেখার আগে অথবা লেখার পরে ফন্ট টাইপফেস (নির্দিষ্ট ফন্ট) অথবা ফন্ট সাইজ (লেখা ছোটবড় করা) পরিবর্তন করা যায়।
টাইপ করা লেখার ফন্ট পরিবর্তনের জন্য যে অংশের ফন্ট পাল্টাতে চান সেটুকু সিলেক্ট করুন।
টুলবারে Font ড্রপডাউন বক্সে ক্লিক করুন এবং নির্দিষ্ট ফন্ট সিলেক্ট করুন। মেনু থেকে Format – Font কমান্ড ব্যবহার করেও ফন্ট ডায়ালগ বক্স ব্যবহার করা যায়।
সাইজ পরিবর্তনের জন্য লেখা সিলেক্ট করে Font Size ড্রপডাউন মেনু থেকে নির্দিষ্ট সাইজ সিলেক্ট করুন। সাধারনভাবে বডি টেক্সট এর জন্য ১০ থেকে ১৪ এর মধ্যে ফন্ট সাইজ ব্যবহার করা হয়।
বোল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইন ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট অংশ সিলেক্ট করে টুলবারে Bold, Italic কিংবা Underline বাটনে ক্লিক করুন।
লেখার রং পরিবর্তনের জন্য বাটনে ক্লিক করুন, অথবা ড্রপ ডাউন লিষ্ট থেকে পছন্দমত রং বেছে নিন।

একই ডকুমেন্টে নানারকম ফন্ট ব্যবহার করবেন না। বডি টেক্সট এর জন্য নির্দিষ্ট ফন্ট নির্দিস্ট সাইজ এবং সবগুলি টাইটেল-সাবটাইটেল এর জন্য নির্দিষ্ট ফন্ট, ফন্ট সাইজ ব্যবহার করুন।
বিশেষ কারন ছাড়া অপ্রচলিত ফন্ট ব্যবহার করবেন না। অন্য কম্পিউটারে সেই ফন্ট না থাকলে তার বদলে অন্য ফন্ট দেখা যাবে। এতে এলাইনমেন্ট থেকে শুরু করে নানাবিধ পরিবর্তন হবে।


এলাইনমেন্ট
আপনি লেখাকে মার্জিন থেকে মাঝখানে, বামদিকে, ডানদিকে রাখতে পারেন। কিংবা প্যারাগ্রফের ক্ষেত্রে লাইনগুলিকে দুদিকেই সমানভাবে রাখতে পারেন।
যে অংশটুকুর পরিবর্তন করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন
টুলবারে Aligh Left, Center, Align Right অথবা Justify বাটনে ক্লিক করুন।

স্পেসবার কিংবা ট্যাব ব্যবহার করে লেখা এলাইন করবেন না। এতে পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

বানান সংশোধন করা
আপনি নিশ্চয়ই এরই মধ্যে লক্ষ করেছে টাইপ করার সময় কোন কোন শব্দের নিচে লাল অথবা সবুজ বাকা দাগ হাজির হয়েছে। এর অর্থ ওয়ার্ডের হিসেবে সেখানে সমস্যা রয়েছে লাল দাগ অর্থ বানান ভুল। ঠিক করার জন্য শব্তের ওপর রাইট-ক্লিক করুন। সম্ভাব্য শব্দের একটি লিষ্ট পাওয়া যাবে। সেখান থেকে ঠিক শব্দটি সিলেক্ট করুন।
কখনো কখনো সঠিক শব্দকেও ভুল হিসেবে দেখাতে পারে। যেমন ব্যক্তির বা যায়গার নাম। সেক্ষেত্রে স্পেলিং ডায়ালগ বক্সে Ignore সিলেক্ট করুন। শব্দটিকে ওয়ার্ড ডিকশনারীতে যোগ করার জন্য Add বাটনে ক্লিক করুন।

কপি ব্যবহার
এক যায়গার লেখা কপি করে আরেক যায়গায় ব্যবহার করায়, এক ডকুমেন্টের লেখা কপি করে আরেক ডকুমেন্টে ব্যবহার করা যায়।
যে অংশটুকু কপি করতে চান সেটা সিলেক্ট করে টুলবারে Copy টুলে ক্লিক করুন, অথবা মেনু থেকে Edit – Copy সিলেক্ট করুন, অথবা কিবোর্ডে Ctrl – C কমান্ড দিন।
যেখানে ব্যবহার করতে চান সেখানে কার্সর এনে টুলবারে Paste টুলে ক্লিক করুন, অথবা মেনু থেকে Edit Paste সিলেক্ট করুন, অথবা কিবোর্ডে Ctrl – V কমান্ড দিন।

প্রিন্ট করুন
ডকুমেন্টের সব কাজ শেষ হয়ে গেলে যদি প্রিন্ট করতে চান তাহলে আপে দেখে নিন প্রিন্ট করলে সেটা কাগজে কেমন দেখাবে। এজন্য মেনু থেকে File – Print Preview কমান্ড দিন।
প্রিন্টার রেডি থাকলে প্রিন্ট করার জন্য মেনু থেকে File – Print অথবা কিবোর্ডে Ctrl – P চাপ দিন।
প্রিন্ট ডায়ালগ বক্সে আপনি বলে দিতে পারেন কোন প্রিন্টার ব্যবহার করবেন (যদি একাধিক প্রিন্টার লাগানো থাকে) পুরো ডকুমেন্ট প্রিন্ট করবেন, অথবা বর্তমান পৃষ্ঠা (যেখানে কার্সর রয়েছে) অথবা নির্দিস্ট কয়েকটি পৃষ্ঠা।
কোন ডকুমেন্টের ২ থেকে ৭ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত প্রিন্ট করার জন্য Pages অংশে টাইপ করতে হবে ২-৭,
অথবা  ২, ৩ এবং ৭ নম্বর পৃষ্ঠা প্রিন্ট করার জন্য টাইপ করতে হবে ২,৩,৭
এছাড়া ডকুমেন্টের নির্দিষ্ট অংশ সিলেক্ট করে সেটুকু প্রিন্ট করা যায়।


ওয়ার্ড প্রসেসিং এর মুল কাজ এটুকুই।  

2 comments:

  1. নিঃসন্দেহে শিক্ষনীয়। ধন্যবাদ এই ধরনের লুকিয়ে থাকা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করার জন্য।
    উজ্জ্বল দত্ত
    নেত্রকোনা।
    ০১৭১২৪১৯৮৫০

    ReplyDelete