Sunday, July 15, 2012

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির দুই দশক, আশা এবং বাস্তবতা


কম্পিউটার সাধারন মানুষের হাতে যেতে শুরু করে দুই দশকের বেশি আগে। তারপরও সরলভাবে দুই দশক বললে হয়ত খুব ভুল হবে না। এই দুই দশকে মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কি আশা করেছে, তার কতটা বাস্তবে সম্ভব হয়েছে এবং এর কারন কি এই বিষয়গুলি তুলে ধরা হচ্ছে দুই দশকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে।
অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে, আমার সেটা জানা প্রয়োজন কি ? হয়ত সেটাই স্বাভাবিক প্রশ্ন। এবং মুল বক্তব্য সেখানেই।
একদিকে এই সম্ভাবনাময় বিষয়টি নিয়ে আশাবাদ সৃষ্টি করা হয়েছে, অন্যদিকে সুফল না পেয়ে মানুষ ক্রমেই নিস্পৃহ হয়েছে। অনেকের কাছে কম্পিউটার-ইন্টারনেট শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম। দুদশক আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং সিষ্টেম যখন কম্পিউটারাইজ করা হয় সেই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সেটা ছিল বড় ধরনের পদক্ষেপ। মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছিল এই পদ্ধতির সুবিধে সম্পর্কে। সামনে ডিসপ্লেতে দেখা যাবে কতগুলি টিকিট ফাকা আছে (বর্তমানে সম্ভবত সেই ডিসপ্লে নেই), রিটার্ন টিকিট কেনা যাবে, নির্দিস্ট বগিতে নির্দিস্ট সিট পাওয়া যাবে। টিকিট থাকা অবস্থায় নেই বলার সুযোগ থাকিবে না, কালোবাজারি বন্ধ হবে। এই পদ্ধতি আরো উন্নতির দিকে যাওয়ার কথা ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, এত বছর পরও ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী ঠেকানো যায়নি, হয়রানি বন্ধ হয়নি।
বহু মানুষ ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং নিয়ে আগ্রহি হয়েছিলেন। ব্যাংক, ব্যাবসা প্রতিস্ঠানে সমস্ত হিসেব কাষ্টমাইজ সফটঅয়্যার ব্যবহার করে করা হবে, প্রোগ্রামার সেই কাজ করার সুযোগ পাবেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উপকৃত হবেন এমনটাই আশা করা হয়েছিল। বর্তমানে ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং নিয়ে সেই আগ্রহ নেই। প্রমান, ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং শেখানোর উল্লেখযোগ্য কোন যায়গা নেই। এই যুগে অনেকে ডস ভিত্তিক সফটঅয়্যারের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সেধরনের সফটঅয়্যার দৈরী করছেন। অনেক ব্যাংকে যে সফটঅয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে তাকে হাতুড়ে প্রোগ্রামারের সফটঅয়্যার বললে খুব ভুল হয় না।
ইন্টারনেট যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করল তখন আকেটি বড় ধরনের ধাক্কা এসেছিল সারা বিশ্বে। ডট-কম বাবল নামে সেটা পরিচিত এই হুজুগের সময় এত প্রচার চালানো হয়েছে যে অলিতে-গলিতে ট্রেনিং সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। প্রধান বিষয় ছিল ওয়েব পেজ ডিজাইন এবং মাল্টিমিডিয়া। এগুলির কোর্স করলেই সাথেসাথে মিলিওনিয়ার। উন্নত দেশগুলি হাত বাড়িয়ে আছে তাদের নেয়ার জন্য।
বর্তমানে সেই প্রতিস্ঠঅনগুলি উধাও হয়ে গেছে। লক্ষ টাকা ব্যয় করে যারা কোর্স করেছিলেন তারা ভুলেও সেবিষয়ে কথা বলেন না। সার্বিকভাবে বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং শেখার আগ্রহ বিলুপ্ত হয়েছে।
