ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় সম্পর্কে বাংলাদেশে যে কথাগুলি বলা হয় সেগুলি বিভিন্নমুখি। কেউ বলেন বাংলাদেশ আউটসোর্সিং থেকে ধনী দেশে পরিনত হবে, কেউ বলেন বিপুল পরিমান জনশক্তি এজন্য তৈরী হয়ে আছ, যেকোন সময় কারা কাজ শুরু করবে (এখন কেন করছে না তার উত্তর নেই), প্রায় সারা দেশ ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। ক্রমেই দেশের সমস্তকিছু ডিজিটাল করা হচ্ছে। কেউ বলেন একেবারে বিপরীত কথা। ইন্টারনটের যে মান তাতে ই-মেইল ব্যবহার করা কষ্টকর। রীতিমত ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় ইমেইল পড়ার জন্য। দেশে বিপুল পরিমান দক্ষ জনশক্তি তৈরী আছে যাদের দেখা পাওয়া যায় না। যারা নিয়োগ দেন তারা শত চেষ্টা করেও যোগ্য প্রার্থী পান না। এসবের মাঝখানে তৈরী হচ্ছে আরেকটি দল। যারা কাজ করতে চান। এটুকু বোঝেন চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ব্যবসা করার পরিস্থিতি নেই। তাদের বক্তব্য কিংবা ধারনা, দুদিকের কথাই ঠিক। কোনভাবে হঠাত হুড়হুড় করে আউটসোর্সিং কাজ আসতে শুরু করবে এটাও ঠিক আবার ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না এটাও ঠিক।
দুই বিপরীতমুখি বক্তব্য ঠিক হওয়ার কারন নেই এমন না। আপনি যদি ইন্টারনেটের জন্য কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করতে পারেন তাহলে ইউটিউব ভিডিও কেন, দিনরাত হাই ডেফিনিশন ভিডিও ডাউনলোড করুন কোন সমস্যা নেই। ডেডিকেটেড লাইন পাবেন। আর যদি ১ গিগাবাইটের সীমিত লাইন ব্যবহার করতে চান তাহলে পুরো মাস জুড়ে সেই ১ গিগাবাইট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না। ইন্টারনেটের গতি বাইট থেকে বিটে নেমে আসবে।
অনেকেই প্রশ্ন করেন এই পরিস্থিতির কারন আসলে কি। একেবারে নিখুত উত্তর দেয়া সম্ভব না কারন কর্মকর্তারা মিথ্যেও বলেন না সত্যও বলেন না। বলতে পারেন অসত্য বলেন।
বাংলাদেশে ভিওআইপি একটি বড় ব্যবসা। কোটিখানেক বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করে, পরিবারের সাথে তাদের কথা হয় এই পদ্ধতিতে। প্রতিটি আইএসপি হাজার কোটি টাকার এই ব্যবসা করে। এক পরিসংখ্যান বলছে সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিটক শীর্ষে। আপনি যদি নিজেই বিনামুল্যে ইন্টারনেটে কথা বলতে শুরু করেন তাহলে তাদের লাভ কমে যায়। এটা একটা কারন হতেই পারে।
আরেক কারন হতে পারে যারা আউটসোর্সিংকে তৈরী পোষাক শিল্পের মত দেখতে আগ্রহি। ইন্টারনেট থাকবে তাদের হাতের মুঠোয়। আপনি সেখানে গার্মেন্টস কর্মীর মত লাইন ধরে ঢুকে কাজ করবেন আর তারা ডলার গুনবেন। সরাসরি আপনার হাতে ডলার আসার সুযোগ তারা করে দেবেন কেন ?
কারন আরো থাকতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকায় চেষ্টা করা হয়েছিল অনলাইনে খবরদারী বাড়ানোর আইন করার। উইকিপিডিয়া-গুগল সরাসরি এর বিরোধীতা করে করতে দেয়নি। আমেরিকা বিভিন্ন দেশের সাথে পারষ্পরিক চুক্তি করছে একাজ করার জন্য। এরই মধ্যে বেশকিছু দেশ চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের মত দেশকে বাধ্য করা তাদের জন্য কোন বিষয় না। বরং সরকার খুশি হবে ফেসবুকের মত সাইটে খবরদারি করার সুযোগ পেলে। কেউ সমালোচনা করলে তার গলা টিপে ধরা যাবে।
এরসাথে পাইরেসির সম্পর্ক কি, পাইরেসিতে বিশ্বসেরা দেশের বিরুদ্ধে পাইরেসিজনিত কারনে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন এমন প্রশ্ন করাও স্বাভাবিক।
এরও স্পষ্ট উত্তর দেয়া কঠিন। বরং অনুমান করা যায়, বাংলাদেশ সফটঅয়্যারে কারো প্রতিদ্বন্দি না। সবাই জানে এদেশ সফটঅয়্যার নিয়ে মুখে যত কথাই বলুক, সেকাজ করার মত ব্যবস্থা নেই। শেখার ব্যবস্থা নেই, কাজ করার সুযোগ নেই, দক্ষতা যাচাইয়ের যায়গা নেই। যার শক্তি নেই তাকে বাধা দেয়ারও প্রয়োজন নেই। বরং এভাবেই থাকুক।
এককথায় সবকিছুর কারন একটাই। সফটঅয়্যারে কিছু করা, দক্ষতা বাড়ানো বলুন আর ফ্রিল্যান্সিং বা ক্লিক করে টাকা আয়ই বলুন, হাতপা যখন বাধা তখন বাংলাদেশকে নিয়ে কেউই মাথা ঘামাচ্ছে না। মুখে দুচারটা ভাল কথা, সে-তো খুব সহজ কাজ। তাতে যদি চুপ করিয়ে রাখা যায়।
সরকারের পরিকল্পনার আসলে কমতি নেই। আরো সাবমেরিন কেবল বসানো হবে। বিশ্ব যখন ফোরজি ব্যবহার করছে সেখানে বলা হচ্ছে কোনো একদিন থ্রিজি লাইসেন্স দেয়া হবে। যে ওয়াইম্যাক্স চালু করা হয়েছে তার নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না ঢাকা শহরের মাঝখানে। যদিও ফুটপাতে বসে কানেকশন বিক্রি করা হচ্ছে দেদারসে।
এসব কিছুতে বিভ্রান্ত মাঝের সেই দলটি, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় করতে চান। তাদের সংখ্যা কত অনুমান করা কঠিন। হয়ত বহু লক্ষ। কিন্তু ৩০ লক্ষ শেয়ার ব্যবসায়ী যখন সেখানে জালিয়াতি করা কাউকে দোষি বানাতে পারেনি সেখানে লক্ষ হোক আর কোটিই হোক, কার কি যায় আসে ?
বরং যদি সত্যিকার অর্থেই কাজ করতে আগ্রহি হন তাহলে প্রথমেই জেনে রাখা ভাল, আগের কাজ আগে। বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবহার করে পিটিসি সাইট ওপেন করে ক্লিক করাও কষ্টকর। সেখানে অন্য কাজের জন্য ফাইল আপলোড-ডাউনলোড করতে চাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধনীর দলে যোগ দিতে হবে। পেপল যখন নেই তখন বিদেশী ক্রেডিট কার্ডধারী হতে হবে। নইলে দুরে থাকাই ভাল।
কাজ করার পর শুধুমাত্র ইন্টারনেটের কারনে পাঠানো যাচ্ছে না এটা মেনে নেয়া কষ্টকর।
No comments:
Post a Comment