Monday, March 28, 2011

ভিডিও এডিটিং টিউটোরিয়াল : কোরেল ভিডিও ষ্টুডিও

ভিডিও এডিটিং কারো কাছে পেশা, কারো জন্য শখ, কারো প্রয়োজন বিশেষ সময়ের কাজের জন্য। পেশাদারী কাজের জন্য পেশাদারী সফটঅয়্যার। এডবি প্রিমিয়ার, এভিড কিংবা ম্যাকের ফাইনাল কাট। আর যাদের শখ কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠান জাতিয় তুলনামুলক সহজ কাজ করা প্রয়োজন তাদের জন্য মধ্যম মানের সফটঅয়্যার। কোরেল ভিডিও ষ্টুডিও (আগের ইউলিড ভিডিও ষ্টুডিও) সে হিসেবে উন্নতমানের সফটঅয়্যার। বিয়ের ভিডিও থেকে ব্যক্তিগত এডিটিং তো বটেই, অনেক পেশাদার তাদের প্রাথমিক কাজ করে নেন এটা ব্যবহার করে। 
কোরেল ভিডিও ষ্টুডিও এর সবশেষ ভার্শন ১৪। এই টিউটোরিয়ালে ১৩ ব্যবহার করা হয়েছে। কাজের পদ্ধতিতে দুইয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
প্রথমে ভিডিও এডিটিং বলতে ঠিক কি করা বুঝায় সেটা একটু জেনে নিন।


১. অপ্রয়োজনীয় ভিডিও বাদ দেয়া
যখন ভিডিও করা হয় তখন অনেক অপ্রয়োজনীয় তাতে ভিডিও থাকে। ভিডিওর শুরুতে কিংবা শেষে। কিংবা কোথাও ভিডিও ঠিকমত হয়নি, দ্বিতীয়বার করা হয়েছে। ভিডিও এডিটিং এর কাজ এই অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি বাদ দিয়ে বাকিটুকু পরপর সাজানো। প্রয়োজনে ষ্টিল ছবি, এনিমেশন ইত্যাদি যোগ করা।

২. ভিডিও ফুটেজ ঠিক করা
ভিডিওর কোথাও যদি সমস্যা থাকে, যেমন আলো কম বা বেশি, তাহলে সেটা ঠিক করা হয় এই পর্যায়ে। কোথাও কোথাও স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়। যেমন সাধারন ভিডিওর ওপর বৃষ্টির দৃশ্য যোগ করতে পারেন, দিনের ভিডিওকে রাতের ভিডিওতে পরিনত করতে পারেন কিংবা ভিডিওর রং পাল্টে দিতে পারেন। নিজস্ব ভিডিও ফিল্টার ছাড়াও প্লাগইন হিসেবে অন্য সফটঅয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. ট্রানজিশন ইফেক্ট
দুটি দৃশ্যের মধ্যবর্তী যায়গা সংযোগ করার সময় বিশেষ ইফেক্ট ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রানজিশন ইফেক্ট। যদি কোন ট্রানজিশন না থাকে তাকে বলে কাট। এক দৃশ্য থেকে সরাসরি আরেক দৃশ্যে যাওয়া। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ক্রশফেড নামের একটি ইফেক্ট। এক দৃশ্য ক্রমে মিলিয়ে যায়, আরেক দৃশ্য ক্রমে আবির্ভুত হয়। কখনো কখনো এলবামের পৃষ্ঠা উল্টানো থেকে শুরু করে নানাবিধ মজাদার বিষয়কে ট্রানজিশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জনপ্রিয় হলিউড ইফেক্ট, বরিস, এডোরেজ কিংবা এক্সপ্লোড ব্যবহার করেন অনেকেই।
ভিডিও বা ছবির সাথে মিল রেখে ট্রানজিশন ব্যবহার করতে হয়। ধারনা পাবার জন্য টিভি অনুষ্ঠান কিংবা সিনেমায় ট্রানজিশনের ব্যবহার লক্ষ্য করতে পারেন।

৪. শব্দ ঠিক করা এবং মিউজিক যোগ করা
ভিডিওর নিজস্ব শব্দে যদি কোন সমস্যা থাকে সেটা ঠিক করা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কিংবা কথা যোগ করা এই পর্যায়ের কাজ।

৫. ফাইনাল ভিডিও তৈরী
ওপরে উল্লেখ করা সবকিছু হয়ে গেলে ভিডিও কোথায় ব্যবহার করা হবে সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ভিডিও ফাইল তৈরী করতে হয়। ডিভিডির জন্য ভিডিও ফরম্যাট একরকম, টিভিতে দেখানোর জন্য আরেকরকম, ইন্টারনেটে ব্যবহারের জন্য আরেক রকম ফরম্যাট প্রয়োজন হয়। এই সফটঅয়্যারে প্রিসেট ব্যবহার করে ডিভিডি-ব্লুরে থেকে শুরু করে ইন্টারনেটে ইউটিউবে ব্যবহারের জন্য যে কোন ফরম্যাটে ভিডিও পেতে পারেন।

