বাংলাদেশের
প্রধান সমস্যা কি, এধরনের প্রশ্ন করলে উত্তর একসাথে করে বেশ বড়সর একটা তালিকা তৈরী করা যাবে। জনসংখ্যা থেকে শুরু করে
দুর্নীতি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব হয়ে শিক্ষাব্যবস্থা, বেকারত্ব, অবকাঠামো দ্রব্যমুল্য
কিংবা নৈতিকতা সবকিছুই হয়ত স্থান পাবে তাতে। কেউ সেটা দেখে বিরক্ত হয়ে বলে বসতে
পারেন মুল সমস্যা হচ্ছে বেশি কথা বলা।
বেশি কথা বলাও
যে সমস্যা এতে সন্দেহ নেই। বহু বছর আগে জেফ্রি চসার নামে এক ইংরেজ সমালোচনা করে লিখেছিলেন,
কথাগুলো যদি বন্যার পানি হত তাহলে দেশ বন্যায় তলিয়ে যেত। বাংলাদেশ দেখলে তিনি কি বলতেন অনুমান করা কঠিন।
বরং কথা রেখে
কাজের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। আপনি যত সমস্যার কথাই বলুন না কেন, এদের সবগুলিই
সত্য। এবং এগুলিকে আলাদা করার কোন সুযোগ নেই। একের কারনে অন্যটি ঘটে। বিশ্বের
ইতিহাস বলে, যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা নিজেদের স্বার্থে জনগনকে মুর্খ বানিয়ে রাখতে
চান। মুর্খতা থেকে লোভ, অপরাধ, দুর্নীতি, বেকারত্ব, পরনির্ভরতা ইত্যাদি সমস্যা
তৈরী হয়। চারিদিকে এমন সমস্যা তৈরী করা হয় যেখানে সাধারন মানুষ ভাবতে শুরু করে এই
সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অমুক নেতাকে প্রয়োজন। অনেকটা হলিউডি ছবির সেই
গডফাদারের মত, নিরাপদ থাকার জন্য যাকে নিয়মিত চাদা দিতে হয়।
আপনি এমনই মানবসমাজের
একজন সদস্য। শুধুমাত্র আপনার সমাজই এই প্রক্রিয়ায় জরিত না, পুরো বিশ্বই এমন
পরিস্থিতি তৈরী করে রেখেছে। প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজের লাভক্ষতির
হিসেব। এক দেশ যখন রাষ্ট্রিয়ভাবে অন্য দেশকে সাহায্য করে সেটা কখনোই স্বার্থছাড়া
করা হয় না। একমাত্র সাধারন মানুষের মানবিক বিচারকে পৃথক রাখতে পারেন। এক দেশের
সাধারন মানুষ যখন অন্য দেশের সাধারন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন সেটা অকৃত্তিম
এতে সন্দেহ নেই।
অনেকেই বিরক্ত
হয়ে ভাবছেন, বাংলা-টিউটর নামের ব্লগে এসব অবান্তর কথা কেন!
