Wednesday, May 30, 2012

ফ্রিল্যান্সার কখন ক্লায়েন্টকে না বলেন


ফ্রিল্যান্সারের জন্য না বলতে পারা গুরুত্বপুর্ন। যত বেশি কাজ করবেন তত বেশি আয় হবে একথা সবসময় বাস্তসম্মত হয় না। বরং তখনকার মত আয় হলেও একসময় দেখা যায় এতে লাভের তুলনায় ক্ষতির পরিমান বেশি।
অন্য যে কোন ব্যবসার মত ক্লায়েন্টকে না বলার কাজটি কঠিন। এজন্য নানা ধরনের পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। একেজন একেকভাবে কাজটি করেন। ফ্রিল্যান্সার না বলবেন, বলা প্রয়োজন একথা বলার সময় অবশ্যই এটাও মনে রাখা জরুরী, এর অর্থ এই না যে ক্লায়েন্টের সাথে খারাপ আচরন করতে হবে। বরং যে কারনে কাজ না করার সিদ্ধান্ত সেটা একসময় পাল্টাতেও পারে, তিনি অন্য ক্লায়েন্টের মত গুরুত্ব পেতে পারেন এই সম্ভাবনা রেখেই না বলা যুক্তিসংগত।
ক্লায়েন্ট কি কি কারনে না বলতে হয় তার একটি তালিকা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে;
.          স্বাভাবিক কাজের থেকে অনেক কম টাকায় কাজ করা
ফ্রিল্যান্সারের লক্ষ্য বেশি আয় করা, ক্লায়েন্টের লক্ষ যত কম টাকায় কাজ করানো সম্ভব সেই চেষ্টা করা। সেকারনেই বিড পদ্ধতির প্রচলন। প্রতিটি ফ্রিল্যান্সারের কাজের নির্দিস্ট একটি ধরন তৈরী হয়। তারচেয়ে উল্লেখযোগ্য কম রেটে কাজ করা উচিত না। অন্তত যদি বিশেষ কারন না থাকে। অনেক সময় অর্থ ছাড়াও অন্য সুবিধের বিষয় থাকতে পারে। সেটা ভিন্ন বিষয়।
.          স্বাভাবিক রেটের চেয়ে কিছু কম রেটে কাজ করা
ক্লায়েন্ট স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম টাকা দিতে চান, সাধারনভাবে এতে সম্মত না হওয়াই ভাল। তবে এমন ক্ষেত্রে সরাসরি কাজটি বাদ না দিয়ে বরং অন্যভাবে বলা যেতে পারে, কাজটি কিছু কম টাকায় করব এজন্য অতিরিক্ত সময় দিতে হবে। এরফলে অন্য কাজ করার পরও সেই কাজ করার সুযোগ তৈরী হতে পারে।
.          ভিন্ন বিষয়ে কাজ করতে বলা
আপনি হয় গ্রাফিক ডিজাইনার, আপনাকে বলা হল ওয়েব ডিজাইন করে দিতে (ওয়েব পেজ যেমন দেখা যাবে)। যদি সেকাজ নিয়মিতভাবে না করেন তাহলে হাত না দেয়াই ভাল। গ্রাফিক ডিজাইনের মধ্যেও একেজন একেক   বিষয়ে নিয়মিত কাজ করেন। কেউ লোগো, কেউ ব্যানার বিজ্ঞাপন, কেউ লিফলেট, কেউ সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড, বইয়ের প্রচ্ছদ ইত্যাদির কাজ করেন। প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হয়। এক কাজ ভাল করার অর্থ এই না সব কাজেই ভাল করবেন।
.          সংক্ষিপ্ত সময়ে কাজ করতে বলা
ফ্রিল্যান্সারকে যদি এমন সময়ে কাজ শেষ করতে বলা হয় যা বাস্তবসম্মত না তাহলে আগেই না করা ভাল। বরং সবসময়ই সআভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত সময় হাতে রেখে কাজ করা সুবিধেজনক।
.          ক্লায়েন্ট সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে
দ্বিতীয়বার ভাবা প্রয়োজন নেই, সরাসরি না করে দিন। যার সুনাম নেই তারসাথে কাজ করা যায় না।
.          জটিল কাজ
ফ্রিল্যন্সার শুরুতেই কাজটি বোঝার চেষ্টা করেন। যদি কাজের মধ্যে কোন জটিলতা থাকে, সেধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে সেকাজে হাত না দেয়াই ভাল।
.          চুক্তির চেয়ে অতিরিক্ত কজের অনুরোধ
যে কাজ করার কথা ক্লায়েন্ট তারসাথে অতিরিক্ত কিছু করাতে চান, এধরনের বিষয় থেকে দুরে থাকা ভাল। মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট হচ্ছে বিনামুল্যে (ফাউ) যে আশা করে তার চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকে। একসময় তাকে অধিকার মনে করে।
.          কাজ আপত্তিকর বিষয় রয়েছে
একজনের কাছে আপত্তিকর বিষয় অন্যজনের কাছে আপত্তিকর মনে নাও হতে পারে। তবু সাধারনভাবে কিছু বিষয়কে আপত্তিকর মনে করা হয়। সেগুলি থেকে দুরে থাকাই ভাল।
.          হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকা
হাতের কাজে যদি পুরো সময় দেয়া প্রয়োজন হয় তাহলে কোনভাবে সময় করে নেয়া যাবে একতা মনে করে নতুন কাজে হাত না দেয়াই ভাল।
.          ক্লায়েন্ট আগের পাওনা সময়মত দেননি
আগের হিসেব ঠিক না করে নতুন কাজে হাত দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ না।
.          কাজের পর্যান্ত তথ্য/উপকরন না থাকা
লেখালেখির কাজে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা।
.          অনৈতিক কোন কাজ করতে বলা
ক্লায়েন্ট এমন কাজ করার জন্য বলতে পারেন যা অনৈতিক বা আইনবিরোধী। এধরনের কাজ থেকে দুরে থাকাই ভাল।
.          নিকটজনের কাজ করা
বন্ধু বা আত্মিয়ের কাজ করা সমসময়ই কঠিন। সাধারনভাবে বলা হয় ব্যবসা এবং বন্ধুত্ব গুলিয়ে না ফেলাই ভাল। উদাহরন বলে এরফলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। কাজেই এধরনের কাজ এরিয়ে চলা সবচেয়ে ভাল।
.          বিনামুল্যে সেবা দেয়া
এধরনের কাজ থেকে দুরে থাকাই ভাল। যে কাজ ফ্রিল্যান্সারের অর্থ জোগান দেয় সেই কাজ বিনামুল্যে করার সুযোগ থাকে না। নিজের পেশার ক্ষতি করে অন্যের উপকার না করাই ভাল।
এর বাইরে আরো নানাবিধ কারনে কাজ না করার পরিস্থিতি হতে পারে। একজন পেশাদারের কাজে যেমন পেশাদারিত্ব থাকা প্রয়োজন তেমনি লেনদেন-চুক্তি ইত্যাদিতেও পেশাদারিত্ব থাকা প্রয়োজন। যদিও বাস্তবতা বলে মানুষ ঠকার পর শেখে। ক্রমাগত ঠকার চেয়ে অল্প ঠকে শেখাই ভাল।
কাজে পেশাদার নন, অর্থের হিসেবে পেশাদার এমন পরিচিতি  যেন তৈরী না হয় সেদিকেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। অর্থের বিষয়ে ফ্রিল্যান্সার যেমন ছাড় দেবেন না তেমনি ক্লায়েন্ট কাজের বিষয়ে ছাড় দেবেন না একথাও মনে রাখা প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment