Tuesday, April 26, 2011

এডবি ইনডিজাইন টিউটোরিয়াল

যদি দুপৃষ্ঠার একটি লিফলেট তৈরী করা প্রয়োজন হয় যেখানে আকর্ষনীয় ষ্টাইল থাকবে, আপনি বলতে পারেন সেটা ইলাষ্ট্রেটরে করে নেব। কিংবা যদি ১০০ পৃষ্টার পত্রিকা কিংবা ৩০০ পৃষ্ঠার বই সাজানো প্রয়োজন হয় তখনও বলতে পারেন সেকাজ মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে করে নেব।
সমস্যা হচ্ছে, ইলাষ্ট্রেটরে আপনি দুপৃষ্ঠার কাজ করতে পারেন তাতে সমস্যা নেই, ২০ পৃষ্ঠার কাজ করতে পারেন না। আর ওয়ার্ডে যদি পত্রিকা কিংবা বই এর কাজ করার চেষ্টা করেন কয়েক ঘন্টা চেষ্টার পর হাল ছেড়ে দেবেন। অন্তত পেশাদার পত্রিকা কিংবা বইয়ের মত ফল যদি চান।
এই দুইয়ের মাঝামাঝি কাজের জন্য ইনডিজাইন (InDesign)। একজময় পেজমেকার (Pagemaker) নামে একটি সফটঅয়্যার অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। একসময় ইনডিজাইন নামে আরেকটি সফটঅয়্যার চালু করে এডবি। বর্তমানে এটাই প্রচলিত।
ওয়ার্ডে কাজটি কেন করা যাবে না জানার আগে পেজ-মেকিং বিষয়টি কি একটু জেনে নেয়া যাক।
আপনি মুল টেক্সট টাইপ করবেন ওয়ার্ডে। এরপর কোন পেজমেকিং সফটঅয়্যারে (ইনডিজাইন হতে পারে, কিংবা হতে পারে কোয়ার্ক এক্সপ্রেস, Quark Xpress) এনে তাকে ছাপানো বইয়ের চেহারা দেবেন। বইতে যেভাবে মার্জিন, হেডার-ফুটার, পেজ নাম্বারিং ইত্যাদি থাকে সেগুলি দেবেন, ইমেজ-ইলাষ্ট্রেশন যোগ করবেন, প্রয়োজনে সেখানেই কিছু একে নেবেন। কাজগুলি ওয়ার্ডে করা যায় তাত্ত্বিকভাবে। বাস্তবে একটি পেজে মার্জিনের সাথে মিল রেখে নিখুতভাবে প্যারাগ্রাফ সাজানো যায় না। ওয়ার্ড সফটঅয়্যারকে সহজ করার কারনে এমনকিছু ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যে সে নিজেই কিছু কাজ করে দেয়। আর সেটাই সমস্যা হয়ে দাড়ায় পেশাদারদের জন্য। ইনডিজাইনে আপনি একটি পেজ ষ্টাইল ঠিক করবেন, আর সেটা ব্যবহার হবে সব পেজে।
অর্থাত ইনডিজাইন ব্যবহারের সময় ব্যবহারকারী পাবেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন, আর সে কারনেই এর ব্যবহার ওয়ার্ড থেকে কিছুটা কঠিন। যাচাই করতে চাইলে উচুমানের একটি বই কিংবা পত্রিকা সামনে রেখে ওয়ার্ডে করার চেষ্টা করতে পারেন।
শুধু বই-পত্রিকা-লিফলেট-নিউজলেটার-ক্যাটালগ-ম্যানুয়ালই না,  সিডি-ডিভিডি লেবেন, বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে ইন্টারএকটিভ প্রেজেন্টেশন তৈরী করা যাবে ইনডিজাইনে। কিংবা ওয়েবসাইট। পেজ কেমন হবে সেটা ঠিক করবেন, টেক্সট টাইপ করবেন অথবা ইমপোর্ট করবেন, ইমেজ আনবেন, ড্রইং যোগ করবেন, টেবিল তৈরী করবেন। কাজ শেষ হলে নিজেই প্রিন্ট করবেন কিংবা প্রেসে দেবেন কিংবা পিডিএফ হিসেবে ই-বুক তৈরী করবেন।
ইনডিজাইন এডবি সিএস এর একটি সফটঅয়্যার। কাজেই এরসাথে এডবি ব্রিজ এবং ফটোশপ, ইলাষ্ট্রেটর, ফ্লাশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে খুব সহজে।
ইনডিজাইনে কিভাবে কাজ শুরু করবেন সেটা দেখে নেয়া যাক প্রথম টিউটোরিয়ালে।
ইনডিজাইন প্রথমবার চালূ করলে একটি ডায়ালগ বক্স পাওয়া যাবে। এখানে আপনি নতুন ডকুমেন্ট, আগের ডকুমেন্ট ওপেন করা ইত্যাদি অপশন পাবেন। ইচ্ছে করলে এই ডায়ালগ বক্স পরবর্তীতে না দেখার ব্যবস্থা করতে পারেন Don’t show again অপশন সিলেক্ট করে।
ডায়ালগ বক্স বন্ধ করলে এধরনের একটি ফাকা স্ক্রীন স্ক্রীন পাওয়া যাবে। ইনডিজাইন ওয়ার্ডের মত নিজে থেকে ডকুমেন্ট তৈরী করে না।

