যে কোন পেশাদারী
কাজের জন্য হাতেকলমে প্রশিক্ষনের বিকল্প নেই। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার সময়
প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। একজন ফ্রিল্যান্সারকে একা কাজ করতে হয়। কোন সমস্যা হলে
সাহায্য করার জন্য কেউ নেই। সেকারনে তার দক্ষতা বেশি প্রয়োজন, যে কাজের অভিজ্ঞতা
নেই এমন কাজ করার মানষিকতা প্রয়োজন। অভিজ্ঞ কেউ প্রশিক্ষন দিয়ে সমস্যা মোকাবেলার
মানষিকতা তৈরীতে সাহায্য করতে পারেন।
বাংলাদেশে
কম্পউটার বিষয়ক ট্রেণিং নিয়ে অভিযোগ নানা ধরনের। শিক্ষার্থীর অভিযোগ এক ধরনের,
যারা প্রশিক্ষন দেন তাদের অভিযোগ আরেক ধরনের।
দুইয়ের সমম্বয়
করে কি সমাধান বের করা সম্ভব ? এই বিষয় নিয়ে এই পোষ্ট।
বাংলাদেশে
বর্তমানে কম্পিউটার ট্রেণিং জনপ্রিয় না কেন এর এককথার উত্তর, ব্যবসা হিসেবে লাভজনক
না। ২০০০ সালের দিকে সারাদেশে প্রশিক্ষন প্রতিস্ঠানের ব্যাপক উথ্থান লক্ষ করা গিয়েছিল। দেশি
প্রতিস্ঠান ছাড়াও বিদেশী প্রতিস্ঠানের শাখা-প্রশাখা গড়ে উঠেছিল সারা দেশে। অনেকের
কোর্স-ফি ছিল লক্ষাধিক টাকা। সেগুলি বন্ধ হতে বেশি সময় নেয়নি।
এই উদাহরন
বিশ্লেষনের মধ্যেই হয়ত রয়েছে সমস্যার কারন এবং সমাধান।
মানুষের মধ্যে
যখন আগ্রহ তৈরী করা যায় তখন মানুষ টাকা খরচ করে শিখতে আপত্তি করে না। মানুষ যখন
টাকা খরচ করে তখন শিক্ষাপ্রতিস্ঠান গড়ে উঠতেও সময় নেয় না। এটা উদাহরনের ভাল দিক।
আর খারাপ দিক
হচ্ছে, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষাপ্রতিস্ঠান চালু করা। যোগ্য
প্রশিক্ষকের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করা। অযোগ্য ব্যক্তি
শুধুমাত্র প্রচারের কারনে বিশেষজ্ঞে পরিণত হওয়া। সেটাই ঘটেছে, ফলে মানুষ কাজে
লাগানোর মত শিক্ষা অর্জন করেনি। একসময় বিমুখ হয়েছে, এখনো মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।
অথচ একযুগে
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি হয়েছে অনেক। মাল্টিমিডিয়া বলতে যা বুঝায়,
গ্রাফিক ডিজাইন, এনিমেশন, ভিডিও ইত্যাদির মান অনেক উচুতে। সেইসাথে ইন্টারনেটে কাজ
করার সুযোগ তৈরী হওয়ায় কাজের ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হয়েছে। এদেরকে কাজে লাগিয়ে
বর্তমানে উচুমানের শিক্ষাপ্রতিস্ঠান গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক ছিল।
বর্তমানের
ট্রেনিং সেন্টার নামের প্রতিস্ঠানগুলি বিশ্লেষন করলে সেটা না হওয়ার কারনগুলি জানা
সম্ভব।
শিক্ষাথীর
অভিযোগ, ভাল শিক্ষা প্রতিস্ঠান নেই।
এই বক্তব্যের
পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বিষয়কে জটিল করা যায়। কতটা জটিল হতে পারে একটি উদাহরন
দিয়ে দেখা যেতে পারে, পরিচিত একজন বললেন তার কিছু আইডিয়া আছে, এনিমেশন শিখে সেগুলি
দিয়ে কার্টুন বানাবেন। এখনো কম্পিউটারের সাধারন ব্যবহার শেখেননি।
এই মানষিকতা অনেকেরই।
কল্পনা এবং বাস্তবের পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করেন না। নিশ্চিতভাবেই ধরে নেয়া যায়
তিনি কোথাও শিখতে গেলে আশা করবেন কোন যাদুবিদ্যায় তাকে সেকাজ শেখানো হবে। সম্ভব না
হলে তিনি বলতে শুরু করবেন যিনি শেখাচ্ছেন তিনি নিজেই কিছু জানেন না।
শিক্ষার্থীর
আরেক অভিযোগ, অমুক যায়গায় অনেক বেশি টাকা নেয়।
একথা ঠিক যে
বাংলাদেশে অনেকের পক্ষেই বেশি টাকা ব্যয় করা সম্ভব না। কিন্তু মানের সাথে টাকার
পরিমানের সম্পর্ক আছে এটাই বা অস্বিকার করবেন কিভাবে ?