আপনি নিজে এবং
আপনার আশেপাশের সবাই এই পরিস্থিতির বাইরে নন। যদি ভেবে থাকেন আপনার দুরবস্থার জন্য
অন্যরা দায়ী তাহলে সাথে এটাও ধরে নিতে পারেন, আরেকজন মনে করছে তার দুরবস্থার জন্য
আপনি দায়ি। মুল বক্তব্য এটাই।
কাজের উদাহরন
দিয়ে বিষয়টি দেখা যাক। পড়াশোনা শেষ করে চাকরী পাবেন এই আশা অনেকেই করেন না। করলেও
কয়েক বছর ধর্না দিয়ে, ঘুষ-তদবির ইত্যাদি দিয়ে চেষ্টা করে একসময় হাল ছেড়ে ভাবতে হয়
নিজে স্বাধীনভাবে কিছু করার। স্বাধীনভাবে করার অর্থ ফ্রিল্যান্সিং। সেকারনেই এই
প্রসংগ।
অনলাইন
ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসেনার্সিং নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন, আপনি ইচ্ছে করলেই
শুরু করতে পারেন না। এজন্য দক্ষতা প্রয়োজন হয়, সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য স্থানিয়ভাবে
কাজ করা প্রয়োজন হয়। একটি না থাকলে অন্যটি
হচ্ছে না। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে কাজের সমস্যা প্রবল।
দলগতভাবে যে
কাজ করা সম্ভব সেকাজ একা করা যায় না। আপনি একা ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। একজনকে
নির্দিষ্ট একটি কাজে দক্ষ হতে হয়, আরেকজনকে আরেক কাজে। কাউকে মার্কেটিং নিয়ে ব্যস্ত
থাকতে হয়, কাউকে হিসেবপত্র নিয়ে। কেউই সব বিষয়ে সমান দক্ষ হন না, সবকাজে সময় দেয়ার
প্রশ্নই আসে না। কয়েকজন একসাথে হয়ে কাজ করতে হয়।
এবারে সফলতার
উদাহরন দেখা যাক। গুগল, ফেসবুক কিংবা এপল যাই বলুন না কেন, কোনটিই একা একজন শুরু
করেননি। একেবারে ছোট অবস্থায় শুরু করা হয়েছে, ক্রমে বিস্তৃত হয়েছে। লক্ষনীয় বিষয়
হচ্ছে যারা শুরু করেছেন তাদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরী হয়নি।
মতবিরোধ তৈরী
হয়েছে, পৃথকভাবে কোম্পানী করার চেষ্টা হয়েছে এদের উদাহরন দেয়া কঠিন সহজবোধ্য
কারনে, তাদের অস্তিত্ব নেই।
বিষয়কে এককথায়
আনা যাক। আপনি কম্পিউটার ভিত্তিক কিছু করতে চান, একা করার চেষ্টা করে বড় কিছু করার সম্ভাবনা কম। অন্যদের সাথে নিয়ে শুরু করলে
একসময় মতবিরোধের সম্ভাবনা।
সমাধান পেতে
পারেন এভাবে, যার বা যাদের সাথে কাজ শুরু করতে চান তাদের সাথে খোলাখুলিভাবে সমস্ত
বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। কার ভুমিকা কি, কে কতটা সময় দেবে, কি কাজ করবে, বিনিয়োগ
প্রয়োজন হলে কে কতটা দেবে, লাভের অংশ কে কতটা পাবে, ক্ষতি হলে কে কতটা দায় নেবে, এমনকি
কোন পর্যায়ে যদি কেউ চলে যেতে চান তাহলে তার সমাধান কিভাবে হবে, সবকিছুই। সবধরনের
সম্ভাব্যতা যাচাই করা থাকলে মতভেদের সম্ভাবনা কম।
কোন এক পর্যায়ে
নানাবিধ কারনে কাউকে সরে যেতে হতে পারে। তখন একে অন্যকে দোষারোপ করার মত পরিস্থিতি
যেন তৈরী না হয়, ব্যবসা চালু থাকে সেভাবে পরিকল্পনা করে কাজে হাত দিন।
একই মানষিকতার
আরেকজনকে হয়ত কখনোই পাবেন না। প্রত্যেকেরই চিন্তার ধরন, হিসেবের পদ্ধতি আলাদা। সত্যিকারের
পার্টনারশিপের জন্য সবাইকেই কিছু ছাড় দিতে হয়। এই হিসেব আগে করলে তবেই সফল হওয়ার
সম্ভাবনা।
বিষয়কে
অন্যভাবে দেখতে পারেন। একা লাভ পেতে চাইলে নিজে একা কাজ করতে হয়। অন্যের কাছে কাজ
আশা করলে তাকে লাভের অংশ দিতে হয়। এর ব্যতিক্রম ঘটলে একসময় সমস্যা তৈরী হবেই।
সমস্যার যত বড় তালিকাই তৈরী করুন না কেন, সব সমস্যার মুল
কারন এটাই। নিজেকে সমাজের অংশ হিসেবে দেখতে না পারা।
No comments:
Post a Comment