নতুন ডকুমেন্ট তৈরী
.          ডকুমেন্ট তৈরী জন্য মেনু থেকে কমান্ড দিন, File – New – Document
New Document ডায়ালগ বক্স পাওয়া যাবে
.          ডকুমেন্ট কোথায় ব্যবহার করা হবে (প্রিন্ট অথবা ওয়েব), ডকুমেন্টের পৃষ্ঠাসংখ্যা (পরবর্তীতে পরিবর্তন করা যাবে), শুরু পেজ নাম্বার (যদি ভাগ ভাগ করে তৈরী করা হয়), কাগজের মাপ, ওরিয়েন্টেশন (পোর্ট্রেট বা ল্যান্ডস্কেপ), কলামের সংখ্যা, মার্জিন ইত্যাদি বলে দেবেন এখানে।
.          সবকিছু ঠিক করার পর বাটনে ক্লিক করলে ফাকা ডকুমেন্ট তৈরী হবে । এখানে সিএস৫ ভার্শন স্ক্রীন দেখানো হয়েছে।

অন্যান্য সফটঅয়্যারের মত এখানে ওপরে রয়েছে মেনুবার। বামদিকে ফটোশপ টুলবক্সের মত টুলস প্যানেল। মাঝখানে ডকুমেন্ট এলাকা। আর ডকুমেন্ট এবং মেনুবারের মাঝখানে পুরো যায়গা জুড়ে রয়েছে কন্ট্রোল প্যানেল। টেক্স, ইমেজ বা অন্য যাই হোক না কেন, তার সবধরনের পরিবর্তন করা যাবে এই কন্ট্রোল প্যানেল থেকে।
টুলস প্যানেল থেকে জুম টুল ব্যবহার করে এখানে জুমকরা যাবে (ক্লিক করলে জুম ইন Alt-করলে জুম আউট)। ফটোশপের মত এখানেও জুম ইন/আউট এর জন্য একই কিবোর্ড শর্টকাট Ctrl – Num+/-        ব্যবহার করা যাবে। প্যান করার জন্য (ডকুমেন্ট সরানো) স্পেসবার চেপে মাউস ব্যবহার করে ড্রাগ করা যাবে।

টেক্সট ব্যবহার
ইনডিজাইনের ভেতরে টেক্সট টাইপ করা যেতে পারে অথবা ওয়ার্ড এর মত সফটঅয়্যারে টাইপ করে তাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
.          টেক্সট ব্যবহারের জন্য টেক্সট টুল সিলেক্ট করুন।
.          ডকুমেন্টে ড্রাগ করে টেক্সট বক্স তৈরী করুন। টেক্সট বক্সের মধ্যে টাইপিং কার্সর পাওয়া যাবে।
.          টাইপ শুরু করুন, অথবা ওয়ার্ড ডকুমেন্ট থেকে ব্যবহারের জন্য মেনু থেকে কমান্ড দিন, File – Place
.          নির্দিস্ট ফোল্ডার থেকে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট সিলেক্ট করুন এবং ইমপোর্ট করুন।
.          যদি পুরো টেক্সট বক্সের থেকে বেশি হয় তাহলে বক্সের নিচে ডানদিকে একটি লাল প্লাশ (+) চিহ্ন দেখা যাবে।  একে আরেকটি টেক্সট বক্সের সাথে যোগ করলে বাকি লেখাটুকু সেই টেক্সট বক্সে পাওয়া যাবে। এবং অবশ্যই টেক্সট বক্স বড় করে পুরো লেখা সেখানে ব্যবহার করা যায়।

টেক্সট বক্স পরিবর্তন
টেক্সট বক্সকে এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় সরানো কিংবা আকার বড়-ছোট করার জন্য
.          সিলেকশন টুল সিলেক্ট করুন।
.          টেক্সট বক্সে ক্লিক করে সিলেক্ট করুন।
.          ড্রাগ করে টেক্সট বক্স সরান অথবা চারিদিকের হ্যান্ডলার ব্যবহার করে বড় কিংবা ছোট করুন।
.          টেক্সট বক্সকে নিখুত মাপ দেয়ার জন্য কিংবা পার্সেন্টেজ হিসেব বড় করা কিংবা ছোট করা, কিংবা ঘুরানো বা বাকা করা ইত্যাদি কাজ কন্ট্রোল প্যানেল (ডকুমেন্ট এবং মেনুবারের মাঝখানে) থেকে করা যাবে।

টেক্সট পরিবর্তন
টাইপ করা বা ইমপোর্ট করা লেখার কোন পরিবর্তন করা, ফন্ট টাইপফেস কিংবা ফন্টসাইজ পরিবর্তন কিংবা লেখাকে বোল্ড-ইটালিক-আন্ডারলাইন-রং-ঘুরানো ইত্যাদি অনেককিছুই প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য;
.          টেক্সট টুল সিলেক্ট করুন।
.          টেক্সট বক্সে ক্লিক করুন। কন্ট্রোল প্যানেলে টেক্সট পরিবর্তনের সব ধরনের টুল পাওয়া যাবে।


এক টেক্সট বক্সের বাকি টেক্সট অন্য টেক্সট বক্সে ব্যবহার
টেক্সট বক্সের ধারনক্ষমতার থেকে বেশি টেক্সট থাকলে তাকে নির্দিস্ট আরেকটি টেক্সট বক্সের সাথে যোগ করে দিতে পারেন।
.          প্রয়োজনে নতুন আরেকটি টেক্সট বক্স তৈরী করুন।
.          আগের টেক্সট বক্সের লাল রঙের ফ্লাশ চিহ্নে ক্লিক করুন। কার্সরের সাথে টেক্সট আইকণ দেখা যাবে।
.          নতুন টেক্সট বক্সের ওপরে বামদিকে একই ধরনের ফাকা একটি বক্স দেখা যাবে। মাউস পয়েন্টারকে নতুন টেক্সট বক্সের বক্সে এনে ক্লিক করুন।

আগের বক্সের বাকি লেখাটুকু পরবর্তী বক্সের সাথে যোগ হবে। দুটি টেক্সট বক্স পৃথক দেখা গেলেও কাজ করবে একটি টেক্সট বক্সের মত।

1 comment:

  1. ভাইয়া, আপনাকে অনেক অনেক থেঙ্কস। এত নাইছভাবে ক্লিয়ার ধারণা দেয়ার জন্য।

    ReplyDelete