Saturday, July 21, 2012

ফ্রিল্যান্সিং কাজে নিজে শেখা কতটা জরুরী


মোপাসাকে অনেকে বলেন ছোটগল্পের জনক। ছোটবেলা থেকেই তিনি সাহিত্যে আগ্রহি। তার মায়ের একজন বন্ধু ছিলেন তখন তামকরা সাহিত্যিক। তাকেই ধরলেন কিভাবে সাহিত্যিক হওয়া যায় জানার জন্য। তিনি তারহাতে মোটা একটা বই দিয়ে বললেন আগে সেটা মুখস্ত করতে হবে। বইটা ছিল ডিকশনারী এবং তিনি সেটা মুখস্ত করেছিলেন।
তিনি অবশ্যই ডিকশনারী মুখস্ত করে সাহিত্যিক হননি। সেটা হওয়া যায় না। কিন্তু অন্যভাবে দেখলে, তিনি কখনো এমন কোন শব্দ ব্যবহার করেননি যা ডিকশনারীতে নেই। বস্তুত ডিকশনারীতে যত শব্দ থাকে তার সামান্য অংশ ব্যবহার করেই সাহিত্য রচনা হয়।
শেখার প্রসংগে বিষয়টি এভাবে শুরু করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিকশনারীর ভুমিকা তুলে ধরা। কেউই ডিকশনারী মুখস্ত করেন না, প্রয়োজনের সময় দেখে নেন। তারপরও যে কেউ মনে করতে পারেন তিনি সমস্ত শব্দ জানেন। অন্তত জানার মত যায়গা আছে।
যারা সফটঅয়্যার তৈরী করেন তারা অনেকটা সময় ব্যয় করেন ডকুমেন্টেশন নামের লেখালেখির কাজে। প্রতিটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের কয়েকটি বই (ছাপা অথবা ইলেকট্রনিক) তৈরী করা হয়। যেমন ইউজার গাইড, রেফারেন্স গাইড ইত্যাদি। তাদের উদ্দেশ্য যিনি প্রোগ্রামার হতে চান তিনি প্রথমে ইউজার গাইড পড়বেন। জেনে নেবেন একটি প্রোগ্রাম কিভাবে তৈরী হয়। এরপর বাস্তব কাজ করার সময় হাতের কাছে রেফারেন্স গাইড রাখবেন। কোন কমান্ড/ষ্টেটমেন্ট  কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তার সবধরনের অপশন উদাহরন সহ দেয়া আছে। কাজেই শেখা বলতে মুলত রেফারেন্স গাইড ব্যবহার করতে শেখাটাই প্রয়োজন।
এবারে কাজের উদাহরন দেখা যাক। আপনি ওয়েবসাইট তৈরী করতে চান। আপনি নিশ্চয়ই এইচটিএমএল, পিএইচপি, সিএসএস এর সমস্ত কিছু মুখস্ত করতে পারেন না। আপনার শেখা প্রয়োজন এগুলি ব্যবহারের ধরন কি। প্রোগ্রামিং এর ভাষায় বলা হয় সিনট্যাক্স। অনেকটা ভাষার ক্ষেত্রে ব্যাকরনের মত। একবার বাক্যগঠন শিখলে যে কোন কিছুই লিখতে পারেন।
এরপর কাজের সময় আপনার যা জানা প্রয়োজন তার উদাহরন দেখে নিন রেফারেন্স গাইড থেকে।
অনেকে বলবেন আমি যেভাবে চাই সেভাবে উদাহরন দেয়া নেই। প্রোগ্রামারদের এটা এক বিশাল সমস্যা। কোথাও আটকে গেলে সমাধান বের করতে বহু পরিশ্রম করতে হয়। অনেক সময় সমাধান পাওয়া যায় না।
বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে এর সমাধান অনেকটাই সহজ। আপনাকে অন্যের কাঝে ধর্না দিতে হয় না। ইন্টারনেটে সার্চ করে যে কোন বিষয়ে পরামর্শ পেতে পারেন। সেটাও যদি না পান তাহলে রয়েছে প্রতিটি বিষয়ের ফোরাম। সেখানে সমস্যা জানিয়ে দিন, কেউ না কেউ সমাধান দেবেন।
বাংলাদেশে সাধারন একটি মানসিকতা, কেউ একজন একবার দেখিয়ে দিলেই অমুক কাজ শিখে ফেলতাম।
ভাল শিক্ষক, ভাল প্রতিস্ঠান এসবের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। একজন যোগ্য শিক্ষক ভালভাবে পথ দেখাতে পারেন। তারপরও, তার কাজ পথ দেখানো। পথ চলার দায়িত্ব শিক্ষার্থীর।
এরসাথে যদি ভাল শিক্ষক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট যোগ হয় তাহলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।
প্রোগ্রামিং তো বটেই, গ্রাফিক ডিজাইন,এনিমেশন, ভিডিও যে বিষয়েই কাজ করুন না কেন, সফটঅয়্যার নির্মাতার তথ্য সবসময়ই গুরুত্বপুর্ন। আগে হেল্প নামের এই ব্যবস্থা সফটঅয়্যারের সাথেই থাকত, বর্তমানে অনেকেই একে শুধুমাত্র ইন্টারনেট থেকে ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছেন। ফলে অনেকের জন্যই এগুলি ব্যবহার করা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে (ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি অত্যন্ত অপছন্দ করি। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরনো ভার্শন ব্যবহার করি শুধুমাত্র এই কারনে)।
বাংলায় বলা হয় সুশিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই স্বশিক্ষিত। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কথাটি শতভাগ সত্য। ফ্রিল্যান্সার একাজ কাজ করবেন, প্রয়োজনের সময় পরামর্শ দেয়ার কেউ থাকবে না। কাজেই সমাধান রেফারেন্স এবং ইন্টারনেট। এগুলি ব্যবহারে যত দক্ষ হবেন কাজেও ততটাই দক্ষতার পরিচয় প্রকাশ পাবে।

2 comments:

  1. শেখারতো কোন শেষ নাই। তারপরও কতটা শিখে কাজে হাত দেওয়া উচিত? আমি কিভাবে বুঝব আমি তৈরি কিনা?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সংবাদপত্রের অধিকাংশ বিজ্ঞাপন বক্সের মধ্যে লেখা। এটুকু শিখেই কাজ শুরু করতে পারেন।

      Delete