আপনি খুব ভাল ছবি উঠান। হয়ত দীর্ঘদিন ধরেই ছবি উঠাচ্ছেন। এবিষয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করেছেন। একসময় মনে করতেই পারেন, আপনার সাথে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের পার্থক্য কোথায়?
কোন ব্যক্তিকে যখন পেশাদার বলা হয় তখন তারসাথে অনেকগুলি বিষয় জড়িয়ে থাকে। প্রথমত অভিজ্ঞতা। অধিকাংশ পেশাদার ফটোগ্রাফার ছবি উঠান ২-৩ দশক ধরে। এই ধীর্ঘ্য সময় পার করার পর নিজেকে পেশাদার বলে প্রচার করেন। আপনি অবশ্যই আরো কম সময়ে পেশাদার হতে পারেন। এমনকি একেবারে নতুন ফটোগ্রাফার হলেও শিল্পের দিক থেকে পেশাদার ফটোগ্রাফারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু ফটোগ্রাফির শৈল্পিক দিক ছাড়াও যে কারিগরী দিক রয়েছে যেখানে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই।
ক্যামেরা সম্পর্কে জ্ঞান
একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার তার ক্যামেরা সম্পর্কে জানেন। এই জানা বিভিন্ন কন্ট্রোল ব্যবহার করা থেকে অনেক বেশি কিছু। এমন না যে তারা অটো মোড ব্যবহার করেন না, কিন্তু ঠিক প্রয়োজনের সময় সাটারস্পিড, এপারচার, আইএসও, হোয়াইট ব্যালান্স নিখুতভাবে সেট করে নিন। এদের প্রতিটি একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। একটি পরিবর্তন করলে আরেকটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়। কাজেই একেবারে নিখুতভাবে জানা কঠিন কাজ বৈকি।
লেন্স সম্পর্কে জানা
পেশাদার ফটোগ্রাফার এবং এসএলআর দুটি সমার্থক শব্দ। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের লেন্স ব্যবহার করতে হয় বিভিন্ন পরিস্থিতির ছবি উঠানোর জন্য। সৌখিন ফটোগ্রাফারের কাছে লেন্স এমন একটি বস্তু যার নির্দিষ্ট ফোকাল লেন্ধ থাকে, নির্দিষ্ট এপারচার ব্যবহার করা যায়। পেশাদারদের কাছে বিষয়টি অনেক বেশি কিছু।
প্রতিটি লেন্সের বিভিন্ন ফোকাল লেন্থে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট কাজ করে। ওয়াইড এঙ্গেলে একধরনের সমস্যা (ডিসটর্সন) তৈরী হয়, জুম এঙ্গেলে আরেক ধরনের সমস্যা তৈরী হয়। সেটা কয়েকশ ডলারের লেন্স হোক আর কয়েক হাজার ডলারের লেন্সই হোক। পেশাদার ফটোগ্রাফার প্রতিটি সেটিং এর জন্য সমস্যার পরিমান জানেন। বিষয় অনুযায়ী কখনো ৩০০মিমি লেন্সকেও ২০০মিমি এর বেশি ব্যবহার করেন না। অনেকে প্রতিটি ফোকাল লেন্থের জন্য চার্ট তৈরী করে নেন।
তারপরও, আগে যেমন বলা হয়েছে প্রতিটি লেন্সেই সমস্যা থাকে। সেই সমস্যা দুর করা হয় প্রফেশনাল ইমেজ এডিটিং সফটঅয়্যার দিয়ে। প্রতিটি উচুমানের ফটোএডিটিং সফটঅয়্যারে বিশ্বের প্রধান নির্মাতাদের সবগুলি লেন্সের প্রতিটি মডেলের তথ্য থাকে। সেকানে উল্লেখ করা থাকে কোথায় কতটুকু সমস্যা হতে পারে। সেই লেন্স সিলেক্ট করে সফটঅয়্যারের মাধ্যমে সমস্যা দুর করা হয়।
আলো সম্পর্কে জানা
ফটো শব্দে অর্থ আলো। কাজেই ফটোগ্রাফির সাথে আলোর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার নানাধরনের আলোর বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানেন। শুধুমাত্র সুর্যের আলোও যদি বিবেচনা করা হয়, সেটা সুর্যোদয়ের সময় একরকম, বেলা বাড়ার পর প্রতিঘন্টায় অন্যরকম, এক অঞ্চলে একরকম আরেক অঞ্চলে আরেক রকম। এই পার্থক্য হয় সুর্য্যের কৌনিক অবস্থান, আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নির্ভর করে। হয়তো জানেন হাওয়াই অঞ্চলে আকাশ ঘন নীল, বাংলাদেশের আকাশ কখনো ততটা ঘন নীল হয়না। এর প্রভাব পড়ে ছবির অন্যান্য বিষয়ের ওপরও।
এরসাথে যদি কৃত্রিম আরো যোগ করা হয়, ফ্লরোসেন্ট, এলইডি, টাংষ্টেন, ফ্লাশ এদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট পৃথক। এদের বিবেচনায় রেখে ছবি উফান পেশাদার ফটোগ্রাফার।
সঠিকভাবে ছবি উঠানো
প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার অবশ্যই জানেন কতটা দুর থেকে, কোন এঙ্গেলে, ঠিক কোন মুহুর্তে ভাল ছবি পাওয়া যাবে। ছবির সঠিক ফ্রেমিং অভ্যেস করতে প্রয়োজন হয় যথেষ্ট অভিজ্ঞতা। সেইসাথে ক্যামেরা ঠিকভাবে ধরা, হাত না কাপা এসব কাজেও দীর্ঘ্যদিনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
মুল কথা একটাই, আপনি পেশাদার ফটোগ্রাফার হতে পারেন। সেজন্য কোন শর্টকাট পথ নেই। বেশি করে ছবি উঠানো, সেইসাথে পড়াশোনা এবং অভিজ্ঞতা, সবগুলোই প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment