Tuesday, April 12, 2011

ফটোগ্রাফি টিউটোরিয়াল : সঠিক রঙের জন্য হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করুন

ছবি উঠানোর সময় এপারচার, সাটার স্পিড, আইএসও ইত্যাদি বিষয় এতটাই গুরুত্বপুর্ন যে হোয়াইট ব্যালান্স বিষয়টি অনেকসময়ই গুরুত্ব পায় না। ফল হিসেবে ছবিতে পাওয়া যায় কখনো নিলচে, লালচে বা সবজেটে ভাব। হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে এই সমস্যা দুর করা যায় সহজেই।
একচু জেনে নেয়া যাক হোয়াইট ব্যালান্স বিষয়টি কি ?
ছবিতে সবচেয়ে আলোকিত এবং সবচেয়ে অন্ধকার দুটি বিন্দুর কথা চিন্তা করুন। সবচেয়ে আলোকিত অংশের রং হওয়ার কথা একেবারে সাদা, সবচেয়ে অন্ধকার অংশ হওয়ার কথা একেবারে কালো। সাদাকে পুরোপুরি সাদা দেখানোর ব্যবস্থাকে বলে হোয়াইট ব্যালান্স।
এর পেছনে রয়েছে কিছুটা আলো তত্ত্ব। প্রতিটি রঙের রয়েছে সাদার তুলনায় নিজস্ব বৈশিষ্ট। একে পরিমাপ করা হয় কেলভিন তাপমাত্রার স্কেলে এবং নাম কালার টেম্পারেচার। আলট্রাভায়োলেট শর্ট ওয়েব লেন্থের কালার টেম্পারেচার বেশি, যেমন সাদা হচ্ছে ৫৬০০ ডিগ্রী কেরভিন, অন্যদিকে ইনফ্রারেড লং ওয়েভের টেম্পারেচার কম, ২০০০ ডিগ্রী কেলভিন। বেগুলি থেকে লালের দিকে মাঝের রংগুলি ক্রমাম্বয়ে নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা ইত্যাদি। বৈজ্ঞানিভাবে কালার টেম্পারেচার হচ্ছে কার্বনকে উত্তপ্ত করলে বিভিন্ন কেলভিন টেম্পারেচারে রঙের যে পরিবর্তন হয় সেটা। যেমন ২০০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কার্বনের রং লাল। ৫৬০০ ডিগ্রীতে একেবারে সাদা।
সুর্যের উদাহরন বিবেচনায় আনতে পারেন। দুপুরে যখন কালার টেম্পারেচার সবচেয়ে বেশি তখন আমরা সাদা আলো পাই, অন্যদিকে সুর্যোদয় কিংবা সুর্যাস্তের সময় কৌনিক অবস্থানের কারনে কালার টেম্পারেচার কমে যায়, আমরা পাই লালচে এবং হলদেটে সোনালী আলো।
আমরা চোখে দেখার সময় খুব সহজে চোখ তারসাথে মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ক্যামেরা নিজে থেকে সেটা করে না। ফল হিসেবে সুর্যাস্তের ছবি উঠানোর সময় যদি দুপুরের কালার টেম্পারেচারের হোয়াইট ব্যালান্স সেটিং ব্যবহার করা হয় সেখানে লালচে-হলুদ রং থাকবে না। আপনিও সঠিক রং পাবেন না। হোয়াই ব্যালান্স সেটিং এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে আপনি পেতে পারেন নিখুত রঙের ছবি।
অধিকাংশ ক্যামেরায় হোয়াইট ব্যালান্স সেটিং এর জন্য কয়েকটি অপশন থাকে। এদের একটি অবশ্যই অটো যেখানে ক্যামেরা নিজেই আলো বিশ্লেষন করে ঠিক করে নেয় কোন ধরনের হোয়াইট ব্যালান্স ব্যবহার করবে। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা এটা ব্যবহার করেন সবচেয়ে কম।
এছাড়া থাকে সরাসরি সুর্যের আলো, মেঘলা দিন, ছায়া, মোমের আলো, ফ্লুরোসেন্ট টিউবের আলো, সাধারন আলো, ফ্লাশ ইত্যাদি নাম। যখন যে আলোয় ছবি উঠাতে চান তখন সেটা সিলেক্ট করে নিতে পারেন।
অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফাররা এতে সন্তুষ্ট নন (সেকারনেই তাদের ছবি ভাল হয়)। তাদের জন্য কিছু ক্যামেরায় রয়েছে ডিগ্রী কেলভিন মান দেখে হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করা। এজন্য আপনাকে জানতে হবে কোন আলোর কালার টেম্পারেচার মান কত। কাজটি কঠিন।
অনেক ক্যামেরায় যেখানে ছবি উঠাচ্ছেন সেখানকার কালার টেম্পারেচার যাচাই করার ব্যবস্থা থাকে। একমাত্র এভাবেই একেবারে সঠিক কালার টেম্পারেচার ব্যবহার করা সম্ভব।
যেমন নাইকন ডি৯০ ক্যামেরাকে উদাহরন হিসেবে দেখুন,
.          মেনু থেকে Preset Manual সিলেক্ট করুন
.          যেখানে ছবি উঠাবেন সেই পরিস্থিতিতে একটি সাদা কাগজ (অথবা একেবারে সাদা অন্যকিছু) রাখুন
.          Aparture Priority মোডে যান
.          হোয়াইট ব্যালান্স বাটন চেপে ধরে কমান্ড ডায়াল ঘুরাতে থাকুন যতক্ষন না প্রিসেট দেখা যায়।
.          হোয়াইট ব্যালান্স বাটন ছেড়ে দিন, এরপর আবারও চেয়ে ২ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ডিসপ্লেতে প্রিসেট আইকণ ব্লিংক করতে থাকবে।
.          পুরো স্ক্রিনে সাদা কাগজটি ফোকাস করুন।
.          সাটার রিলিজ বাটন চাপ দিন।

কোন ছবি উঠবে না কিন্তু ক্যামেরা সেই পরিস্থিতির  হোয়াইট ব্যালান্স এর জন্য মান রেকর্ড করবে। সঠিক মান রেকর্ড হলে ডিসপ্লেতে Good লেখা পাবেন।
পরিবেশ কিংবা আলোর পরিবর্তনের সাথেসাথে এই মানও পরিবর্তিত হতে পারে। কাজেই যায়গা বা সময় পরিবর্তনের পর আপনাকে পুনরায় এই সেটিং ঠিক করে নিতে হতে পারে। বড়জোর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে এটা করতে। আপনার ক্যামেরায় যদি এই ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করুন।

*** অন্য ক্যামেরার জন্য পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে। সেটা জানার জন্য আপনার ক্যামেরার ম্যানুয়েল দেখুন।

ডিজিটাল ফটোগ্রাফি বিষয়ে অন্যান্য পোষ্ট

2 comments:

  1. ছবিতে হিস্টগ্রামের ব্যবহার কি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হিসটোগ্রাম হচ্ছে আলো কিংবা সাদা থেকে কালো পর্যন্ত রয়ের গ্রাফিকাল মান। ফটেচাশপের টিউটোরিয়ালে এসম্পর্কে লেখা রয়েছে।

      Delete