ভিডিও এডিটিং এর সাধারন কাজগুলি কিভাবে করবেন তা জেনে নিন;
কোরেল ভিডিও ষ্টুডিও চালূ করলে এধরনের একটি স্ক্রিন পাবেন। সফটঅয়্যারে ক্যাপচার, এডিট এবং শেয়ার নামে ৩টি মুল ভাগ রয়েছে। সাধারনভাবে এডিট অংশ ওপেন হওয়ার কথা। ক্যাপচার অংশ ব্যবহার করবেন যদি ক্যামেরা বা ভিসিআর থেকে ভিডিও নিতে হয় তাহলে। আর এডিট করার পর ফাইনাল ভিডিও তৈরীর জন্য শেয়ার অংশ ব্যবহার করবেন।

এডিট
এর নীচের অর্ধেক অংশের নাম টাইমলাইন। ভিডিও, ইমেজ, সাউন্ড ইত্যাদি এখানে বসিয়ে মুলক সব কাজ এখানেই করতে হবে।  ওপরে বামদিকে অংশ প্রিভিউ উইন্ডো যেখানে ফাইনাল ভিডিওর প্রিভিউ দেখা যাবে। ডানদিকে অংশ থেকে ফুটেজ (ভিডিও, ইমেজ) ইত্যাদি ইমপোর্টসহ ট্রানজিশন, ভিডিও ইফেক্ট ইত্যাদি সিলেক্ট করা যাবে।

ভিডিও বা ইমেজ ইমপোর্ট করুন
সহজে ভিডিও (বা ইমেজ) আনার জন্য টাইমলাইনে ভিডিও ট্রাকে (টাইমলাইনের সবচেয়ে ওপরের ট্রাক) রাইটক্লিক করুন এবং Insert Video সিলেক্ট করুন।  ব্রাউজার উইন্ডো থেকে যে ভিডিও ফাইল আনতে চান সেটা সিলেক্ট করুন। ভিডিওকে টাইমলাইনে পাওয়া যাবে এবং প্রিভিউ উইন্ডোতে দেখা যাবে।
টাইমলাইন অথবা প্রিভিউ উইন্ডো যে কোনযায়গায় মার্কার সরিয়ে ভিডিওর নির্দিষ্ট যায়গায় যাওয়া যাবে।
একাথিক ভিডিও আনার জন্য টাইমলাইনে ভিডিওর শেষে ফাকা যায়গায় গিয়ে পরবর্তী ক্লিপ আনুন। এগুলি নিজে থেকেই পরপর সাজানো হবে।

নির্দিস্ট অংশ কেটে পৃথক করুন
যে অংশ কেটে বাদ দিতে চান সেই অংশের শুরুতে মার্কার নিয়ে যান। মোটামুটি কাছাকাছি যাওয়ার পর প্রিভিউ উইন্ডোতে Previous, Next বাটন ব্যবহার করে সহজে নির্দিষ্ট যায়গায় যাবে।
নির্দিষ্ট যায়গায় যাওয়ার পর প্রিভিউ উইন্ডোতে Split Clip বাটন (কাচি চিহ্ন) ক্লিক করুন। ক্লিপটি এখানে বিভক্ত হবে।
একই ক্লিপের মধ্যে কাথাও ট্রানজিশন ব্যবহার করতে হলে সেই যায়গা এভাবে বিভক্ত করতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিন
যে অংশ বাদ দিতে চান তার শুরু এবং শেষ দুপ্রান্ত আগের পদ্ধতিতে পৃথক করার পর ক্লিপটি সিলেক্ট করে ডিলিট চাপুন।

ট্রানজিশন ব্যবহার করুন
ট্রানজিশন ব্যবহার করতে হয় দুটি ক্লিপের মাঝখানে। এজন্য প্রথমে ট্রানজিশন বাটনে ক্লিক করে ট্রানজিশন লাইব্রেরী ওপেন করুন। ট্রানজিশন লাইব্রেরীতে ট্রানজিশনগুলি বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ভাগ করা থাকে। ছবিতে F/X ওপেন করা আছে।  যে ট্রানজিশন ব্যবহার করতে চান সেই ক্যাটাকরী ওপেন করুন।
নির্দিস্ট ট্রানজিশনের ক্লিক করলে প্রিভিউ উইন্ডোজে তার প্রিভিউ দেখা যাবে। পছন্দমত ট্রানজিশনটিকে মাউস দিয়ে ড্রাগ করে দুটি ক্লিপের মাঝখানে এনে ছেড়ে দিন।

