Tuesday, October 18, 2011

বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটে আয় সহজ না কেন

ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে কাজ করার প্রবনতা এবং প্রচার এত দ্রুত বাড়ছে যে অনেকেই বলছেন আগামীতে এটাই হবে কর্মসংস্থানের পথ। অন্যকথা এটাই হবে আগামী দিনের কর্মপদ্ধতি। যেখানে প্রতিস্ঠানগুলি বেতনভোগি কর্মচারী না রেখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করাবে। বাংলাদেশে বিষয়টি দ্রুত পরিচিতি লাভ করছে সেটা বোঝা যায় এবিষয়ে ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের উপস্থিতি দেখে। তারপরও বাস্তবে কাজ খুব এগোচ্ছে না। এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলি কারন।
একবার দেখে নেয়া যাক সেগুলি কি কি।


সরকারের এবং ব্যাংকের অসহযোগিতা
সরকারের অসহযোগিতা না বলে বাধা শব্দটি ব্যবহার করলে বেশি বলা হয় না। একদিকে সরকার বলছেন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে, অন্যদিকে সরকারের নীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ইন্টারনেট-বিদ্যুত ইত্যাদি সম্পুর্ন বিপরীত। রীতিমত মানুষকে চেপে রাখা হয়েছে যেন কোনভাবেই কেউ কাজ করতে না পারে। সামান্য কয়েকটি উদাহরন এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
ইন্টারনেটে আয়ের জন্য অর্থ লেনদেন প্রয়োজন। কাজ করে টাকা নেয়াই হোক আর ডোমেন কেনা-সার্ভার ভাড়া করার টাকা দেয়াই হোক। এজন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ পদ্ধতি হচ্ছে পে-পল। বাংলাদেশ সরকার পে-পল ব্যবহার করতে দেবেন না। তাদের বক্তব্য, এর মাধ্যমে অর্থের অবৈধ লেনদেন হবে। অন্যকথা তারা বলছেন বাংলাদেশে সবাই চোর, সুযোগ পেলেই চুরি করবে। সারা বিশ্ব যেখানে পে-পল ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশের সরকার নাগরিকদের বিশেষভাবে চোর-দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে রেখেছে।
পে-পলের কারনে যেমন আপনাকে অধিকাংশ পদ্ধতি থেকে দুরে থাকতে হচ্ছে তেমনি অনেক সহায়ক সেবা আপনি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না। যেমন এফিলিয়েট মার্কেটিং জাতিয় কাজে ভিজিটরের ক্লিকের হিসেব রাখার জন্য ক্লিকব্যাংক নামের একটি বিনামুল্যের সেবা ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ থেকে তার সদস্য হওয়া যায় না।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলি কোটিপতি আমদানী-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ি এবং স্মাগলারদের জন্য। আপনি কোটি টাকার ব্যাংকে রাখুন তারা আপনার পেছনে ধর্না দেবে, কয়েক হাজার টাকার একাউন্ট করতে গেলে আপনাকে ধর্না দিতে হবে। অথচ ব্যাংক ছাড়া আপনি লেনদেন করতে পারেন না।
সব উন্নত দেশে ব্যাংক আগ্রহ নিয়ে মানুষকে সহায়তা করে। একাউন্ট খুললেই তাদের লাভ। কোন ব্যক্তি ইচ্ছে করলে ভিন্ন নামে, ভিন্ন ঠিকানায়ও একাউন্ট করতে পারেন, তিনি চুরি করবেন এটা ধরে নেয়া হয় না।  বাস্তবে সেটা সম্ভবও না। মানুষ ব্যাংকে নিজের টাকা রাখে তারপর সেখান থেকে কিছুটা উঠায়। বাংলাদেশের ব্যাংক ধরেই নেয় আপনি নিজের টাকা রাখবেন না বরং ব্যাংকের টাকা চুরি করবেন।
শতরকম ঝামেলা এড়িয়ে যারা কাজ করছেন তাদের ওপর জালিয়াতি সীমাহিন। ডলারকে টাকায় পরিনত করতে কোন রেট ব্যবহার করা হবে সেটা তাদের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে। চেক ভাঙাতে গেলে বড় ধরনের কমিশন দিতে হয়। এগুলি সমাধান না করে ইন্টারনেটে ভাল করার সম্ভাবনা নেই।