তৃতীয় আরেকটি হুজুগ শুরু হয়েছে এবং এখনও টিকে আছে। সেটা হচ্ছে আউটসোর্সিং। কিছু উদ্দোক্তা জোরেসোরে শুরু করেছিলেন, এরপর বাস্তবতা দেখে একটু একটু করে সরে পড়ছেন। প্রচারনা আউটসোর্সিং থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে গেছে। এবিষয়ে প্রচার করা সহজ। আমরা বলে দিলাম, বাকি দায়িত্ব নিজের এই নিয়মে। ওডেস্কে, ফ্রিল্যান্সারের লিষ্টে বাংলাদেশ কত নম্বরে একথা গর্ব করে প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলা-টিউটর সাইটের অভিজ্ঞতা থেকে অনায়াসে বলা যায়, এদিকে সফলতার হার খুব কম। যারা আগ্রহি তাদের শেখার সুযোগ নেই, কাজে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় কাজ করার সুযোগ নেই। যারা নিজের চেষ্টায় কিছুটা সাফল্যলাভের পথে যাচ্ছেন তারা বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন দুর্বল ইন্টারনেট এবং খামখেয়ালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারনে। আশ্চর্যজনক সত্যি, ইচ্ছে এবং প্রয়োজন থাকলেও ব্যাংক একাউন্ট করা যায় না। একাউন্ট করতে প্রয়োজন ভোটার আইডি, এমন নিয়ম বিশ্বে আছে কি-না সন্দেহ। আর ব্যাংকগুলো সরকারের সব ধরনের নির্দেশ অমান্য করলেও এই নিয়ম মানবেনই। হয়রানির মজা পাওয়ার এমন সুযোগ হাতছাড়া করে কে!
সমস্তকিছুর মধ্যে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। সমস্ত প্রচারনার সাথে জড়িত কিছু বিশেষজ্ঞ। একেক সময়ে একেক বিষয়ে। ডাটা এন্ট্রি করে কত বিলিয়ন ডলার আয় হবে থেকে শুরু করে কলসেন্টার হয়ে বর্তমানে আউসোর্সিং/ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে দেশে ধনী দেশে পরিনত হওয়া পর্যন্ত সবই বলেছেন। নতুন ডাল পেলে বর্তমান ডাল ছেড়ে সেদিকে যাবেন এতে সন্দেহ নেই। সাধারনভাবে মানুষ এদের সম্পর্কে প্রশ্ন করে না। করলে হয়ত দেখতেন এরা নানা ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত। তথ্যপ্রযুক্তির বরাদ্দের শ্রাদ্ধ করা থেকে শুরু করে সরকারী কেনাকাটার ফর্মুলা তৈরী (যেন নির্দিষ্ট কোম্পানী কাজ পায়) সবই তারা করেন। একটা বিষয় ধ্রুবসত্য, যে বিষয়ে কথা বলেন সেই বিষয়ে এদের কেউ নিজে কাজ করেন না।
১০ হাজার টাকার কম্পিউটারের কথা বলে জনগনের টাকা পানিতে ফেলা হয়েছে, কেউ প্রশ্ন করেনি। তারচেয়েও চেয়ে যা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে তা হচ্ছে কোন হুজুগ তৈরী করে সরাসরি তাদের ঠকানো।
আপনি এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন না। তবে শুরু করতে পারেন। এদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। প্রতি পদক্ষেপে ট্যাক্সদাতা হিসেবে সেটা জনগনের অধিকার। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় কলপ্রতি টাকা দেবেন আর প্রশ্ন করবেন না সেটা হওয়া উচিত না।
সেইসাথে নিজের উন্নতি করার জন্য যে পথ খোলা থাকে তা হচ্ছে, হুজুগে যোগ না দিয়ে প্রশ্ন করা। যে সম্ভাবনার কথা হচ্ছে সেকাজে নিজে কতটা উপযুক্ত, চেষ্টা কতটা ইত্যাদি যাচাই করা। মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। দত দুই দশকে যা বলা হয়েছে তাতে খুব ভুল নেই। যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে বাস্তবে এদেরকে ভালকাজে লাগানো সম্ভব ছিল। সেটা যখন নেই তখন রবীন্দ্রনাথের কথা মনে করতে পারেন, আপন বুকের পাজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা চলো রে। 

2 comments:

  1. "বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং শেখার আগ্রহ বিলুপ্ত হয়েছে।" শখ আর প্রবল আগ্রহ এর মাঝে যে একটা তফাৎ আছে, তার বাস্তব প্রমাণ।

    আপনার এই পোস্ট এ আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর আছে। তাই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

    আরও একটি প্রশ্ন আছে, আমি মূলত লোগো ডিজাইনার হতে চাই। কেন হতে চাই জানি না। লোগো ডিজাইনটা মনে ধরেছে। লোগো ডিজাইন এর উপর দক্ষতা অর্জনের জন্য কোন বই বা সেরকম কিছু সাজেস্ট করলে উপকৃত হতাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. Designing a Logo Hands-On Workshop নামে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে লিনডার। ইন্টারনেটে খোজ করলে পাবেন। নির্দিষ্ট করে লোগো বিষয়ক বই কখনো পাইনি।
      এই সাইটে লোগো বিষয়ক পরামর্শ আগে দেয়া হয়েছে ভবিষ্য্যতে আরো দেয়া হবে।

      Delete