Saturday, July 30, 2011

কম্পিউটার শেখা এবং ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

আপনি পেশাগত কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করে সাফল্য পেতে চান। বর্তমান যুগে একেবারে স্বাভাবিক এবং যুক্তিসংগত ভাবনা। একসময় মনে করা হত কম্পিউটার ব্যবহার যারা বিশেষ বিষয়ে পড়াশোনা করেছে তাদের জন্য।  বর্তমানে এর ব্যবহার সব যায়গায়। আর পুরোপুরি কম্পিউটারে কাজ করে সফল হওয়ার উদাহরনের অভাব নেই। বিল গেটস, ষ্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গ এদের উদাহরন টানা প্রয়োজন নেই, চারিদিকে বহু মানুষের দেখা পাবেন যাদের সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে কম্পিউটার ব্যবহার।
আপনি প্রোগ্রাম হোন, সফটঅয়্যার তৈরী করে বিক্রি করুন, ডেভেলপার হিসেবে চাকরী করুন কিংবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করুন, সবই সম্ভব যদি সঠিকভাবে শিখতে পারেন এবং তাকে কাজে লাগাতে পারেন।
এই সঠিকভাবে শেখার পদ্ধতি আসলে কি ?
বেশি আগের কথা না যখন ধরে নেয়া হত যারা কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ তারা কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। এখানে একটি বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারনা তৈরী হয়। শিক্ষা প্রতিস্ঠানে যে পাঠদান করা হয় সেটা একাডেমিক শিক্ষা, আর বাস্তবে যখন কেউ কাজ করেন তখন প্রয়োজন হয় পেশাদারী (প্রফেশনাল) শিক্ষা। যে কারনে আপনি যদি ধরে নেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একজন সুযোগ্য শিক্ষক বাস্তব প্রোগ্রামিংএ ভাল করবেন তাহলে ভুল করবেন। তিনি হয়ত কখনো প্রোগ্রামিং কাজ করেননি এবং চেষ্টা করলেই সফল হবেন এমন কথা নেই।
ভাল একাডেমিক শিক্ষার সুবিধে অনেকটা। যদি ইন্টারনেটে বিভিন্ন চাকরীর জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা দেখেন তাহলে লক্ষ করবেন, মায়া ব্যবহার করে প্রোজেক্ট ম্যানেজার খোজ করা হচ্ছে যার কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রী থাকতে হবে, সাথে অন্তত ১০ বছরের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা।  সেইসাথে উল্লেখ করা হচ্ছে অভিজ্ঞতা জোরালো হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও চলবে। বাস্তব ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক জ্ঞানকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি জানেন কি মাইক্রোসফটের প্রতিস্ঠাতা বিল গেটস, ফেসবুকের প্রতিস্ঠাতা জুকারবার্গ পড়াশোনা শেষ না করেই ব্যবসা শুরু করেছিলেন ?
এই সাইট খুব উচু পর্যায়ের পড়াশোনা করা কেউ ব্যবহার করবেন না সেটাই ধরে নেয়া হচ্ছে এবং সেকারনে যাদের কম্পিউটার বিষয়ে বেশি পড়াশোনা সম্ভব হয়নি তাদের লক্ষ্য করেই কথাগুলি বলা হচ্ছে।
আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ হতে চান। কিভাবে হবেন ?
আপনি কোথাও কোর্স করতে পারেন।  আবারও মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, আপনি কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করার অর্থ এই না যে বেশি পড়াশোনা না করেই আপনাকে শেখাচ্ছে তারকাছে শেখা যাবে না। বহু ডিগ্রীধারী বিল গেটসের সই করা সার্টিফিকেটকে গর্বের সাথে ব্যবহার করেন।
