বছর দশেক আগে বাংলাদেশে সিডি ভিত্তিক বাংলা মাল্টিমিডিয়া বেশ জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে শিশুদের জন্য শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের টিউটোরিয়াল। বিষয়টি সামনের দিকে যায়নি বেশকিছু কারনে। প্রধানত পাইরেসি বন্ধ করা হয়নি, ফলে নির্মাতা খরচের টাকা ফেরত পাননি। খরচ কমাতে গিয়ে মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে এবং অন্যদিকে ভিডিওভিত্তিক প্রেজেন্টেশন জনপ্রিয় হয়েছে। বর্তমানে টিউটোরিয়াল নামের যে মাল্টিমিডিয়া বাজারে পাওয়া যায় তার সবই স্ক্রীন রেকর্ড করা ভিডিও।
শিশুদের জন্য শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়া বা গেম তৈরী করার সময় ইন্টারএকটিভিটি একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়। ব্যবহারকারী কোথাও ক্লিক করবে, মাউস ব্যবহার করে কোথাও কিছু আকবে, কোথাও প্রশ্নের উত্তর টাইপ করে দেবে। একাজগুলি করার জন্য আদর্শ সফটঅয়্যার এডবি ডিরেক্টর। ডিকে মাল্টিমিডিয়া সহ বিশ্বের বেশকিছু কোম্পানী এরই মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া তৈরী করছে।
বছর দশের আগের মাল্টিমিডিয়াগুলির প্রায় সবই তৈরী হত ডিরেক্টর ব্যবহার করে। সফটঅয়্যারটির কথা মানুষ প্রায় ভুলে গেছে আরো একটি কারনে। এর মালিকানা ম্যাক্রোমিডিয়ার বদলে এডবির হাতে এবং এডবি ক্রিয়েটিভ স্যুইট (সিএস) এর সাথে ফ্লাশ, ড্রিমওয়েভার ইত্যাদি যোগ করলেও এই সফটঅয়্যারটি ব্যবহার করতে হয় পৃথকভাবে।
ডিরেক্টর সম্পর্কে আরেকটি কথা উল্লেখ করতে হয়। শুরুতে এখানে ভেক্টর এনিমেশনের ব্যবস্থা ছিল সামান্যই। নির্মাতা ম্যাক্রোমিডিয়া একে পৃথক করে ফ্লাশ নামে আরেকটি সফটঅয়্যার তৈরী করে। বর্তমানে ফ্লাশের পরিচিতি নিশ্চয়ই বলে দেয়া প্রয়োজন হয় না।
ডিরেক্টর এর পরিচিতি এটা মাল্টিমিডিয়া অথরিং সফটঅয়্যার। ইমেজ, ভিডিও, মিউজিক, টেক্সট ইত্যাদি ব্যবহার করবেন, ইন্টারএকটিভিটি যোগ করবেন। এরপর তাকে ব্যবহার করবেন সিডি-ডিভিডির মত ডিস্কভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া হিসেবে কিংবা প্রেজেন্টেশন হিসেবে অথবা ওয়েবপেজ হিসেবে।
তুলনা করুন মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টের সাথে। সেখানে খুব সহজে যে কোন ধরনের মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন, তাকে আরো উন্নত করতে পারেন ভিজ্যুয়াল বেসিক কোড ব্যবহার করে। ডিরেক্টরের জন্য রয়েছে নিজস্ব স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ লিংগো। এটা সি এর মতই শক্তিশালী। বাজারে অনেক থ্রিডি গেম পাওয়া যায় ডিরেক্টর দিয়ে তৈরী।
এর সত্যিকারের ব্যবহার শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এনসাইক্লোপিডিয়া এবং মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত ডি-কে এই সফটঅয়্যার ব্যবহার করে। ইউনিসেফ তাদের মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন তৈরী করেছে ডিরেক্টর ব্যবহার করে (তৈরী হয়েছে ভারতে)। এছাড়া বিজনেস প্রেজেন্টেশনের জন্য এর ব্যবহার অন্যান্য সফটঅয়্যারের থেকে বেশি। আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলির বিভিন্ন পন্যের পরিচিতিমুলক সিডি-ডিভিডি দুধরনের হয়, পুরোপুরি ভিডিও অথবা ইন্টারএকটিভ মাল্টিমিডিয়া। মাল্টিমিডিয়াগুলি তৈরী ফ্লাশ এবং ডিরেক্টর ব্যবহার করে। দুটি সফটঅয়্যারের উতস যেহেতু এক, দুটিকেই একসাথে ব্যবহার করা যায় খুব ভালভাবে।
শিক্ষামুলক, বিনোদনমুলক, সচেতনতামুলক বা ব্যবসায়িক তথ্য পরিবেশন করার জন্য খুব সহজেই আদর্শ টুল হিসেবে ব্যবহার হতে পারে এই সফটঅয়্যার। যদিও একথা ঠিক আপনি নিজে কাজ করে বাজারজাত করার দশ বছর আগের সমস্যা এখনও থেকে গেছে, কিংবা আরো বেড়েছে। তারপরও বর্তমানে অনলাইনে আউটসোর্সিং কাজ করা সম্ভব কিংবা বিভিন্ন প্রতিস্ঠানকে নমুনা দেখিয়ে এধরনের প্রচারনায় উতসাহ দেয়াও সম্ভব। শুধুমাত্র কাজে দক্ষতা অর্জন করাই যথেষ্ট না, পরিবেশ যখন বিপক্ষে তখন পরিবেশ তৈরীর দায়িত্বও এসে যায়।
আগামীতে ডিরেক্টর ব্যবহার করে কাজ করার বিষয়গুলি উল্লেখ করা হবে। আপাতত ডিরেক্টর ব্যবহারের জন্য কি প্রয়োজন একবার জেনে নিন।
এডবির কথা অনুযায়ী ডিরেক্টর ১১ ব্যবহার করতে ৬০০ মেগাহার্টজ প্রসেসরের কম্পিউটার, ৫১২ মেগাবাইট মেমোরী, হার্ডডিস্কে ৫০০ মেগাবাইট যায়গা, সার্ভিস প্যাক ২ সহ এক্সপি বা পরের কোন ভার্শন উইন্ডোজ ইত্যাদি থাকতে হবে।
No comments:
Post a Comment