Wednesday, December 21, 2011

ফ্রিল্যান্সিং কাজে প্রত্যাসা ও প্রাপ্তি

অনেকেরই সাধারন বক্তব্য বাংলা-টিউটর সাইটে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে যেভাবে লেখা হয় সেটা পড়ে মনে হয় খুব সহজেই অনেক টাকা আয় করা যাবে। বাস্তবে সেটা সম্ভব হয় না।
কথাটা পুরোপুরি ঠিক। যদিও বাংলা-টিউটর সাইটে সহজ শব্দটি কখনো ব্যবহার করা হয়নি, বরং এজন্য ধীর্ঘদিনের চেষ্টা, মনোনিবেশ, দক্ষতা বাড়ানো এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তারপরও মনে হতেই পারে যত সহজে কথাগুলি বলা হয় তারথেকে বাস্তবতা অনেক কঠিন। ঠিক কি কি কারনে এই ধারনা তৈরী হতে পারে জেনে নিন।
.          ব্যর্থতার দিকে দৃষ্টি না দেয়া
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কতটা ভাল করা সম্ভব সেকথা বলার সময় অবশ্যই ব্যর্থতার কথাগুলি সেভাবে উল্লেখ করা হয় না। একই কথা ইন্টারনেটে আয়ের অন্যান্য পদ্ধতিগুলির ক্ষেত্রেও। একটি উদাহরন দিয়ে দেখা যাক। গুগলের এডসেন্স থেকে মাসে হাজার ডলার আয় করা যায়, কিভাবে তাকে আরো বাড়ানো যায় সেকথা বলা হয়েছে। কিন্তু এডসেন্স এর জন্য আবেদন করলে যদি গুগল সেটা অনুমোদন না দেয় ? একই কথা ফ্রিল্যান্সিং কাজে বিড করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি বারবার চেষ্টা করেও কাজ পাচ্ছেন না এটা হতেই পারে।
কাজেই ব্যর্থতাকেও হিসেবে রাখুন।  আপনি চেষ্টা করলেই সাথেসাথে ফল পাবেন এই নিশ্চয়তা নেই। বরং কোথাও ব্যর্থ হলে তার কারন বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেটা সংশোধন করে নতুনভাবে চেষ্টা করুন।
.          পারিপার্শিক অসহযোগিতা
আপনার একার চেষ্টা যথেস্ট না যদি পারিপার্শিকতা আপনাকে সাহায্য না করে। বাংলাদেশ থেকে পেপল ব্যবহার করা যায় না কাজেই আপনার কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে এরফলে। যারা পেপলের মাধ্যমে অর্থ দেয় সেখানে কাজের সুযোগ আপনি পাচ্ছেন না।
একই কথা ব্যাংকিং ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলি অল্প টাকার গ্রাহক নিয়ে মাথা ঘামায় না। অথচ ব্যাংকে লক্ষ টাকা জমা রাখার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। অথচ ডোমেন কেনা, টাকা গ্রহন করা এই কাজগুলির জন্য ব্যাংক প্রয়োজন। সমস্যাগুলি যতদিন থাকবে ততদিন আপনার কাজে বাধা থাকবে।
.          শিক্ষার সুযোগ না থাকা
আপনি কোন বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে চান এবং সেজন্য পরিশ্রম এবং অর্থ খরচ করতে আপত্তি নেই। তারপরও কি আপনি সুযোগ পাচ্ছেন ? গ্রাফিক ডিজাইনকে উদাহরন হিসেবে বিবেচনা করুন, আপনি ট্রেনিং নেয়ার মত কোন যায়গা পাচ্ছেন না যেখানে সত্যিকারের দক্ষ কেউ আপনাকে শেখাতে পারে। আপনি নিজের চেষ্টায় শেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন পাচ্ছেন না, এজন্য বহু সময় ব্যয় করতে হচ্ছে এবং কিছু ভুল সংশোধনের সুযোগ কখনোই পাচ্ছেন না।
.          দেরীতে শুরু করা
অনেকেই ধরে নেন কাজে হাত দিলেই সাথেসাথে ফল পাওয়া যাবে। বাস্তবে কোন কাজই এভাবে হয় না। গাছে ফল পাওয়ার জন্য গাছ লাগাতে হয়, পানি দিতে হয়, নিয়মিত যত্ন নিতে হয় এরপর একসময় ফল পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং কাজকে এর ব্যতিক্রম ধরে নেবেন কেন ? দুবছর পর ফল ধরে এমন গাছ লাগানোর পর দুবছর অপেক্ষা করতে হয়। ফ্রিল্যান্সং কাজেও কতটা সময় লাগতে পারে হিসেব করে ততদিন চেষ্টা করা প্রয়োজন।
.          ব্যক্তিগত মানষিকতা
অনেকে ধরেই নেন ফ্রিল্যান্সিং বা ইন্টারনেটে আয়ের পদ্ধতিগুলি খুব সহজ। এটা ভুল ধারনা। ইন্টারনেটে আয়ের সুযোগ যেমন বেশি তেমনি প্রতিযোগিতাও বিশাল। সারা বিশ্বের মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। সেখানে কাজ সহজ ধরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আপনি অন্যের চেয়ে বেশি চেষ্টা করে অন্যকে পেছনে ফেলবেন এটাই নিয়ম। পরিশ্রমের বিকল্প সহজ কোন পথ নেই।
.          সংশোধনের অযোগ্য সমস্যা
আপনি দেশকে ডিজিটাল বলে গর্ব করতে পারেন, বাস্তবতা হচ্ছে নন-ডিজিটাল দেশগুলি যে সুযোগ পায় আপনি সেটা পানন না। যারা বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করেন তাদের কাছে ইন্টারনেট কোন সমস্যা না, অনায়াসে ভিডিও ডাউনলোড করতে পারেন। যারা অল্প ব্যয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন তারা ইমেইল ব্যবহারের মত গতি পান না, এমনকি কখনো কখনো আদৌ ইন্টারনেটে কানেক্ট হওয়ার সুযোগ পান না। অথচ তারা দিব্যি আপনার কাছে টাকা নিচ্ছে। স্বল্প খরচে ইন্টারনেট ব্যবহারের নিশ্চয়তা না থাকা একটি বড় সমস্যা। অনেক ক্লায়েন্ট স্কাইপ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে চান, তাকে সরাসরি না বলে দিতে হয়। একই কথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও। অনেক ওয়েব সেবা বাংলাদেশ থেকে ব্যবহার করা যায় না।
এই সমস্যাগুলির সমাধান আপনি নিজে করতে পারেন না। অপেক্ষা করতে পারেন যদি কোনদিন সমাধান হয় অথবা প্রতিবাদ জানিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন।

সমস্যা যখন জানা তখন কোনভাবে তার সমাধান করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং কঠিন তবে অসম্ভব না। যদি নির্দিষ্ট কাজে ব্যর্থতার পাল্লা ভারি হয় তাহলে তারচেয়ে সহজ কাজের দিকে দৃষ্টি দিতে পারেন এবং সেখান থেকে ক্রমাগত ভালোর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment