Friday, February 3, 2012

ফ্রিল্যান্সিং কাজে পার্টনারশীপের ভাল-মন্দ

সাধারনত ফ্রিল্যান্সার একা কাজ করেন। কখনো কখনো পার্টনারশীপে কাজ করে অতিরিক্ত সুবিধে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দক্ষতার ফ্রিল্যান্সার একসাথে কাজ করলে বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া সহজ হয় অন্যদিকে একই ক্লায়েন্টের ভিন্ন ধরনের কাজ থাকলে সেটা হাতছাড়া হয় না।
পার্টনারশীপের সবকিছু ভাল একথা ধরে নেয়াও ঠিক না। অনেক কারনে পার্টনারশীপ সমস্যার কারনও হতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং কাজে পার্টনারশীপ গড়ার আগে ভাল এবং মন্দ সবদিক বিবেচনা করে নেয়াই ভাল।


ভাল দিক

.          অনেক বেশি ধরনের কাজ করা যায়
পার্টনারশীপের সবচেয়ে বড় সুবিধে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ থাকা। আপনি একাই গ্রাফিক ডিজাইন, এনিমেটেড ব্যানার তৈরী, ওয়েব সাইট ডিজাইন সবকাজে দক্ষ হতে পারেন না। যদিও একই কাজে এর তিনটিই প্রয়োজন হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন কাজে দক্ষ কয়েকজন একসাথে কাজ করলে এধরনের কাজ করতে পারেন, অন্যথায় কাজ ছেড়ে দিতে হয়।
.          বেশি কাজ পাওয়া যায়
একা একজনের পক্ষে ক্রমাগত কাজ খোজা, ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, কাজ করা সবকিছু করতে হলে কাজের সংখ্যা কমিয়ে দিতে হয়। শুধুমাত্র যোগাযোগের কাজ একজন করলে আরেকজনের পক্ষে অনেক ভালভাবে কাজ করা সম্ভব হয়। কাজেই একাধিক ব্যক্তি একসাথে কাজ করলে বেশি কাজ করা সম্ভব হয়।
.          প্রচারের ক্ষেত্র বাড়ে
একজন গ্রাফিক ডিজাইনের যেমন নিজস্ব পরিচিতি তৈরী হয় একইভাবে একজন ওয়েব ডিজাইনারেরও নিজের পরিচিতি তৈরী হয়। ফলে কাজ পাওয়া সহজ হয়।
.          কাজের মান উন্নত হয়
একাধিক বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তি তাদের দক্ষতা একসাথে করলে কাজের মান উন্নত হবে এটাই স্বাভাবিক। একজনের দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা থেকে আরেকজন শিক্ষালাভ করতে পারে। ফলে ক্রমেই কাজের উন্নতি হতে থাকে।
.          দলগত কাজের সুবিধে
অনেক ফ্রিল্যান্সারই একা কাজ করে একধরনের একাকিত্বের সমস্যায় পড়েন। অন্যের সাথে যোগাযোগ কমতে থাকে, একসময় পুরোপুরি শুধুমাত্র কাজ নিয়েই সময় কাটা হয়। দল হিসেবে কাজ করলে কাজের এবং মানষিক দুধরনের চাপ কমার সুযোগ থাকে।

সমস্যার দিক

.          যোগ্য সহকর্মী পাওয়ার সমস্যা
কারো সাথে কাজ করে সুফল পাওয়ার জন্য একই ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন হয়। বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন। ভিন্ন ধরনের পরিবার, শিক্ষা, আচরন সবকিছুর কারনে এমন কিছু পার্থক্য থাকতে পারে যা সহজে ধরা যায় না অথচ কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরী করে।
.          নিয়ন্ত্রন রক্ষা করার সমস্যা
একা কাজ করার সময় সমস্ত কর্তৃত্ব নিজের হাতে থাকে। দলগতভাবে কাজের সময় অনেক সময়ই অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। আপনি হয়ত বহু চেষ্টায় নিজের ভাল পরিচিতি তৈরী করেছেন, অন্যের ওপর নির্ভর করায় সেই সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে।
.          খরচ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা
বেশি মানুষ কাজ করার অর্থ বেশি উপকরন প্রয়োজন হওয়া। যায়গা-আসবাবপত্র-কম্পিউটার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অতিরিক্ত খরচ করা প্রয়োজন হয়।
.          সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজে জটিলতা
নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়া সহজ। ভাল-মন্দ যাই হোক পুরো দায়িত্ব তখন নিজের। একাধিক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অন্যের মতের ওপর গুরুত্ব দিতে হয়। এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাল করলে প্রশংসা যেমন পেতে পারেন মন্দ ফল হলে সমালোচনার সম্মুখিন হতে হয়। সেই সমালোচনা অনেক সময় পার্টনারশীপ ভঙ্গের কারনও হতে পারে।

পার্টনারশীপ করবেন নাকি করবেন না, এককথায় উত্তর দেয়া সম্ভব না। যে সমস্যাগুলির উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি বাস্তব। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিছুটা বেশিই। কেউ কেউ বলেন পার্টনারশীপের ব্যবসায় গন্ডগোল হয় দুকারনে, ব্যবসায় লাভ হলে এবং ব্যবসায় ক্ষতি হলে। লাভ হলে পার্টনার বেশি অংশ আশা করেন, ক্ষতি হলে সেটা অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। প্রত্যেক পার্টনারের ছাড় দেয়ার মানষিকতা থাকা এই সমস্যার একমাত্র সমাধান।
সমস্যাগুলি বুঝে যদি মনে হয় অমুকের সাথে পার্টনারশীপ কাজ করা সম্ভব তাহলে অন্তত ট্রায়াল ভিত্তিতে কিছুদিন করে দেখতে পারেন। একসময় সেটা স্থায়ী হতে পারে।
আর সমস্যা যদি থেকেই যায় তাহলে একা কাজ করাই উত্তম।

No comments:

Post a Comment