আজ ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে ই-এশিয়া নামের ৩ দিনের সন্মেলন। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে এটাই সবচেয়ে বড় আয়োজন। ৩০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি আসছেন যার মধ্যে রয়েছে ইন্টেল এবং ওডেস্ক এর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
ওডেস্ক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্রিল্যান্সিং প্রতিস্ঠান। কাজেই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া বাংলা-টিউটর সাইট একে গুরুত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক। অন্তত ফ্রিল্যান্সারের দৃষ্টিভঙ্গিতে।
এই ৩ দিনে ৩০টি বেশি আলোচনা অনুস্ঠান হবে, বক্তব্য দেবেন দেশের এবং বিদেশের কয়েকশত গন্যমান্য ব্যক্তি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারীদ্রমোচন, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, আউটসোর্সিং, ইন্টারনেট এই শব্দগুলি বারবার বলা হবে, সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হবে, আলোচনার ওপর আলোচনা নিয়ে হবে টকশো। সেখানে ফ্রিল্যান্সেরের প্রাপ্তি কতটুকু, কিংবা কতটুকু আশা করা যায় সেটাই এই লেখার বিষয়।
মুল বক্তব্যে যাওয়ার আগে কয়েকটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরা যাক।
শুরু করা যাক ইন্টারনেট নিয়ে। বাংলালায়ন নামের দ্রুতগতির ফোরজি ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট প্রচার করছে আগের থেকে অর্ধেক টাকা দিয়ে পুরো সেবা পাওয়া যাবে। বাস্তবে তাদের মডেম কয়েকমাস ধরে ড্রয়ারে রেখে দেয়া হয়েছে সারাদিনে কখনোই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে। এটা ধানমন্ডির কথা। যারা মিরপুর-উত্তরায় বাস করেন তাদের অবস্থা আরো করুণ। আর যারা গ্রামের দিকে থাকেন তারা নিশ্চয়ই তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক।
বর্তমান কাজ চলছে গ্রামীন এজ ব্যবহার করে। হয়ত অনেকেই লক্ষ করেছেন বাংলা-টিউটর সাইট আপডেট করার নির্দিষ্ট সময় নেই। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, যখন ইন্টারনেট কাজ করে। কখনো কখনো ঘন্টাখানেক ইমেইল দেখার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিতে হয়।
খবরের উল্টোপিঠ হচ্ছে সবগুলি আইএসপির রমরমা ব্যবসা হচ্ছে ভিওআইপি। সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিটক শীর্ষে। কাজেই ইন্টারনেটের গতি কখনো কথা বলার পর্যায়ে যাবে না, সাধারন মানুষ নিজেরাই ইন্টারনেটে ফোন করার সুযোগ পাবে না এটাই তো স্বাভাবিক। হাজার কোটি টাকার এই আয় প্রত্যেকের পকেটে যায়। এমনকি যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে অনবরত বক্তৃতা দেন তাদের পকেটেও। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। সংবাদমাধ্যমে সত্য বলার আশা করেন কেউ কেউ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তারাও ব্যবসা করেন। টিভির টক-শো এর আয়োজক তারাই। তার ওপর বহুকোটি টাকার বিজ্ঞাপন। এরই বিপরীতে সন্মেলনে বলা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের অবকাঠামো কত উন্নতি হয়েছে।
এরসাথে আরেকটি কথা বলা হবে। শিক্ষা এবং লোকবল। শিক্ষার উদাহরন হচ্ছে, শিক্ষাথীরা দেশের প্রধান শিক্ষা প্রতিস্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখলেন যারা তাদের সুশিক্ষিত করবেন তারাই সেখানে জট পাকিয়েছেন। সেই জট আদালতে গেছে এবং এখনও খোলেনি। এই মহারথিরা কি শিক্ষা দেবেন সেটা সহজেই অনুমেয়। এজন্য কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা সংবাদে আসেনি।
লোকবল অবশ্যই আছে। এক বছরের সার্টিফিকেট আরেক বছরের বানাতে চান, নিলক্ষেতে যাওয়া যথেষ্ট। সবধরনের কাগজ, সার্টিফিকেট থেকে শুরু ন্যাশনাল আইডি পর্যন্ত সবই তৈরী করতে পারে তারা। বাজার ছেয়ে গেছে নকল টাকায়। এজন্য দক্ষতা প্রয়োজন হয় বৈকি।
এবারে বক্তারা কি বলবেন সেকথা আশা যাক। ওডেস্ক এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তার ব্যবসার কথা বলবেন এটা নিশ্চিত। তাদের কাছে শহরের হিসেবে ঢাকার অবস্থান প্রথম দিকে। ঢাকায় তাদের ফোরাম চালু হয়েছে ক’মাস আগে। তিনি কি বললেন সেজন্য অপেক্ষা না করে তাকে বরং প্রশন করা যেতে পারে, ওডেস্কে কাজ করার পর টাকা পাওয়ার পদ্ধতি কি ?
