ভিডিও নিয়ে আগ্রহ নেই এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। টিভি অনুষ্ঠান কিংবা মুভি থেকে শুরু করে নিজের ভিডিও। বর্মমানে সব স্মার্টফোনেই যখন ভিডিও করা যায় তখন ভিডিওকে শুধুমাত্র ভিডিও বলে কাজ শেষ হয় না। এরচেয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হয় যখন দেখা যায় কোন ভিডিও এক যায়গায় চলে আরেক যায়গায় চলে না। সেইসাথে মানের বিষয় তো আছেই। যারা ভিডিও নিয়ে কাজ করতে চান তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
ফ্রেম সাইজ এবং ফ্রেম রেট
ভিডিও বড়-ছোট হয় একথা সবাই জানেন। যদিও বিষয়টি অনেককে বিভ্রান্ত করতে পারে কারন ছোট ভিডিও বড় করে দেখা যায়, মনিটরের রেজ্যুলুশন পরিবর্তণ করা যায়। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা হচ্ছে ভিডিও বড় করলে মান নষ্ট হয়। প্রশ্ন হতেই পারে কোন সাইজে দেখলে সবচেয়ে ভাল দেখা যাবে।
প্রতিটি ভিডিও প্লেয়ারে (কম্পিউটারে ব্যবহারের সময়) ১০০% বলে একটি মাপ পাওয়া যায়। এটাই ভিডিওর সবচেয়ে ভাল মান। অন্যকথায় ভিডিওটি আসলে এই মাপের। সিডি-ডিভিডি-ব্লুরে বা টিভি প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট কিছু মাপ ব্যবহার করা হয়। এর একক পিক্সেল। যেমন ডিভিডির জন্য ৭২০ – ৫৭৬ পিক্সেল PAL, কিংবা ৭২০ – ৪৮০ NTSC। ভিডিসির মাপ এরচেয়ে ছোট এবং ব্লুরের মাপ এরচেয়ে বড়। একারনে কম্পিউটার মনিটরে ফুলস্ক্রিন দেখার সময় ব্লুরে সবচেয়ে ভাল দেখা যাবে, ভিসিডি সবচেয়ে খারাপ দেখা যাবে।
ভিডিওকে অনেকগুলি ষ্টিল ইমেজকে পরপর সাজানো বলে কল্পনা করুন। সেকেন্ডে ১৬টি ছবি দেখানো হলে মানুষের চোখ একটি থেকে আরেকটির পার্থক্য দেখতে পায় না, একটি চলমান ছবি বলে মনে হয়। সেকেন্ডে যতগুলি ছবি বা ফ্রেম দেখা যায় তাকে ফ্রেমরেট বলা হয়। ফ্রেমরেট যত বেশি ভিডিও তত ভাল দেখা যাবে।
সাধারনভাবে প্রচলিত ফ্রেমরেট হচ্ছে পল টিভি সিষ্টেমের জন্য (বাংলাদেশে) ২৫, এনটিএসসি (জাপান-আমেরিকা) ৩০ এবং মুভির জন্য ২৪।
কোডেক
ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেমকে একটি করে ষ্টিল ইমেজ এবং সেকেন্ডে ২৫টি করে ছবি, একসাথে করে হিসেব করুন তাহলে ভিডিওর সাইজ পাবেন। সেকেন্ডে ২৫টি ফ্রেম, মিনিটে ১৫০০, ঘন্টায় ৯০০০০। সাধারন ষ্টিল ছবিকে পরপর এভাবে সাজিয়ে ভিডিও তৈরী করলে ফাইলসাইজ হবে বিশাল, সেটা ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন হবে। সেকারনে ভিডিওকে বিশেষ পদ্ধতিতে কম্প্রেস করা হয়। একে ভিডিওতে একে ধরনের কম্প্রেসর ব্যবহার করা হয়। সেখানে কম্প্রেসন এর মান কমবেশি করার সুযোগ থাকে।
কাজেই ভিডিও তৈরী সময় আপনার সামনে দুধরনের সুযোগ থাকে, মান ভাল রেখে ফাইলসাইজ বড় করা, অথবা মান কমিয়ে ফাইলসাইজ ছোট করা।
যে সফটঅয়্যার কম্প্রেসনের কাজ করে তার নাম কম্প্রেসর। নির্দিষ্ট কম্প্রেসর ব্যবহার করে তৈরী ভিডিও ব্যবহারের সময় তারসাথে মানানসই ডিকম্প্রেসর প্রয়োজন হয়। কম্প্রেসর এবং ডিকম্প্রেসর দুটিকে একসাথে বলা হয় কোডেক। অপারেটিং সিষ্টেমের সাথে প্রচলিত কিছু কোডেক দেয়া হয়, ভিডিও প্লেয়ারের সাথে আরো কিছু কোডেক ইনষ্টল করা যায়। তারপরও যদি কোন ভিডিও চালু না হয় তাহলে জানবেন সেখানে এমন কোডেক ব্যবহার করা হয়েছে যা আপনার কম্পিউটারে নেই।
ভিডিও তৈরী বা এডিটিং কাজের সময় এজন্য কোডেকের দিকে লক্ষ রাখা জরুরী। কখনো এমন কোডেক ব্যবহার করবেন না যা অন্যের কম্পিউটারে না থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভিডিও এডিটিং সফটঅয়্যার, হার্ডঅয়্যার এরা ভাল মানের জন্য নিজেদের কোডেক ব্যবহার করে। এগুলি অন্যের কম্পিউটারে থাকার কথা না।
ভিডিও ফরম্যাট
ভিডিও ফরম্যাট হিসেবে আপনি হয়ত AVI. MPG, MOV, 3GP ইত্যাদি বিষয়ের সাথে পরিচিত। অনেকে একেই ভিডিওর পরিচিতি হিসেবে মনে করেন। বাস্তবতা হচ্ছে এগুলি ভিডিও ফাইলের নামের অংশ। সহজে চেনার জন্য ব্যবহার করা হয়। আপনি অনায়াসে AVI কে পরিবর্তন করে MPG বানিয়ে নিতে পারেন, এতে মুল ভিডিওর কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ভিডিওর মুল পরিচয় কোডেক ব্যবহারে। কোডেক ঠিক থাকলে ফাইলের নাম যাই হোক না কেন, সেটা ব্যবহার করা যাবে।
প্রশ্ন হতে পারে আপনি কখন কোন ফরম্যাট ব্যবহার করবেন।
MPG মুলত ডিস্কের জন্য। সিডি-ডিভিডিতে ব্যবহারের জন্য এই ফরম্যাটে কাজ করুন। এতে মান কমে যায় বলে সব যায়গায় ব্যবহার করা হয় না। হাই ডেফিনিশন ভিডিওর জন্য বর্তমানে ডিভিডি কিংবা ব্লুরেতে AVCHD ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য AVCHD কিংবা এই জাতিয় কোন ফরম্যাট ব্যবহার করলে ছোট ফাইল সাইজে ভাল মানের ভিডিও পাওয়া যাবে। টিভির জন্য কাজ করলে তারা কোন ফরম্যাট চায় জেনে নিন। কুইকটাইম একটি ভাল অপশন হতে পারে।
No comments:
Post a Comment