ওভারলে ট্যাক ব্যবহার
ওভারলে হচ্ছে একটি ভিডিওর ওপর অন্যকিছু ব্যবহার করা। সেটি ভিডিও, ইমেজ, ডিজাইন, টেক্সট যেকোন কিছুই হতে পারে। সাধারনত ভিডিও বা ইমেজের ট্রান্সপারেন্ট অংশ দিয়ে নিচের অংশ দেখা যায়। কিভাবে ট্রান্সপারেন্সিসহ ইমেজ ভিডিও তৈরী করতে হয় সেটা অবশ্য এই টিউটোরিয়ালের বাইরের বিষয়। ধরে নেয়া হচ্ছে এমন কিছু আপনার কাছে রয়েছে। ভিডিও ষ্টুডিও সফটঅয়্যারের সাথে কিছু ইমেজ/ভিডিও ইনষ্টল হয়। সেগুলি ব্যবহার করে দেকতে পারেন।
ইমপোর্ট করার জন্য ভিডিও ইনসার্ট করার আগের পদ্ধতিতে ওভারলে ট্রাকে (ওপর থেকে দ্বিতীয়) রাইট-ক্লিক করে ইমপোর্ট করুন।

টাইটেল ব্যবহার
টাইটেলের জন্য ট্রাক রয়েছে ওপর থেকে ৩ নম্বরে। এই ট্রাকের বৈশিষ্ট হচ্ছে এটিও ওভারলে ট্রাক। লেখা থাকলে লেখা যেমন দেখা যাবে তেমনি বাকি অংশ দিয়ে পেছনের ভিডিও দেখা যাবে।
সরাসরি ব্যবহারের জন্য লাইব্রেরীতে বেশকিছু ষ্টাইল দেয়া আছে। টাইটেল বাটনে ক্লিক করে লাইব্রেরী ওপেন করুন এবং যে ষ্টাইল ব্যবহার করতে চান তাকে ড্রাগ করে টাইটেল ট্রাকে আনুন।
টাইমলাইনে টাইটেলের ওপর ডাবল-ক্লিক করুন। এরফলে টেক্সট, ফন্ট, রং ইত্যাদি সবকিছু পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন।
মাউস ব্যবহার করে টাইমলাইনে একে যেকোনদিকে যেমন সরানো যাবে তেমনি পাশে টেনে বড় বা ছোট করা যাবে।

ভয়েস ওভার ব্যবহার
পৃথকভাবে রেকর্ড করা কথা ব্যবহারের জন্য ভয়েস ট্রাক (মাইক্রোফোনের ছবি) ব্যবহার করুন।

অডিও/মিউজিক ব্যবহার
ভিডিওর সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহারের জন্য মিউজিক ট্রাক (টাইমলাইনে সবচেয়ে নিচে) ব্যবহার করুন। এখানে রাইট ক্লিক করে নির্দিস্ট সাউন্ড ফাইল ওপেন করুন। এরপর প্রয়োজনে নির্দিস্ট যায়গায় সরিয়ে নিন।

ফাইনাল ভিডিও তৈরী করুন
ভিডিও এডিটিং সব কাজ ঠিকভাবে হয়ে গেলে ফাইনাল ভিডিও তৈরীর জন্য Share Step বাটনে ক্লিক করুন।
এখানে যে অপশনগুলি রয়েছে তা হচ্ছে, ভিডিও ফাইল তৈরী করা, শুধুমাত্র শব্দ পৃথক করা, ডিস্ক তৈরী (ডিভিডি-ব্লু-রে)। এছাড়া ইউটিউব ভিডিও কিংবা ডিভি টেপে রেকর্ড করা যাবে সরাসরি। এদের মধ্যে ডিস্ক তৈরীর কমান্ড ব্যবহার করলে ডিভিডি মুভি ফ্যাক্টরী নামে ডিভিডি অথরিং সফটঅয়্যার ওপেন হবে।
সাধারনত আপনার কাজ হবে ভিডিও ফাইল তৈরী করা।
এজন্য Create Video File ক্লিক করুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় ফরম্যাট সিলেক্ট করুন।
সেভ করার জন্য ফোল্ডার সিলেক্ট করতে বললে পর্যাপ্ত যায়গা আছে এমন ড্রাইভে নির্দিস্ট ফোল্ডার সিলেক্ট করুনএবং নাম টাইপ করে দিন।    
সেভ বাটনে ক্লিক করলেই আপনার ফাইনাল ভিডিও তৈরী হবে।

কম্পিউটারের পারফরমেন্স এবং ভিডিও ধরন, বিভিন্ন ধরনের ইফেক্ট, ট্রানজিশন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে রেন্ডারিং নামের ফাইনাল ভিডিও তৈরীর কাজের জন্য।

মুল বিষয় এটুকুই। গ্রাফিক, ফিল্টার ইত্যাদি পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়নি কারন কাজের পদ্ধতি একই। আপনি নিজেই সেগুলি শিখে নিতে পারেন।

No comments:

Post a Comment