৩টি পদ্ধতি। ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড, পেপল এবং অয়্যার ট্রান্সফার। প্রথম দুটি বাংলাদেশে নেই। তৃতীয়টির জন্য যে খরচ সেটা অনেকসময় আয়ের থেকেও বেশি। আপনি ২০ ডলারের কাজ করে সেটা দেশে আনার জন্য ৩০ ডলার ফি দিতে পারেন না।
অথচ নিশ্চিতভাবে এই বিষয়টি নিয়ে কেউ টু শব্দ করবেন না। সবাই বলছেন করা প্রয়োজন, এরপর আর সামনে এগোচ্ছেন না। কেন ? ৪০০ বছরের ঢাকা ভেঙে দুটুকরো করা যায় ৫ মিনিটে অথচ পেপল চালু করতে আর ব্যাংকে নিয়ম সহজ করতে লাগে কয়েক যুগ। তারপরও নিশ্চয়তা নেই আগামী ৫ বছর বা ১০ বছরে সেটা হবে।
বাংলাদেশে প্রচুর দক্ষ মানুষ কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকে আন্তর্জাতিক মানের শব্দটিও জুড়ে দেন।
বেশ। আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাটা নেয়া হল কোথায় ? কে সার্টিফিকেট দিল অমুকে আন্তর্জাতিক মানের প্রোগ্রামার কিংবা এনিমেটর কিংবা ডিজাইনার। নিজেই!
বাংলাদেশের মানুষ মেধাবী, সৃষ্টিশীল, ধৈর্যশীল এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। উইন্ডোজ যখন জনপ্রিয় হয়নি, ডস প্রধান অপারেটিং সিষ্টেম, পিসিতে বাংলা লেখা যখন ম্বপ্ন তখন বর্ণ নামে একটি বাংলা সফটঅয়্যার তৈরী করেছিল অংক এবং সোহেল নামে দুজন স্কুল ছাত্র। বাস্তবতা এটাই, বর্তমানে কেউ প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। কারনটিও খুব সহজ। ফুটপাতে ডিভিডি কেনা যায় ৩০ টাকায়। সবার ধারনা বিষয়টা অমনই। ডিভিডিতে কপি করলে দাম ৩০ টাকা। সেখানে কি আছে তাতে কিছু যায় আসে না। তাহলে একজন প্রোগ্রাম তৈরী করবেন কেন ?