কাজেই, আপনার প্রথম লক্ষ্য যারা প্রফেশনাল ট্রেনিং দেন সেখান থেকে কাজের পদ্ধতি শিখে নেয়া। তাদের পক্ষে সম্ভব বাস্তব কাজের উদাহরন দেখিয়ে আপনাকে দক্ষ করে তোলা।
তারপরও মুল শেখার দায়িত্ব আপনার নিজের। যদি সত্যিকারের অর্থেই বিশেষজ্ঞ হতে চান আপনাকে পড়াশোনা করতে হবে নিজেকেই। সুশিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই স্বশিক্ষিত এই নিয়মে। বাংলাদেশে এধরনের বিষয়ে কোন শিক্ষা প্রতিস্ঠান এখনও খ্যাতিলাভ করেনি, কাজেই বাংলাদেশে প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি।
নিজে পড়াশোনার কথা বলতে প্রথমে বইয়ের প্রসংগ চলে আসে। কম্পিউটার বিষয়ে বই লেখেন যারা দক্ষ প্রশিক্ষক, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে অভিজ্ঞতা  অর্জন করেছেন, মুল সফটঅয়্যার তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত এরা (বাংলা বইয়ের কথা বলা হচ্ছে না। দুঃখজনকভাবে বাংলা কম্পিউটার বিষয়ে বই লেখকদের অনেকেই আদৌ কাজ করেন না। শুধুমাত্র চাহিদা মেটাতে না বুঝে অনুবাদ করে যান। আপনি যদি দক্ষ হতে চান অন্তত টেকনিক্যাল বই ইংরেজিতে পড়ে বোঝার যোগ্যতা অর্জন করুন)।
আজ থেকে বছর ১৫ আগে একমাত্র বই ছিল ভরসা। সব বই বাংলাদেশে পাওয়া যা না। অন্য দেশ থেকে বই কেনা, ডলার-পাউন্ডে বইয়ের দাম এসব বিষয় অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য শোনাবে। তারপরও একসময় এটাই ছিল বাস্তবতা। বর্তমানে সেই দুরবস্থা নেই।
যদি বাজারে বই না পাওয়া যায়, ইন্টারনেটে খোজ করুন। পিডিএফ ফরম্যাটে বই পাবেন। যে কোন বিষয়ে বই পাবেন শতশত। অনেকগুলি বিনামুল্যে, অন্যগুলির দাম সামান্য। পেমেন্ট দিয়ে সাথেসাথে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
যদি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আদৌ কোন প্রতিস্ঠানের দেখা না পান, শুরুতে বই পড়াকে কঠিন মনে হয় তাহলে ব্যবহার করতে পারেন ভিডিও টিউটোরিয়াল। বিশ্বের কিছু প্রতিস্ঠান ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করে খ্যাতিলাভ করেছে। লিনডা ডট কম, ক্লাশ অন ডিমান্ড,  টোটাল ট্রেনিং, ডিজিটাল টিউটর, ভিটিসি ইত্যাদি কোম্পানীর সব বিষয়ে টিউটোরিয়াল রয়েছে।
বর্তমানকালে শেখার সবচেয়ে বড় যায়গা ইন্টারনেট। অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে বিভিন্ন লেভেলের টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে। মুলত বিজ্ঞাপন থেকে আয় হয় বলে এই সাইটগুলি ব্যবহারে কোন খরচ নেই। পছন্দমত কিছু সাইট বেছে নিন, তাদের টিউটোরিয়াল দেখে কাজ করে দক্ষতা অর্জন করুন।
এর পরও সমস্যা থেকে যায়। যারা প্রোগ্রামিং কাজ করেন তারা জানেন কোথাও সমস্যা দেখা দিলে যখন কারো সাহায্য পাওয়া যায় না রাতের ঘুম বাদ দিয়েও সমাধান হয় না। এজন্য রয়েছে ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয়ের ফোরাম।
আপনার মত একই সমস্যায় হয়ত অন্য কেউ পড়েছিলেন, তিনি ফোরামে সেটা জানিয়েছে, অন্যরা তার সমাধান দিয়েছেন। আপনি সেখান থেকে সমাধান জেনে নিন। সেখানেও যদি সমাধান না থাকে তাহলে ফোরামে সংক্ষেপে আপনার সমস্যা জানিয়ে দিন। বিশ্বের যে কোন যায়গা থেকে কেউ সমাধান দেবে।
শেখার পুরো বিষয়কে যদি একবাক্যে প্রকাশ করা হয় তাহলে বিষয়টা হবে এমন, আপনি কি জানতে চান সেটা স্পষ্ট করুন। ইন্টারনেটে সেটা লিখে সার্চ করুন।

No comments:

Post a Comment