Sunday, March 27, 2011

ভিডিও এডিটিং টিউটোরিয়াল : ভিডিও এডিটিং এর হার্ডঅয়্যার, সফটঅয়্যার ইত্যাদি

ডিজিটাল ক্যামেরার কল্যানে বর্তমানে ভিডিও পেশাগতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, যে কেউ ভিডিও করতে পারেন। ডিজিটাল ষ্টিল ক্যামেরা থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনে খুব সহজে ভিডিও করা যায়। ভিডিও ব্যবহারের যায়গাও বেড়েছে। সিডি-ডিভিডি থেকে শুরু করে কম্পিউটার-ইন্টারনেটে পর্যন্ত।
ভিডিও এবং ভাল ভিডিও দুইয়ের পার্থক্য ক্যামেরা এবং সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করার মধ্যে অনেকটাই নির্ভর করে। তারপরই প্রশ্ন আছে এডিটিং এর। অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া, কোথাও সমস্যা থাকলে সেটা ঠিক করা, বিশেষ ইফেক্ট ব্যবহার, শব্দ যোগ করা  ইত্যাদি। এজন্যই ভিডিও এডিটিং। যদি ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতে আগ্রহী হন তাহলে কি থাকতে হবে, কি জানতে হবে বিষয়গুলি জেনে নিন এখান থেকে।


ভিডিও এডিটিং এর যন্ত্রপাতি
ভিডিও এডিটিং এর জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন হয় একথা প্রচলিত। বিষয়টি নির্ভর করে আপনি কোন মানের ভিডিও করবেন তার ওপর। আগেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, চলচ্চিত্র কিংবা টিভির জন্য ভিডিও ব্যক্তিগত ভিডিও থেকে আলাদা। সেজন্য যত শক্তিশালী কম্পিউটার থাকে তত ভাল। শক্তিশালী বলতে বুঝানো হয়েছে প্রসেসর, মেমোরী এবং ভিডিও কার্ড এই তিনটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়কে। সিডি-ডিভিডি কিংবা ইন্টারনেটের জন্য ভিডিও এডিট করতে বর্তমানের সাধারন কম্পিউটারই যথেষ্ট।
এরপর প্রয়োজন ভিডিও এডিটিংএর জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্র। ভিডিও এডিটিং এর জন্য আপনার প্রথম কাজ ভিডিওকে কম্পিউটারে নেয়া। কিভাবে নেবেন সেটা নির্ভর করে ভিডিও কোথায় আছে তার ওপর। যদি মেমোরী কার্ড, হার্ডডিস্ক কিংবা ডিভিডিতে ভিডিও করা হয় তাহলে সরাসরি কপি করা সম্ভব। এজন্য পৃথক কিছু প্রয়োজন নেই।
যদি টেপে রেকর্ড করা হয় তাহলে সেই টেপ প্লে করার জন্য প্লেয়ার অথবা ক্যামেরা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় মিনি-ডিভি টেপ। প্লেয়ারের দাম বেশি বলে সাধারনত এজন্য ক্যামেরাকেই প্লেয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 
মিনি-ডিভি ছাড়াও ডিভি (ডিভিক্যাম), ডিজিটাল-৮, হাই-৮ কিংবা পুরনো ভিএইচএস ভিডিও ব্যবহার করা প্রয়োজন হতে পারে। কিংবা বেটাক্যাম। যাই হোক না কেন, সেটা প্লে করার জন্য তারসাথে মানানসই ভিসিআর অথবা ক্যামেরা থাকতে হবে।
ভিডিও প্লে করে কম্পিউটারে সফটঅয়্যার ব্যবহার করে রেকর্ড করা হয়। সাধারনভাবে একাজ ক্যাপচার নামে পরিচিত। এজন্য ক্যাপচার কার্ড নামে একটি ডিভাইস প্রয়োজন হয়।
অধিকাংশ মিনিডিভি ফায়ারঅয়্যার পোর্ট ব্যবহার করতে পারে। এটা অনেকটা ইউএসবি-ম মত একধরনের পোর্ট। পৃথক কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, অনেক সময় গ্রাফিক্স কার্ড কিংবা মাদারবোর্ডের সাথেও দেয়া থাকে।
কোন কোন ক্যামেরায় ইউএসবি পোর্টে ভিডিও ক্যাপচার করা যায়। ক্যামেরা ম্যানুয়েল থেকে ভিডিও ট্রান্সফার করা যাবে কিনা জেনে নিন। অনেকেই বিভ্রান্ত হন ষ্টিল ইমেজ পাওয়া যায় অথচ ভিডিও পাওয়া যায় না দেখে।
ভিএইচএস, ডিজিটাল৮ ইত্যাদি ফায়ারঅয়্যার পোর্ট ব্যবহার করতে পারে না। এদের জন্য প্রয়োজন হবে এনালগ ভিডিও ক্যাপচার কার্ড। কোনকোন টিভিকার্ডেও ক্যাপচারের ব্যবস্থা থাকে। কার্ড যত ভাল হবে তত ভাল মানের ভিডিও পাওয়া যাবে। ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ডিভিডি তৈরীর (এমপেগ-২ ভিডিও) উপযোগি কার্ড পাওয়া যায়। আর যারা টিভির ভিডিও নিয়ে কাজ করবেন তাদের কিনতে হবে আরো দামী কার্ড।
প্রসেসর, মেমোরী, ডিসপ্লে কার্ড ইত্যাদি ছাড়াও ভিডিওর এডিটিংএর জন্য বড় আকারের মনিটর হার্ডডিস্কে প্রচুর যায়গা প্রয়োজন হয়।

