Thursday, May 19, 2011

১২ হাজার টাকার ল্যাপটপ এবং

বছরখানেক আগে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ১০ হাজার টাকায় ল্যাপটপ বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। বছরখানে পর আরেকবার জানানো হয়েছে দেশেই ল্যাপটপ তৈরী হবে এবং সেগুলি বিক্রি করা হবে ১২ থেকে ২৪ হাজার টাকা দামে। সবশেষ খবর, আগামী মাসেই ১২ হাজার টাকায় ল্যাপটপ বিক্রি শুরু হবে। কাজেই আপনি এবিষয়ে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতেই পারেন। আগামী মাস আসতে সপ্তাহদুয়েক বাকি।
শুরু থেকেই ল্যাপটপ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, কাজেই ল্যাপটপ বিষয়টি একবার ভালভাবে দেখে নেয়া যাক। ল্যাপটপ হচ্ছে ভাজকরা একধরনের কম্পিউটার। ভাজ খুললে একদিকে স্ক্রীন আরেকদিকে কিবোর্ড পাওয়া যায়। স্ক্রীনের মাপ ১০ ইঞ্চি থেকে শুরু করে সাধারন মনিটরের সমান কিংবা বড় হতে পারে। নিজে ব্যক্তিগতভাবে ১৭ ইঞ্চি ব্যবহার করি, আরও বড়ও আছে।
এগুলি সহজে বয়ে নেয়া যায়, যে কোন যায়গায় হাটুর ওপর রেখে ব্যবহার করা যায়। সেকারনেই এমন নাম। আরও কিছু ভাগ রয়েছে। যেমন নোটবুক, নেটবুক ইত্যাদি। নোটবুকগুলি পুরোপুরি কম্পিউটারের মতই। ডেস্কটপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নেটবুক সেতুলনায় হাল্কা কাজের জন্য। প্রসেসরের ক্ষমতা কম, ডিস্কের যায়গা কম, বদলে জোর দেয়া হয়েছে ইন্টারনেটের দিকে। মুলত ইন্টারনেটে কাজ করবেন এবং সাথে ওয়ার্ডপ্রসেসিং এর মত সাধারন কাজ করবেন।
ব্যবহারিক দিক থেকে নোটবুক পুরোপুরি ডেস্কটপের বিকল্প। পেশাদার কাজ করুন, গেম খেলুন, ভিডিও দেখুন, কোন কমতি নেই। নেটবুকে কিছুটা রয়েছে। উচুমানের ভিডিও দেখা যাবে না, থ্রিডি গেম খেলা যাবে না, বড় ধরনের এপ্লিকেশনও ব্যবহার করা যাবে না।
আরেক ধরনের কম্পিউটার বর্তমান সময়ে রীতিমত জনপ্রিয়। ট্যাবলেট। এগুলিতে সাধারনত কিবোর্ড অংশ থাকে না। বড় আকারের টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোনের সাথে তুলনা করতে পারেন। ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়, এর নিজস্ব গেম খেলা যায়, এর নিজস্ব এপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করা যায়। এর অপারেটিং সিষ্টেম মোবাইল ফোনের মত (অন্তত এখন পর্যন্ত)। কাজেই ল্যাপটপের মত সফটঅয়্যার এতে ব্যবহার করা যায় না।
দামের দিক থেকেও পার্থক্য রয়েছে। ট্যাবলেট পাওয়া যায় ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারে। এই দামে নেটবুকও পাওয়া যায়। নোটবুক হলে নেটবুকের থেকে বেশি, কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হবে পারে।
আরেকটি বিষয় এরসাথে যোগ করা যাক। ভারতের মন্ত্রী কপিল শৈবাল বেশ কয়েকবার একটি ট্যাবলেটের প্রোটোটাইপ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছেন। বলা হয়েছে একেবারে কমদামে সেগুলি বিক্রি করা হবে ছাত্রদের মধ্যে। বাস্তবে সেটা হয়নি। খবরটিও সম্ভবত হারিয়ে গেছে।
ব্যবহারকারীর দিক থেকেও কম্পিউটার এবং সফটঅয়্যারভেদে পার্থক্য রয়েছে। ইউরোপে-আমেরিকায় মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্থ। প্রতি মুহুর্তে তারা যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে ইমেইল, ফেসবুক, টুইটার। সেকারনে স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট তাদের প্রিয়। যারা পেশাদার কাজ করেন তাদের কাছে কম্পিউটার কেনা সমস্যা না। ছাত্রদের তো বটেই। অন্তত শিক্ষাপ্রতিস্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব আছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করা মানুষের সংখ্যা শতকরা ১ এর নিচে। কাজেই,
বিষয়গুলি একসাথে করে দেখা যাক। আপনি ১২ হাজার টাকার ল্যাপটপে আগ্রহি (আবারও মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে ল্যাপটপ শব্দটিউ ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের এই দামের ল্যাপটপ নেই।) কারন আপনি সেটা নিয়ে কোন পরিকল্পনা করছেন। হয়ত ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, হয়ত ওয়ার্ড প্রসেসিং এর মতকাজ করবেন, রিপোর্ট লিখবেন, হয়ত ভিডিও দেখবেন, গেম খেলবেন। আপনাকে ১২ হাজার টাকায় যে ল্যাপটপ দেয়া হবে তার বর্ননা কখনো দেয়া হয়নি। এর প্রোটোটাইপ তৈরী হয়েছে কিনা কখনো বলা হয়নি। একেবারে সরাসরি ষ্টেজে এসে যাবে সপ্তাহদুয়েকের মধ্যে, রিহার্সেল প্রয়োজন নেই। যদি আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্য ঠিক হয় তাহলে,
সেখানে হার্ডডিস্ক থাকবে না। বদলে স্মার্টফোনের মত মেমোরী থাকতে পারে। উইন্ডোজের মত অপারেটিং সিষ্টেম ব্যবহার করা যাবে না, ফলে প্রচলিত সফটঅয়্যারগুলি চলবে না। গেম খেলা যাবে না কারন গেম খেলার উপযোগি হার্ডঅয়্যারের স্মার্টফোনের দামই ৪০ থেকে ৫০ হাজার। ভিডিও দেখা যাবে না কারন সেখানেও একই কথা।
তাহলে কথা হচ্ছে ১২ হাজার টাকায় আপনাকে কি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে ? তার বর্ননা এত গোপনীয় কেন ?
এন্ড্রয়েড, ক্রোম ভিত্তিক কোন ডিভাইস (ল্যাপটপ !) যদি বাংলাদেশের মানুষের হাতে দেয়ার চিন্তা করা হয়, তাহলে বলতেই হচ্ছে, ইউটিউব-ফেসবুক সমাজের বিশেষ একটি শ্রেনীর মানুষের জন্য। তাদের ১২ হাজার টাকার খেলনায় আগ্রহ নেই।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্সের কোন যন্ত্রাংশ তৈরী করে না। যদি সত্যিসত্যিই ল্যাপটপ (!) তৈরী করা হয় তাহলে সবকিছু কিনে আনতে হবে অন্যদেশ থেকে। আর সেগুলি ব্যবহার করে যদি ২০০ ডলারের নিচে বিক্রি করা যেত তাহলে বাজারে ২০০ ডলারের ল্যাপটপ পাওয়া যেত। অন্তত চীনের দৌলতে আরো কমে পাওয়া যেত।
সরকার বাহাদুর মিথ্যে প্রচার করছেন একথা বলা ধৃষ্ঠতা। বরং সপ্তাহদুয়েক অপেক্ষা করে দেখা যাক।

No comments:

Post a Comment