প্রতিটি সমাজের
মানুষের সাধারন কিছু বৈশিষ্ট থাকে। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেও সেধরনের কিছু
বক্তব্য প্রচলিত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বলা হয়েও গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়
আত্মবিশ্বাস। এর প্রকাশ ঘটে নানা ভাবে। কাজে দক্ষতা প্রকাশ পায় না, বিভিন্ন কাজে
অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।
সহজ একটি
উদাহরন দিয়ে দেখা যাক। আপনি কিছু কিনতে চান, অনেক সময়ই আপনি একাজে সহযোগিতা করতে
পারে এমন কাউকে খোজ করেন। কারন আপনি মনে করেন ব্যবসায়ী আপনাকে ঠকাতে পারে। দাম
বেশি নিতে পারে, খারাপ জিনিষ দিতে পারে ইত্যাদি নানা ভাবে। কাজেই এমন কাউকে
প্রয়োজন যিনি এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত রাখবেন।
শুরুটা
সেখানেই। এরপর ক্রমশই অন্যের ওপর নির্ভরতা বাড়তে থাকে। ফল হিসেবে নিজের কর্মদক্ষতা
কমতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে সমস্ত যায়গায়। ফ্রিল্যান্সিং কাজে যখন আপনি নিজেই নিজের
সবকিছু নিয়ন্ত্রন করবেন সেখানে কাজ বাধাগ্রস্থ হবে এটা অনুমান করাই যায়।
প্রতিটি সমাজেই
কিছু মানুষ সমাজ সংস্কারকের ভুমিকা নেন। এই উপমহাদেশে বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়
উদাহরন রেখে গেছেন। তাদের কালের তুলনায় বর্তমানে বিশেষজ্ঞ অনেক বেশি। সমস্যা
হচ্ছে, তারা সমস্যার গভিরে যেতে আগ্রহি নন, এমনকি মুল সমস্যা কোথায়, কারন কি
সেদিকে দৃষ্টি দিতেও আগ্রহি নন। কিংবা সমালোচকের ভাষায় বলা যেতে পারে তারাও
রাজনৈতিক নেতাদের সন্তুষ্ট রেখে চলেন। সারা বিশ্বে একথা প্রচলিত যে নেতারা সাধারন
জনগনকে বোকা রাখতে পছন্দ করেন। সেটা সম্ভব হলে খুব সহজে তাদের নিয়ন্ত্রন করা যায়।
অযোগ্য নেতাকেও তারা মাথায় তুলে রাখে।
সত্যিকারের
সমাজ সংস্কারকের ভুমিকা থাকলে হয়ত শোনা যেত কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষয়টি ঢুকানো
যায়, কিভাবে অভিভাবকের আচরন শেখানো যায়, কিভাবে ক্রেতাকে ব্যবসায়ীর ঠকানোর
সন্দেহমুক্ত রাখা যায়। আমরা জানি সেটা করা হচ্ছে না। যত কথাই বলা হোক, ভেজাল জিনিষ
বিক্রি হচ্ছে, কৃষক এবং ক্রেতা ঠকছেন ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে ইত্যাদি।
বিষয়ের আরো গভীরে
না গিয়ে বরং কি করা সম্ভব দেখা যেতে পারে। একজন ফ্রিল্যান্সার সমাজ পাল্টাতে পারেন
না, বড়জোর নিজেকে পাল্টাতে পারেন। সমস্যা যখন জানা তখন আজ থেকেই নিজেকে বলতে শুরু
করুন, একাজ আমি নিজেই করব। শুরুতে কিছুটা খারাপ ফল হতেই পারে। কিছু কেনার উদাহরন বিবেচনায় আনা যাক,
আপনাকে বেশি দাম দিতে হতে পারে, টাকা দিয়ে ব্যবহার অযোগ্য জিনিষ কিনতে পারেন।
কদিনেই শিখে যাবেন কিভাবে দামাদামি করতে হয়, কিভাবে তর্ক করতে, প্রয়োজনে গালাগালি
করতে হয়। সমাজ যদি সেকাজে বাধ্য করে আপনি নিজেকে এর বাইরে রাখতে পারেন না।
বাংলাদেশে
মধ্যসত্ত্বভোগিরা সবচেয়ে লাভবান এটা যদি মেনেই নেন তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন তাদের
মুল যোগ্যতা কি। তাদের যোগাযোগের দক্ষতা খুব ভাল। একজন দালাল দুদিক থেকেই লাভ করেন
তারপরও দুপক্ষই তার ওপর নির্ভর করে। আপনার হয়ত পরের কাজে দালাল হওয়া প্রয়োজন নেই।
অন্তত নিজের কাজ নিজে করতে পারেন।
মনোবিজ্ঞানীরা
বলেন যাদের আত্ববিশ্বাস কম তারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে সেটা পুরন করতে
চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ হয়ত সেরা উদাহরন। পরিচিত একজন এনিমেটরের উদাহরন দেখা যাক।
এক সাক্ষাতকারে তিনি বললেন তার স্বপ্ন একদিন এনিমেটেড মুভি তৈরী করে অস্কারের জন্য
লাইনে দাড়াবেন।
যদি তিনি নিজে
এনিমেটর না হতেন তাহলে এই স্বপ্নে দোষ ছিল না। একজন দর্শক খুব সহজেই ক্রিকেটারের
ভুল ধরেন, সমালোচনা করেন। এতে দোষের কিছু নেই। একজন খেলোয়ার নিশ্চয়ই সেটা করবেন
না। কারন তিনি জানেন সাকিব কিংবা তামিম ওই বিশেষ ভুল করলেও তাদের সমকক্ষ খুব বেশি
নেই। বাংলাদেশে বহু ব্যক্তি হলিউডের মত এনিমেটেড মুভি তৈরীর স্বপ্ন দেখেন। সেটা
বিশ্বাসও করেন। যা জানা প্রয়োজনবোধ করেন না তা হচ্ছে ১৫ কোটি মানুষের দেশে বহু
মেধাবী ব্যক্তি রয়েছেন যাদের শিক্ষা, মানসিকতা, অর্থ, যন্ত্রপাতি সবকিছু থাকার পরও
উল্লেখযোগ্য এনিমেটেড মুভি তৈরী হয়নি। নিজেকে
তাদের সবার চেয়ে যোগ্য মনে করা নিশ্চয়ই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। অতিরিক্ত
আত্মবিশ্বাস ভাল ফল বয়ে আনে না।
ফ্রিল্যান্সারের
প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, তবে সেটা বাস্বসম্মত হওয়াই ভাল।
apnar lekha gulo niom iti pori dada.. keep it up
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteআপনার লেখা ভালো লাগে। ধন্যবাদ আমাদের পাশে থাকার জন্য
ReplyDelete