Saturday, July 9, 2011

বাংলাদেশে ব্লগ এবং ফেসবুক-টুইটার ব্যবহার

বাংলাদেশে ব্লগিং বিষয়টি খুব জনপ্রিয় না একথা জানার জন্য পরিসংখ্যান প্রয়োজন নেই। ব্লগ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এমন কারো নাম উল্লেখ করা কঠিন। এমনকি ফেসবুক-টুইটারে লক্ষ বন্ধু কেন, হাজার ভক্ত রয়েছে এমন ব্যক্তি পাওয়া কঠিন। সারা বিশ্ব যখন সোস্যাল নেটওয়ার্কিং নিয়ে মাতামাতি করছে তখন বিষয়টি একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় থাকে না। অনেক দেশেই বহু মানুষের জন্য ব্লগিং পেশা। একে টিভি চ্যানেল কিংবা সবাদপত্রের মত ব্যবহার করে আয় করা যায়। তারপরও বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দুর হয়নি।
এর কারন কি সে নিয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। একটি বিষয় লক্ষনীয়, ব্লগ এবং ভিজিটর এই দুয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক নেই। সুসম্পর্ক বলতে বলা হচ্ছে ভিজিটর হয়ত নিয়মিত কোন ব্লগে যান, তাতে অংশ নেন না। যেকারনে অনেক দেশে কোন পোষ্ট প্রকাশ করার সাথেসাথে শতশত কমেন্ট যোগ হতে থাকে, সেখানে বাংলা ব্লগে কোন কমেন্ট চোখে পড়ে না। যদিও ব্লগের পরিসংখ্যান বলছে সেই পোষ্ট পড়েছেন অনেকে।
ব্লগে মন্তব্য (কমেন্ট) লেখা অনেক কারনে গুরুত্বপুর্ন। একদিকে ব্লগকে বলা আমি অমুক ধরনের পোষ্ট আশা করি, আরো উন্নত কিছু চাই, আরো বিস্তারিত চাই ইত্যাদি। এতে ব্লগের উন্নতি ঘটে। অন্যদিকে সেই ব্লগের পরিচিতি বাড়ে। ফলে প্রকৃতপক্ষে শেষপর্যন্ত উপকৃত হন ব্লগনির্মাতা এবং ভিজিটর দুপক্ষই। সমস্যা হয় যখন মন্তব্যে কি লিখতে হবে, কিভাবে লিখতে হবে সেটা জানা না থাকে।
মন্তব্য লেখার জন্য সাধারন কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। অনেক ব্লগে নিয়ম উল্লেখ করা থাকে। সেগুলি একবার জেনে নিন;
.          এক শব্দের মন্তব্য লিখবেন না। যেমন, ভালো, খারাপ, ধন্যবাদ এই শব্দগুলি আপনার বক্তব্য প্রকাশ করে না। কেন ভাল, কেন খারাপ এই বিষয়গুলি উল্লেখ করবেন।
.          বানিজ্যিক কারনে করা মন্তব্য গ্রহন করেন না অনেকেই। যেমন মন্তব্যের সাথে কোনকিছুর প্রচার, নিজের সাইটের লিংক ইত্যাদি থাকলে সেগুলি স্প্যাম কমেন্ট হিসেবে ধরা হয়।
.          অপ্রাসংগিক বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। ব্লগপোষ্টের যা মুল বিষয় শুধুমাত্র সেই বিষয়ে সেখানে মন্তব্য করবেন।
.          খুব বড় মন্তব্য অনেকে গ্রহন করেন না। কখনো কখনো অবশ্যই কিছু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন হতে পারে, তাহলেও যতটা সম্ভব অল্প কথায় মন্তব্য লিখতে হয়।
.          অন্যকে আক্রমন করে বক্তব্য, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার ইত্যাদি সাধারন নিয়মের পরিপন্থী।
.          ব্লগ বা ব্লগারের কোনকিছু ভিজিটরের অপছন্দ হতে পারে। সেক্ষেত্রেও আক্রমনাত্মক কিছু না বলা। ঠিক কি কারনে অপছন্দ সেটা জানানোই যথেষ্ট।
বিষয়গুলি উল্লেখ করা হল কারন বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্লগে মন্তব্য লক্ষ্য করলে এই নিয়মের ব্যতিক্রম খুব বেশি চোখে পড়ে। কারো সমালোচনা কিংবা আক্রমন করা মন্তব্য সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগ প্রথম-আলোয় রাজনৈতিক বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরন। ধরে নিতে পারেন সেখানে যে মন্তব্য করা হয় তার বড় অংশ বাদ দেয়া হয়, তারপরও যা থাকে সেটা দৃষ্টিকটু।
এখানে যে নিয়মগুলি উল্লেখ করা হল এবং যেভাবে করা হল তাতে মনে করা স্বাভাবিক সমস্ত দোষ ভিজিটরের। তারা মন্তব্য করতে চান না, কিংবা নিয়ম না মেনে মন্তব্য করেন।
বাস্তবে বহু ভিজিটরের মন্তব্য সংক্ষিপ্ত হলেও ষ্পষ্টতই তার আগ্রহ ধরা পড়ে, বড় মন্তব্য লিখে অনেকে আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন, কোনকিছু ব্যাখ্যা করেন। এগুলি ব্লগের পেছনে যারা রয়েছেন তাদেরকে উতসাহিত করে।
মন্তব্য কম থাকার পেছনে মন্তব্য করার পদ্ধতিও আরেকটি বিষয়। শুরুতেই যেমন বলা হয়েছে ফেসবুক-টুইটার এর মত সাইটের ব্যবহার কম। অনেক ক্ষেত্রেই মন্তব্য লেখার জন্য নিজের পরিচিতি ব্যবহার করতে হয়। কখনো শুধুমাত্র ইমেইল থাকাই যথেষ্ট, কখনো গুগল, ইয়াহু, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি আইডি ব্যবহার করতে হয়। সেগুলি না থাকলে মন্তব্য করার সুযোগ থাকে না।  কোন কোন ব্লগে মন্তব্য বিষয়টি সহজ রাখতে নিজের পরিচয় না জানিয়ে মন্তব্য করার সুযোগ দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভুত মন্তব্য বেশি চোখে পড়ে।
আরেকটি বিষয় হয়ত অনেকেই লক্ষ্য করেন না, আপনার মন্তব্য ছাপা হবে কি হবে না সেটা নির্ভর করে বিষয়টি যার দায়িত্ব রয়েছে তার ওপর। তিনি অনুমোদন দেয়ার পর মন্তব্য ছাপা হবে। যদি সরাসরি ছাপার ব্যবস্থা রাখা হয় তাহলেও যে কোন সময় তিনি সেটা বাতিল করতে পারেন।
আপনার মত জানান। আরো বেশি করে অংশ নিন।

No comments:

Post a Comment