Tuesday, August 28, 2012

ফ্রিল্যান্সিং এর সমস্যা কোথায়


বাংলাদেশে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যত কথা বলা হয় অন্য কোন দেশে এতটা হয় কিনা আমার জানা নেই। নিয়মিত সেমিনার, টকশো, বক্তৃতা, বিবৃতি, পরামর্শ সবকিছুই হচ্ছে। বাস্তবে এর প্রতিফলন কতটা ঘটছে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কমবেশি সবাই জেনে গেছেন অনলাইনে কাজ করে বহু টাকা আয় করা যায়। যদি সত্যিসত্যি সেটা হত তাহলে প্রতিদিন হাহাকারের খবর শুনতে হত না। আয় থাকলে ভ্যয় করা যায়। বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ দ্রব্যমুল্য, বাড়িভাড়া, বিদ্যুতের দাম, পরিবহন খরচ এর নিয়ে হাহাকার করছে। কাজেই ধরে নেয়া যায় বাস্তবে এভাবে আয় হচ্ছে না।
অনেকেই হয়ত এর কারন নিয়ে ভিন্নমত পোষন করবেন। তারপরও এরসাথে জরিত থাকার কারনে কিছু কারন উল্লেখ করতে হচ্ছে।

.          শেখার সুযোগ নেই
গ্রাফিক ডিজাইনকে উদাহরন হিসেবে নেয়া যাক। কোন ব্যক্তি একাজে দক্ষ হয়ে অনলাইনে কাজ করতে চান। তার সামনে শেখার সুযোগ কতটা ?
বড়কোন কোন ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া। দুতিন মাস এমন কারো কাছে শেখা যিনি নিজেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করেননি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে অনেক প্রশিক্ষকের স্থানীয় কাজ করার যোগ্যতাও নেই। কখনো নিজে কাজ করেননি। কোথাও ট্রেনিং নিয়েছেন বর্তমানে ট্রেনিং দিচ্ছেন।
তারকাছে শিখে কতটা দক্ষ হওয়া সম্ভব ?
অন্যভাবে দেখা যাক। কোন ব্যক্তি পড়াশোনা করছেন নির্দিস্ট কোন বিষয়ে, এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ হবেন। তারজন্য গ্রাফিক ডিজাইনে পড়াশোনার সুযোগ নেই কেন ?  কেউ যদি ছবি আকা শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান, যিনি এনিমেটর হতে চান তাকে অন্য বিষয়ে পড়তে হবে কেন ?
সমস্যা এক, অন্যান্য দেশের মত পেশাদার কাজের সাথে সম্পর্কিত উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই।
.          স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ নেই
পাইরেসি সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, যেখানে পাইরেসি নিয়ন্ত্রন করা হয় না সেখানে প্রোগ্রামার তৈরী হয় না। বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে শীর্ষ উদাহরন হতে পারে। যিনি প্রোগ্রামার হতে চান তারজন্য কোন নিরাপত্তা নেই। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। একজন প্রোগ্রামার যেমন স্থানীয়ভাবে কাজ করে সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে একসময় আন্তর্জাতিক মানে পৌছান, অন্য কাজেও স্থানীয়ভাবে কাজ করে অভিজ্ঞতা বাড়ানো প্রয়োজন হয়।
বাংলা টিউটর সাইটের অভিজ্ঞতা থেকে একথা অনায়াসে বলা যায়, অনেকেই যে আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করেন ক্রমেই সেটা কমতে থাকে। কারন তাদের কাজ করার সুযোগ নেই। এই সাইটে যত সহজে সফলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা বাস্তবসম্মত না। ব্যক্তিগতভাবে নিজের দুই দশকের অভিজ্ঞতার বিষয়টি সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
সমস্যা দুই, যদি বাস্তবে ফ্রিল্যান্সার তৈরী করতে হয় (বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যা অত্যন্ত জরুরী) তাহলে স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন সব দেশেই ছাত্ররা পড়াশোনার সময় পার্টটাইম কাজ করে। বাংলাদেশে তার প্রচলন নেই। যত দ্রুত এদিকে দৃষ্টি দেয়া যায় ততই মংগল।
.          ভুল তথ্য প্রচার করা
ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং সম্পর্কে সবসময়ই ফুলিয়ে-ফাপিয়ে বলা হয়। এভাবে সহজেই লক্ষ টাকা আয় করা যাবে একথা বলার সময় কি দক্ষতা প্রয়োজন সেকথা উল্লেখ করা হয় না। ফলে প্রত্যেকেই টাকা বিষয়টি শিখে নেন, যোগ্যতার বিষয়ে মাথা ঘামান না।
কাউকে আশাবাদী করা ভাল। সেটা এমন পর্যায়ে যাওয়া উচিত না যারফলে ভুল ধারনা তৈরী হয়। যিনি কখনো কম্পিউটারের সামনে বসেননি তিনিও মনে জানেন ইন্টারনেট থেকে কোটিপতি হওয়া যায় এধরনের প্রচার সুফল বয়ে আনছে না।
সমস্যা তিন, টাকা আয় সংক্রান্ত বক্তব্য দেয়ার সময় সংযম প্রয়োজন। বাংলাদেশে বহু লক্ষ মানুষ লাভের আশায় শেয়ার বাজারে সর্বস্ব খুইয়েছে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগর প্রচারে রোড শো করা হয়েছে। এই উদাহরন আউটসোর্সিং প্রচারনার পদ্ধতির সাথে তুলনীয়। সফলতার জন্য এধরনের প্রচারনা বন্ধ করা প্রয়োজন।

যারা চেষ্টা করছেন তারা আরো ভালভাবে নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতে পারেন। সমাধান চান এমন কোন সমস্যার কথা জানাতে পারেন মন্তব্য লিখে।

3 comments:

  1. সহমত|
    http://boi-download.blogspot.com/

    ReplyDelete
  2. আরেকটা আছে......... টাকা পাওয়ার সমস্যা..... কেউ যদি কাজ করতে গিয়ে দেখে তার টাকা পাওয়া অনিশ্চিত...... তাহলে তার আগ্রহ দক্ষতা দুটোই কমে যাবে......

    ReplyDelete