মানুষের মানষিকতা
বাঙালী কর্মঠ, বাঙালী সাহসী, বাঙালী পরিশ্রমি, বাঙালী দায়িত্বশীল এধরনের কথা বলতে বাঙালী পছন্দ করেন। বাস্তবতা হচ্ছে কখনো এগুলোর সত্যতা যাচাই করা হয় না। এই ব্লগ পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এখানে কাজ করে উপার্জনের বহু পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও অধিকাংশ ব্যক্তির আগ্রহ শেষ পর্যন্ত গিয়ে থামে ক্লিক করে টাকা আয়ের বিষয়ে। যদিও বারবার বলা হয়েছে তারা শুরুতেই আপনার হাতে ৫০/১০০ ডলার ধরিয়ে দেবে, আরো পাওয়ার আশায় আপনি নাকের সামনে মুলো ধরা গাধার মত কাজ করে যাবেন, আর এক টাকাও পাবেন না। ১ বছরের কম চেষ্টায় গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়া যায়, ২ বছরে থ্রিডি কাজ করা যায়। সেটা না করে বসে বসে টাকা আয়ের মানষিকতা নিয়ে ইন্টারনেটে আয় আশা করা বোকামি।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন যা প্রশ্ন করতে শেখায় না। শিক্ষাপ্রতিস্ঠান-কোচিং সেন্টার কিংবা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার কোথাও শেখানো হয় না বাস্তবে এই কাজ এভাবে করতে হবে। শিক্ষার্থীও কোর্স শেষ করে সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে খুশি। ফল হয় মারাত্মক। ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হয়। যারা কাজের যোগাযোগ করেন তাদের অনেকে আদৌ মান বিষয়টি বোঝেন না। একসময় কাজ করতে না পারায় সে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তেমনি যারা পরিশ্রম করে যোগ্যতা অর্জন করে তারা বাধাগ্রস্থ হয়। অমুক কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ  করবেন না, একথা স্পষ্টভাবে লিখে দেন অনেকে (ছবি দেখুন)। যারা কাজ করেন তাদের জন্য এটা পেছন থেকে ছুরি মারা।
আপনি নিজেকে অবস্থার শিকার বলে ভাবতে পারেন। ট্রেনিং নেয়ার যে সুযোগ আছে সেখানে যিনি শেখাচ্ছেন তিনি নিজে কখনো কাজ করেননি, যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে একজনও কাজ করা ব্যক্তি নেই। তারপরও, কেউ কেউ ভাল কাজ করছেন। তারা দেখিয়েছেন এত সমস্যার মধ্যেও নিজের চেষ্টায় ভাল করা যায়।

অবকাঠামোগত সমস্যা
বিষয়টি এতটাই পরিচিত যে পৃথকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন হয় না। ঢাকা শহরে দৈনিক কয়েক ঘন্টা লোড সেডিং, ঢাকার বাইরের অবস্থা আরো করুন। কখনো কখনো কয়েকদিন বিদ্যুত থাকে না। মানুষ এখন এনিয়ে অভিযোগও করে না। ইন্টারনেটের জন্য টাকা দেবেন বিশ্বের সব দেশের থেকে বেশি, নেটওয়ার্ক পাবেন না।
সরকার ১০ হাজার টাকার ল্যাপটপ দেবেন ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের অথচ বাংলাদেশে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক নেই, এই এক উদাহরনই অবকাঠামো বুঝানোর জন্য যথেষ্ট।


মানুষ অন্য সব প্রানী থেকে পৃথক কারন তারা সমস্যার সমাধান করতে জানে। যুগে যুগে বহু জটিল সমস্যার সমাধান করেই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। সেতুলনায় বর্তমান সমস্যাগুলির সমাধান অনেক সহজ। ইচ্ছে থাকাই মুল বিষয়।
সেই ইচ্ছে যদি না থাকে, চেষ্টা না থাকে তাহলে বাংলাদেশে বসে ইন্টারনেটে আয় স্বপ্ন হয়েই থাকবে। অর্থমন্ত্রী টিভি ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন তিনি পে-পল চালু করার সমস্যা দেখেন না। শেয়ার বাজারের সমস্যাও তিনি দেখেন না, দ্রব্যমুল্যের সমস্যাও দেখেন না, বেকারত্বের সমস্যাও দেখেন না। এধরনের আধ্যাত্বিক কথায় কারো উপকার হচ্ছে না।
যারা ভুক্তবোগি তারা সমস্যা দেখেন। সমাধান তাদেরকেই খুজতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকা সহ সারা বিশ্বের মানুষ সমাধানের জন্য পথে নেমেছে।

3 comments:

  1. Honestly, eporjonto apnar bloge pora sob theke valo post. Protiti muhurte mone hoyeche porer line ta ki hobe..emon post e to chai..Sudhu sikha na..bastobota, koronio, vul sob dik tule dhora hoyeche jar jonno ei lekhata porte eto valo laglo...Onek dhonnobad

    ReplyDelete