একজন দক্ষ-পেশাদার
যখন কোন কোর্স নেবেন তখন তিনি অবশ্যই হিসেব মেলাবেন একমাস কোর্স করালে যে সময় দিতে
হয়, আর সেই সময়ে কাজ করলে যা আয় হয় এই দুইয়ের। তিনি নিশ্চয়ই নিজের ক্ষতি স্বিকার
করে কোর্স করাবেন না। মুলত একারনেই অনেক পেশাদার ট্রেনিং এ আগ্রহ দেখান না।
অন্য আরেকটি
যুক্তি বিবেচনা করতে পারেন। আপনি কোন কোর্স করে ৩ মাসে দক্ষ হয়ে উঠবেন। ধরা যাক প্রতিমাসে
৩০ হাজার টাকা আয় করবেন (সারা জীবন ধরে)। এই শিক্ষালাভের জন্য ৩০ হাজার টাকা কোর্স
ফি কি বেশি মনে হচ্ছে ?
শিক্ষাপ্রতিস্ঠানের
অভিযোগ একেবারে বিপরীতমুখি। প্রথম অভিযোগ, যথেস্ট পরিমান শিক্ষার্থী নেই। দ্বিতীয়
অভিযোগ, ভাল মানের জন্য যে খরচ হয় সেটা পাওয়া যায় না।
আগ্রহের বিষয়টি
আরেকটি উদাহরন দিয়ে দেখা যাক, বাংলাদেশে মিডিয়া বিষয়ক সমস্ত কাজ ঢাকাভিত্তিক। ঢাকার
তরুনদের মধ্যে অধিকাংশই আগ্রহ দেখান কিভাবে ভিডিও থেকে পছন্দের গান আলাদা করবেন, গান
থেকে কথা বাদ দেবেন ইত্যাদি বিষয়ে। এথেকেই কমবেশি ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন ইত্যাদিতে
আগ্রহ জন্মে। ঢাকার বাইরে মিডিয়ার কাজ হয় না বলে এই প্রবনতা নেই। ঢাকা শহরে হলিউডি
ছবির চাহিদা ব্যাপক। মানুষ ইন্টারনেটে নতুন ছবির খবর নিয়ে দোকানে গিয়ে খোজ করেন।
ঢাকার বাইরে ইংরেজি ছবির অস্তিত্ব নেই। একটিমাত্র কম্পিউটার যে জীবিকা অর্জনের
বস্তু হতে পারে এই সচেতনতা তৈরী হয়নি। কম্পিউটার গেম মুলত ঢাকা শহরে জনপ্রিয় ।
ফল হিসেবে ঢাকা
শহরে কিছু শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও অন্য শহরগুলির অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাদেরকে প্রায় বিনা বেতনের প্রশিক্ষক খোজ করতে
হয়। ফল হিসেবে সমস্তকিছুই খারাপের দিকে যেতে থাকে।
এই অবস্থার
পরিবর্তন জরুরী। এই মুহুর্তে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যে প্রচারনা তাকে কাজে লাগাতে হলে
ভাল শিক্ষা প্রতিস্ঠান গড়ে ওঠা প্রয়োজন। সেখানে ভুমিকা প্রয়োজন দুপক্ষেরই।
একজন
শিক্ষার্থী প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তার কোন বিষয় শেখা প্রয়োজন, কতটা
প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিস্ঠান ব্যবসার চেষ্টা
করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা কখনোই বলে না অমুক বিষয় আপনার জন্য না। সেটা করলে
কোর্স-ফি হাতছাড়া হয়।
বাংলাদেশের
শিক্ষাব্যবস্থা নিজেকে যাচাই করার শিক্ষা দেয় না। শিক্ষাজীবন শেষ করে একজন ক্রমাগত
চাকরীর চেষ্টা করছেন অথচ একবারও জানতে চেষ্টা করেননি কি চাকরী পবেন, সেখানে কি কাজ
করতে হয়, এজন্য কি শেখা প্রয়োজন। যে অল্প কয়েকজন এপথে যান তারা খুবই ভাল করেন, বড়
অংশ সমাজ এবং ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকেন।
কোন বিষয় শিখতে
চাইলে সে সম্পর্কে ভালভাবে জেনে খরচের বিষয়টি মেনে নেয়াই ভাল। বাড়ির ভিত্তি তৈরীর
সময় যেমন খরচ কমানো বোকামী তেমনি শিক্ষার সময় খরচ কমানো অর্থ নিজের ক্ষতি করা।
অন্যদিকে যারা
পেশাদার কাজ করছেন তারা নিজে শিক্ষাপ্রতিস্ঠান গড়া বা অন্য প্রতিস্ঠানের সাথে থেকে
অন্যদের শেখানোর দায়িত্ব নিতে পারেন। সরাসরি কাজ থেকে যা আয় হয় তারথেকে তুলনামুলক কম
হলেও অনেক কারনে অন্যকে শেখানো লাভজনক। সব লাভ সরাসরি টাকার হিসেবে হয় না।
একটি সমাজের
শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দীর্ঘকালিন প্রক্রিয়া। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা এমনই
বিষয় যার ফল সাথেসাথে পাওয়া যায়। যিনি শেখাবেন এবং যিনি শিখবেন দুজনেই সরাসরি
উপকৃত হতে পারেন। যত দ্রুত এদিকে দৃষ্টি
দেয়া যায় ততই ভাল।
nice post boss.
ReplyDeletemy blog see pls :http://mktgide.blogspot.com/
জানার কোন শেষ নাই।
ReplyDeleteসকল প্রকার কম্পিউটার ট্রেনিং এর জন্য ভিজিট-
www.itbarisal.com
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সচেতনতামূলক ও উপকারী পরামর্শ দেওয়ার জন্য।
ReplyDelete