অন্যভাবে বিষয়টি যা হতে পারত, প্রোগ্রামিং বাদ দিয়ে বরং নাটকের কথাই বিবেচনা করা যায়। পাইরেসি হবে না এই নিশ্চয়তা দিলে অনেকের পক্ষেই বেশি বিনিয়োগ করে উচুমানের নাটক (কিংবা এনিমেটেড মুভি) তৈরী করা সম্ভব হত, ডিভিডি হিসেবে বিক্রি করে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যেত। এভাবে হাত পাকিয়ে একসময় সত্যিকারের মানসম্মন্ন লোকবল তৈরী হত।
এই তর্ক শেষ হওয়ার না। বাংলা টিউটর সাইটে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বহু লেখা হয়েছে, বহু মানুষ সেগুলি পড়েন, অনেকে মন্তব্য লিখে কিংবা ইমেইল করে জানান তারা উপকৃত হচ্ছেন। সেকারনেই তাদের উদ্দেশ্য করে সংক্ষেপে কি প্রয়োজন সে বিষয়গুলি তুলে ধরা যাক।
. বিনা বাক্যব্যয়ে পেপল চালু করার ব্যবস্থা করা। এজন্য পেপলকে একটি চিঠি দেয়াই যথেষ্ট। যদি ফ্রিল্যান্সারের আয়ে ভাগ বসাতে চান আপত্তি নেই কিন্তু সেজন্য কাজ বন্ধ রাখবেন না। তাদের পথ খুলে দিন দেখবেন টাকার সম্ভাবনা দেখে আপনাদের কাজের গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
. ব্যাংক ব্যবহার সহজ করা। একজন ফ্রিল্যান্সার বহুলক্ষ টাকা লেনদেন করতে যাচ্ছেন না। যদি কোন সীমা বেধে দিতে চান তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু অর্থপাচার হতে পারে এই কথা তুলে সাধারন মানুষকে বাধা দেবেন না। যারা কোটি টাকার অর্থ পাচার করেন তাদেরকে ব্যাংক চেনে এবং সহায়তা করছে, যারা কয়েক হাজার টাকার লেনদেন করা প্রয়োজন তাকে সেই কারন দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে পারে না। ব্যাংক একাউন্ট করার পদ্ধতি সহজ করুন।
. পাইরেসি বন্ধ করুন। অনেকে একথা শুনে আতকে উঠে ভাবেন তাহলে আর কোন সফটঅয়্যার পাওয়া যাবে না, সব কিনতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ে পাইরেসি সব দেশেই কমবেশি হয়। যা বন্ধ করা প্রয়োজন তা হচ্ছে দোকান দিয়ে সিডি-ডিভিডি বিক্রি করা। যদি সেটা না করা হয় কখনো প্রোগ্রামার তৈরী হবে না।
. শিক্ষার উন্নতি নিয়ে বলার সুযোগ এখানে নেই। দলীয়করন থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলা অর্থহীন। বরং এটুকু আশা করা যায়, ফ্রিল্যান্সিং এর মত কাজে বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হলে একসময় তারা নিজেই জেনে যাবে কি শেখা প্রয়োজন, কতটুকু শেখা প্রয়োজন। সার্টিফিকেট লাভই যে শিক্ষালাভ না এই শিক্ষা দিতে পারে ফ্রিল্যান্সিং।
ই-এশিয়ার মত আয়োজন বাংলাদেশকে অনেককিছু দিতে পারে। প্রচারের জন্য এরচেয়ে বড় সুযোগ হয় না। বহু অর্থ ব্যয় করা এই বিপুল আয়োজন শুধুই টক-শোতে পরিনত হোক সেটাও কাম্য না। যা বলা হচ্ছে তারসাথে মিল রেখে কাজের দিকেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
কেবল পাইরেসির জন্যেই আমাদের দেশে প্রোগ্রামিং শেখার উপর আগ্রহ অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। ১৪০০০ হাজার টাকার অপারেটিং সিস্টেম যদি ৬০ টাকায় পাওয়া যায়, তাহলে কেউ লিনাক্স ব্যবহার করবে না। আবার যারা চেষ্টা করে দুই একটা সফটওয়্যার বানানোর চেষ্টা করে, তখন পায় না স্পন্সর। ফ্রিল্যান্সিং তো পেপালের জন্যই থেমে আছে একি জায়গায়।
ReplyDeleteপেপাল আনার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের আন্দোলন করা দরকার।
ভালই লাগলো পোস্টটি পোরে।
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই আপনাকে
অল-বাংলা নিউজ পেপার