Friday, March 16, 2012

ফ্রিল্যান্সিং : বাংলাদেশের সুযোগ কমছে

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা (এবং ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যারা কথা বলেন) তারা বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে উচ্চকন্ঠ। ও-ডেস্কের তালিকায় ঢাকা কত নম্বরে একথা বলে অনেকেই গর্ববোধ করেন। যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন (তালিকা সম্ভবত সেটার) এবং বাস্তবে কতজন কাজ করেছেন সেটা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলা যায় তেমনি বক্তাদের কতজন বাস্তবতা জেনে বলেন সে প্রশ্নও তোলা যায় খুব সহজে।  
বাস্তব কিছু উদাহরন থেকে দেখলে স্পষ্ট হতে পারে বিষয়টি।


.          কোন কাজের বর্ননায় লেখা রয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিড করবেন না।
.          কোন সাইটের সদস্য হওয়ার সময় দেখলেন বাংলাদেশ থেকে সদস্য হওয়া যাবে না।
.          কোন সাইটে ঢোকার সময় মেসেজ পেলেন সেই সাইটে ঢোকার অনুমতি নেই।
.          কোন কোন প্রতিস্ঠানের দেশগুলির তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
.          কোন কোন প্রতিস্ঠান যে পদ্ধতিতে টাকা দেন সেটা বাংলাদেশে ব্যবহার করা যায় না।

এই তালিকা আরো দির্ঘ করা যায়, কিন্তু মুল বক্তব্য এটাই, যদিও ইন্টারনেটে ভৌগলিক সীমা বিবেচনা করার কথা ছিল না তাহলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে। পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন যারা অনলাইনে কিছু করে আয় করতে চানতারা। একদিকে সমস্যার সমাধানের বদলে বক্তৃতার পর বক্তৃতা উপস্থাপন করা হচ্ছে অন্যদিকে সমস্যা ক্রমে জটিল আকার ধারন করছে। নতুন নতুন সাইট বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য।

ঠিক কি কারনে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে সেটা কেউ স্পষ্ট করে বলেন না। বলার কথাও না। তারা কাজ চান, বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে যে কেউ করে দিলেই তারা সন্তুষ্ট। তারপরও তারা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে আবেদন করবেন না। তারা এটা পছন্দ করেন ধরে নেয়ার কোন কারন নেই। কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারনে সেটা করতে হচ্ছে।

নিশ্চিত না হলেও কিছু কারন অনুমান করা যায়। সেগুলি হতে পারে;

.          অনলাইনে লেনদেনের সমস্যা
বাংলাদেশে পে-পল ব্যবহার করা যায় না। অথচ এই ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ বলে সকলের প্রিয়। ক্লায়েন্ট যখন জানেন বাংলাদেশে পে-পলের মাধ্যমে টাকা দেয়া যাবে না, যিনি কাজ করছেন তিনিও বিষয়টি না জেনে কাজের চেষ্টা করছেন তখন এক পর্যায়ে তারা দেশকেই বাদের তালিকায় যোগ করেন।
.          দুর্বল ইন্টারনেট
অনেক কাজে দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ থেকে কাজ করার সময় অনেকে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের ধীরগতির কারনে সময়মত কাজ দিতে ব্যর্থ হন। ক্লায়েন্ট নতুনভাবে ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে বাংলাদেশকে বাদের তালিকায় রাখেন।
.          ইংরেজিতে দুর্বলতা
বাংলাদেশে ১২ ক্লাশ ইংরেজি বাধ্যতামুলক থাকার পরও একথা সত্য যে মানুষ ইংরেজিতে দুর্বল। নিজের বক্তব্য যেমন লিখে প্রকাশ করতে পারেন না তেমনি অনেক সময় ক্লায়েন্ট এর বক্তব্যও বোঝেন না। এত বছর ধরে বাধ্যতামুলকভাবে ইংরেজির সবকিছু শেখার পরও ইংরেজি শিখতে তারা ভর্তি হন স্পোকেন ইংলিশ নামের অদ্ভুত এক যায়গায়। দুঘন্টায় অনর্গল ইংরেজি বলার নিশ্চয়তা দেয়া হয় শেখানে। যদিও ফ্রিল্যান্সারের ইংরেজি বলার প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় ইংরেজি পড়ে বোঝা এবং লিখে বক্তব্য প্রকাশ করা।
.          অদক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস
অনেকে বলেন বাংলাদেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত বেশি। একবার দেখলেই করে ফেলব, এধরনের মানষিকতা অত্যন্ত প্রবল। পেশাদারী কাজে বহু বছর ধরে শিখতে হয়, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়, এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফল হিসেবে একজন অদক্ষ ব্যক্তি নিজেকে দক্ষ মনে করেন। ক্লায়েন্টের কাছে এর ফল হয় ক্ষতিকর। তিনি যে আগ্রহ নিয়ে কাজ দেন সেই ফল পান না। একসময় বিরক্ত হন।
স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ না থাকা. দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ না থাকাকে এর কারন মনে করলে হয়ত খুব ভুল হবে না।

ভুল সবাই করেন এমনটা নিশ্চয়ই না। অনেকে সত্যিকার কাজে আগ্রহি। অনেকে ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরী করছেন ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু ততদিনে যদি পথ বন্ধ হয় তাহলে ভুক্তভোগি হবেন সকলেই।
ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারে, বক্তাদের একথা সত্য। এরসাথে বাকি যে কথাগুলি বলেন সেগুলি সহায়তার বদলে ক্ষতির কারন হচ্ছে। ভাল করার জন্য বক্তব্য প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন সব ধরনের সীমাবদ্ধতা দুর করা, স্থানীয় কাজের পরিবেশ তৈরী করা, দক্ষতা বাড়ার ব্যবস্থা করা, শিক্ষার মান উন্নত করা।
সেগুলি না করলে বর্তমানে যারা কাজ করছেন, যারা কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আর ফ্রিল্যান্সিং থেকে যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে সেটাও বাস্তবতা পাবে না। এই মুহুর্তে মানুষের যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে সেটাও  বিদায় নেবে অতীতের অন্যান্য আগ্রহের বিষয়ের মত।

2 comments:

  1. Brother, You are right. Everyone should consider his qualification to bid for a JOB.

    ReplyDelete