নানাধরনের ভিডিও
আপনি যে ভিডিও এডিট করবেন তা নানারকম সুত্র থেকে আসতে পারে। টেপে রেকর্ড করা কিংবা মেমোরী কার্ডে, কিংবা ডিভিডিতে। কাজেই এডিটিং এর সময় নানাধরনের ভিডিও নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন হতে পারে। আবার কাজশেষে ভিডিওকে কোথায় ব্যবহার করবেন সেকারনেও ভিডিও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সেটা হতে পারে পুনরায় টেপে নেয়া, ডিভিডি বা ব্লু-রে কিংবা ইন্টারনেট। দুটো ক্ষেত্রেই ভিডিও সম্পর্কে ভালভাবে জানা প্রয়োজন।
ডিজিটাল ক্যামেরা কিংবা মোবাইল ফোনে করা ভিডিওতে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন সেগুলি বিভিন্ন মানের হয়। আকারে বড়-ছোট হয়, রঙে পার্থক্য থাকে, মানে পার্থক্য থাকে। এগুলি হয়ে থাকে ভিডিওর বিভিন্ন বৈশিষ্টের পার্থক্যের কারনে।
প্রধান লক্ষ্যনীয় বিষয়, ভিডিওর আকার। সিডির জন্য ভিডিওর মাপ এক, ডিভিডির জন্য আরেক, টিভির জন্য আরেক। ৭২০পি হাই ডেফিনিশন ভিডিও এক, ১০৮০পি ফুল হাই ডেফিনিশন আরেক। এগুলি নির্দিষ্ট। যেমন বাংলাদেশের টিভির জন্য রেজ্যুলুশন ৭৬৮-৫৭৬, ২৫ ফ্রেম/সেকেন্ড। আপনি ইচ্ছে করলেই কমবেশি করে ব্যবহার করতে পারেন না। কাজেই ভিডিও এডিট করার আগেই জেনে নিন আপনার মুল ভিডিও কেমন, এডিট করার পর সেটা কোথায় ব্যবহার করা হবে। সেই মাপে (রেজ্যুলুশন) ক্যাপচার থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ করুন। এতে সবচেয়ে ভাল মানের ভিডিও পাওয়া যাবে এবং সফটঅয়্যারকে যেহেতু রেজ্যুলুশন বা ফ্রেম রেট পরিবর্তন করতে হবে না সেকারনে কাজ দ্রুত হবে।
কোন একটি ভিডিও নির্দিষ্ট প্লেয়ার না থাকলে চলে না এটাও হয়ত লক্ষ করেছেন। এজন্য কোডেক নামে একটি সফটঅয়্যার দায়ী। ভিডিওকে কম্প্রেস করার জন্য কোডার নামে একধরনের সফটঅয়্যার প্রয়োজন হয়, তাকে প্লে করার সময় ডিকোডার নামে আরেকটি সফটঅয়্যার প্রয়োজন হয়। দুটিকে একসাথে কোডেক বলে (আন-কম্প্রেসড ভিডিও ফাইলসাইজ এতটা বেশি যায়গা নেয় যা নিয়ে কাজ করা যায় না।  অতিমাত্রায় উচুমানের ভিডিওর জন্য কোনকোন ভিডিওমেকার এগুলি ব্যবহার করেন।)
কোডেক বিষয়টি হার্ডঅয়্যারভিত্তিক হতে পারে, পুরোপুরি সফটঅয়্যার হতে পারে। উচুমানের কার্ডের সাথে নিজস্ব কোডেক দেয়া হয়। সমস্যা হচ্ছে সেটা ব্যবহার করা ভিডিওকে অন্য যায়গায় ব্যবহারের জন্য সেই কোডেক ইনষ্টল করে নিতে হয়।
বিষয়টি আরো জটিল না করে সহজভাবে দেখা যাক, সিডি-তে ব্যবহৃত হয় এমপেগ এবং ডিভিডিতে ব্যবহৃত হয় এমপেগ-২ কোডেক। সকল ভিডিও এডিটিং সফটঅয়্যার এবং প্লেয়ার এগুলি ব্যবহার করতে পারে। এখানে অন্য কোডেক ব্যবহার করবেন না।
কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদিতে ব্যবহারের জন্য উইন্ডোজের সাথে কিছু কোডেক দেয়া হয়। এগুলি ব্যবহার নিরাপদ।
এপল কুইকটাইম ব্যবহার ভাল পদ্ধতি হতে পারে। এতে ইচ্ছেমত কম্প্রেশন রেশিও ব্যবহার করে ফাইলসাইজ নিয়ন্ত্রন করা যায়। অর্থাত ইচ্ছে করলে খুব ভাল মানের ভিডিও তৈরী করতে পারেন, ইচ্ছে করলে ফাইল সাইজ কমাতে পারেন।
ইন্টারনেটে ব্যবহারের জন্য বর্তমানে ফ্লাশ ভিডিও খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া রিয়েল-মিডিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
সংক্ষেপে, যে কোডেক ব্যবহার করবেন সেটা সম্পর্কে জেনে নিন।

নানাধরনের এডিটিং সফটঅয়্যার
আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী সফটঅয়্যার বেছে নেয়াই উত্তম। প্রফেশনালদের জন্য একধরনের সফটঅয়্যার, সাধারন ব্যবহারকারীদের জন্য আরেক ধরনের। আবার দুইয়ের মাঝামাঝি প্রোজুমার নামের আরেক ধরনের সফটঅয়্যার। স্বাভাবিকভাবেই প্রফেশনালদের সফটঅয়্যারে সুবিধে বেশি, আবার কাজের পদ্ধতিও তুলনামুলক জটিল। সিনেমার ভিডিও কিংবা টিভি অনুস্ঠান এডিটিং এর কাজে এগুলি ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে সাধারনের জন্য ব্যবহারের সফটঅয়্যারগুলি খুব সহজে শিখে নেয়া যায়। মুলত ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক ভিডিও এডিটিং এর কাজে এগুলি ব্যবহার করা হয়।
আর মাঝামাঝি সফটঅয়্যারগুলি তুলনামুলক সহজ হওয়ার পরও অনেক প্রফেশনাল কাজের সুবিধে পাওয়া যায়। বিয়ের ভিডিও, জন্মদিন, পিকনিক বা অন্যান্য অনুস্ঠান এডিটিংএর কাজে এগুলি ব্যবহার করা হয়।
প্রফেশনাল কাজের জন্য শিখতে পারেন এডবি প্রিমিয়ার। উইন্ডোজ এবং ম্যাক উভয় অপারেটিং সিষ্টেমে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই সফটঅয়্যার সাধারন হার্ডঅয়্যার ব্যবহার করে কাজ করা যায়। এনিমেশনের জন্য আফটার ইফেক্টস, ইমেজ এডিটিং এর জন্য ফটোশপ, ভেক্টর এনিমেশনের জন্য ফ্লাশ, ডিভিডি অথরিং এর জন্য এনকোর ইত্যাদি একই কোম্পানীর সফটঅয়্যার হওয়ার একের সাথে অন্যকে ভালভাবে ব্যবহার করা যায়।
ম্যাক অপারেটি সিষ্টেমের জন্য ফাইনাল কাট অত্যন্ত জনপ্রিয় সফটঅয়্যার। সমস্যা একটিই, এর উইন্ডোজ ভার্শন নেই।
এভিড অত্যন্ত শক্তিশালী এডিটিং সফটঅয়্যার। হলিউডের মুভি এডিটিং কাজে ব্যবহার করা হয়। এভিড মিডিয়া কম্পোজার সাধারন হার্ডঅয়্যারে ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য ভার্শনগুলির জন্য বিশেষ হার্ডঅয়্যার প্রয়োজন হয়।
অনেকে সনি ভেগাস, এডিয়াস ইত্যাদি সফটঅয়্যার ব্যবহার করেন।
প্রোজুমার কাজের জন্য কোরেল ভিডিও ষ্টুডিও, পিনাকল ষ্টুডিও, এডিভ ষ্টুডিও, ম্যাজিক্স ভিডিও প্রো, পাওয়ার ডিরেক্টর ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। কেউ কেউ ইউলিড মিডিয়া ষ্টুডিও ৭ (শুধুমাত্র এক্সপি-র জন্য) পছন্দ করেন। এতে হলিউড ইফেক্টস, এডোরেজ, এক্সপ্লোড ইত্যাদি দৃষ্টিনন্দন ইফেক্ট/ট্রানজিশন ব্যবহার করা যায়।
আর ব্যক্তিগত পর্যায়ের কাজের জন্য;
আসলে প্রোজুমার লেভেলের সফটঅয়্যারগুলির ব্যবহার এতটাই সহজ যে এরথেকে সহজ সফটঅয়্যার না খোজাই ভাল। শুরুতে কিছুটা কষ্টকর মনে হলেও চেষ্টা করে শিখে নিন।

2 comments:

  1. খুবই ভাল একটি লেখা। আশা করব উনি এরকম আরও লেখা দিবেন । ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. ভিসিঅার এর ফিতা থেকে সিডির ডিস্ক কোথায় করে জানলে জানাবেন

    ReplyDelete