যারা সফটঅয়্যার-গেম ইত্যাদি তৈরী করেন তাদের উদ্দেশ্য ব্যবহারকারী সেগুলি কিনে ব্যবহার করবেন। মানুষ যত বেশি ব্যবহার করবে তাদের আয় তত বেশি। বাস্তবে সেটা হয়না। মানুষ না কিনেই ব্যবহার করতে চায়। ফলে তাদেরকেও নানারকম ব্যবস্থা নিতে হয় যেন ইচ্ছে করলেই কপি করে ব্যবহার করা না যায়। তাতেও খুব বেশি লাভ হয়েছে এমন না। বহু মানুষই জানেন তাদের সেই ব্যবস্থা কিভাবে এড়িয়ে যেতে হয়। আপনাকে নিশ্চয়ই বলা হচ্ছে না আপনি কপি করে সফটঅয়্যার ব্যবহার করবেন। অন্তত জেনে রাখুন পদ্ধতিগুলি কি কি। অন্য কথায় keygen, crack ইত্যাদি আসলে কি কাজ করে।
সফটঅয়্যার নির্মাতাদের প্রধান লক্ষ্য কপি না করে ব্যবহার করা। এজন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি প্রত্যেকের জন্য পৃথক সিরিয়াল নাম্বার দেয়া। কাজটি খুব সহজ। আপনি আপনার নাম জানাবেন, তারা তার বিপরীতে সিরিয়াল নাম্বার তৈরী করে দেবে। সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি আরেকজনের নাম ব্যবহার করে ইনষ্টল করেন তাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা এই পদ্ধতির নেই।
এরথেকে আরেকটু জটিল পদ্ধতি কম্পিউটারের তথ্য ব্যবহার করে সিরিয়াল নাম্বার তৈরী করা। আপনি সফটঅয়্যার ইনষ্টল করার পর একটি কোড পাবেন। সেই কোডটি জানানোর পর তার ভিত্তিতে সিরিয়াল নাম্বার বা একটিভেশন কোড দেয়া হবে। কোডটি তৈরী করা হয় আপনার কম্পিউটারের হার্ডঅয়্যার যাচাই করে (হার্ডডিস্কের সিরিয়াল নাম্বার, কখনো প্রসেসরের নাম্বার ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়)। কাজেই একই কোড অন্য কম্পিউটারে কাজ করে না।
এধরনের পদ্ধতি ভাঙার জন্য তৈরী হয়েছে কি-জেন নামের সফটঅয়্যার। এটি চালু করলে সে নিজেই কম্পিউটারের সেই বিষয়গুলি থেকে কোড তৈরী করে এবং তার বিপরীতে একটিভেশন কোড বনিয়ে দেয়। আপনি যে কম্পিউটারেই ব্যবহার করুন না কেন, সেই কম্পিউটার অনুযায়ী কোড পাবেন।
আরেক পদ্ধতি হচ্ছে ক্রাক নামে ফাইল ব্যবহার করা। ইনষ্টল করার পর এই ফাইল কপি করে দেবেন। এখানে যা করা হয় তা হচ্ছে মুল সফটঅয়্যারের যে অংশে প্রোটেকশন বিষয় নির্দেশগুলি থাকে সেই যায়গা নষ্ট করে দেয়া। ফলে ব্যবহারকারীর সফটঅয়্যারকে অবৈধ কপি হিসেবে চেনা যাবে না।
প্রোটেকশনের আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে মুল ডিস্ক যাচাই করা। আপনি সফটঅয়্যার (বা গেম) ব্যবহারের সময় মুল ডিস্কটি ড্রাইভে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। সেটা কপি করলে আরেকটি হুবহু ডিস্ক তৈরী হবে না। এধরনের পোট্রেকশন ভাঙার জন্যও ক্রাক ব্যবহার করা হয়।
কিছু সফটঅয়্যারে হার্ডঅয়্যার প্রোটেকশনের ব্যবস্থা রাখা হয়। ব্যবহারের সময় একটি কি (ডংগল) কম্পিউটারে লাগাতে হয়। এটা বাদ দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রাক বা কি-জেন।
সম্প্রতি অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুল সফটঅয়্যার যাচাইয়ের ব্যবস্থা করেন। এগুলি অবৈধভাবে ব্যবহারের সময় লক্ষ রাখতে হয় সফটঅয়্যার যেন নিজে থেকে ইন্টারনেটে যোগাযোগ না করে।
মুলত এমন কোন প্রোটেকশন ব্যবস্থা নেই যা ভাঙা হয়নি। পাইরেটেড সফটঅয়্যার বা গেম ব্যবহারের সময় একটা কথা নিশ্চিতভাবে জেনে নেবেন, এসব কি-জেনারেটর কিংবা ক্রাক তৈরী করে হ্যাকাররা। কাজেই এতে ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা খুবই বেশি। অনেকে এরই মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারের তথ্য হাতে পাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কেউ কেউ এগুলি তৈরী করেন সফটঅয়্যার নির্মাতাদের ওপর আক্রোশ থেকে। তাদের বক্তব্য, তারা সফটঅয়্যারের এত দাম নেবে কেন ? মাইক্রোসফটের কি আসলেই হাজার হাজার কোটি ডলার আয়ের প্রয়োজন আছে ? দাম মানুষের নাগালের মধ্যে থাকলে মানুষ কিনেই ব্যবহার করতে পারে। তারা একদিকে এদের ওপর আক্রমন চালান অন্যদিকে বিনা খরচে ব্যবহারের বিকল্প সফটঅয়্যার তৈরী করেন। লিনাক্স অপারেটিং সিষ্টেম এবং বিনামুল্যের সফটঅয়্যারগুলি তাদেরই এই চেষ্টার ফল। এগুলি বর্তমানে এমন পর্যায়ে গেছে যেখানে অবৈধ সফটঅয়্যার ছাড়াই সব কাজ করা যায়। যদি সম্ভব হয়, অবৈধ সফটঅয়্যার ব্যবহার থেকে দুরে থাকুন।
No comments:
Post a Comment