Thursday, July 12, 2012

ফ্রিল্যান্সিং এবং পেশাদারিত্ব


সাধারনভাবে বলা হয় বাংলাদেশীদের পেশাদারিত্বে ঘাটতি আছে। চাকরী করার সময় বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য কর্তৃপক্ষ থাকে, তারা কোনভাবে কাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সার  হিসেবে কাজ করার সময় নিজেকেই নিজের সবকিছু দেখতে হয়। ফলে এটা রীতিমত সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
এই পোষ্টে বাস্তব কিছু সমস্যা উল্লেখ করে সেগুলির সমাধান সম্পর্কে জানানো হচ্ছে।
.          পেশাদারিত্বের প্রথম বৈশিষ্ট, কাজের দায়িত্ব নেয়া
দির্ঘদিন কাজ করার একটা সুবিধে হচ্ছে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ। এধরনের একটি অভিজ্ঞতা হচ্ছে তথাকথিত কিছু পেশাদার দেখার সুযোগ যারা সবসময় নিজেদের পেশাদার বলে উল্লেখ করেন। একথা বলেন টাকা নেয়ার সময়। আমি পেশাদার, টাকা ছাড়া কাজ করি না, এটাই তাদের বক্তব্য। অথচ যে কাজ করার কথা সেবিষয়ে নুন্যতম আগ্রহ নেই, অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতাও নেই। কাজ দেয়ার পর ক্লায়েন্টকে তার পেছনে ঘুরতে হয়। ফল হিসেবে একসময় এধরনের পেশাদার বাটপার নামে পরিচিতি লাভ করেন।
পেশাদারিত্বের প্রথম বৈশিষ্ট কাজের দায়িত্ব নেয়া। যে কাজে হাত দেবেন সেটা সময়মত, ভালভাবে শেষ করা। কোন সমস্যার সম্ভাবনা থাকলে সেকাজে হাত না দেয়া এবং সেটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া।
কাজেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ নেয়ার  পেশাদার হওয়ার জন্য আগে কাজ যাচাই করুন, পুরোপুরি নিজের আওতার মধ্যে হলে কাজ শুরু করুন এবং সময়মত শেষ করুন।
.          কাজের চুক্তি ঠিক করে নিন
চুক্তিভিত্তিক কাজের প্রথম ধাপ চুক্তি ঠিক করা। আপনি কারো কাজ করে দেবেন, সেই কাজটি কি তারকাছে ভালভাবে লিখে নিন। কখনোই মৌখিক নির্দেশে কাজ করবেন না। তিনি যদি মৌখিক নির্দেশ দিতে থাকেন তার চাহিদা কখনোই শেষ হবে না। মত দেয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তি যদি থাকেন তাহলে নিশ্চিত প্রত্যেকেই নিজের দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করবেন। সমাজে বহু মানুষের দেখা পাবেন যারা নিজের কাজ বোঝেন না, অন্যের কাজ কিভাবে করা উচিত নিখুতভাবে বলে দিতে পারেন।
সহজ কথায়, কাজের বর্ননা, পরিমান আগেই  ঠিক করে নিন। সেখানে অতিরিক্ত কিছু যোগ করলে, বড় ধরনের পরিবর্তন করলে সেজন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা রাখুন। ক্লায়েন্টকে সামনে বসিয়ে রেখে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
.          যথেষ্ট সময় হাতে রাখুন
কাজ করতে যতটা সময় প্রয়োজন সম্ভব হলে তারচেয়ে বেশি সময় হাতে রাখুন। ইলেকট্রিসিটি সমস্যা থেকে নানা কারনে সময়মত কাজ শেষ করা সম্ভব না হতে পারে। এই সমস্যাগুলির দায় ক্লায়েন্টের ওপর চাপাবেন না। কখনোই সময়মত কাজ দিতে না পারার অবস্থা তৈরী করবেন না।
.          অর্থের বিষয়ে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিন
একটু আগে যেমন অর্থকে মুল বিষয় হিসেবে দেখার খারাপ দিক উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি অর্থকে গুরুত্ব না দেয়াও পেশাদারিত্বে বিরোধী। কোজ কাজ করার পেছনে অর্থব্যয় ছাড়াও সময়, মেধা এবং ধীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিনামুল্যে সেটা হতে পারে না। এই সমস্যা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই না, সারা বিশ্বেরই। স্থানীয় কাজে তো বটেই, অনলাইনে কাজ করে টাকা না পাওয়ার ঘটনাও ঘটে। আমেরিকান এনিমেশন শেখার বইতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে, টাকা না দিলে সেকাজ করবেন না। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে অনেকে মনে করেন পরিচিতির জন্য আপাতত টাকা ছাড়া কাজ করি। এরফলে নিজে যেমন কখনোই এই পদ্ধতির বাইরে যেতে পারেন না তেমনি সরাসরি অন্য পেশাদারদের ক্ষতি করেন।
কারো কাজ করলে বিনিময়ে কিছু নিন। সবসময় টাকা হতে হবে এমন কথা নেই, কোনভাবে নিজের কিছু উপকার নিন।
.          বাকি রাখবেন না
আপাতত সমস্যা আছে, কদিন পর টাকা দেব, একথা শোনেননি এমন ফ্রিল্যান্সার (কিংবা ব্যবসা প্রতিস্ঠান) পাওয়া কঠিন। একবার বাকি জমা হলে সেই টাকা পাওয়ার কারনে আরো বাকি জমা হতে থাকে। খোজ নিলে দেখবেন গ্রাফিক ডিজাইন, এনিমেশন, প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ট্রেনিং, ছাপাখানা পর্যন্ত বহু ধরনের কাজে অনেকে পেশা ত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত বাকির কারনে।
বাকি সবসময়ই ফাকি, এটা ধরে নিন।
.          নিজের দক্ষতা বাড়ান
দক্ষতাই ফ্রিল্যান্সিং কাজের সম্পদ। কাজেই একথা শুরুতে উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল হয়ত। বিশেষ কারনে শেষে উল্লেখ করা হচ্ছে।
দক্ষতা লাভের শেষ নেই, পরিমাপের মাপকাঠিও নেই। আপনি যত দক্ষই হোন না কেন, কোন বিশেষ ক্লায়েন্ট আপনাকে বলেই বসবেন আপনি কাজ জানেন না, কারন তার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিল হয়নি।
ভাষার মত প্রতিটি কাজের ব্যাকরন রয়েছে। সেটুকু জানা আপনার কর্তব্য। সেগুলি ব্যবহার করে কাজ করাও কর্তব্য। বাস্তবে কাজ করার সময় ক্লায়েন্টের দৃষ্টিভঙ্গি, চাহিদা ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে কাজ করুন। তিনি যদি অদ্ভুত কিছু চান সেটাই দিন।
ক্লায়েন্টের মনোভাব বুঝতে পারা একধরনের দক্ষতা। কাজের দক্ষতার সাথে এটাও বাড়াতে চেষ্টা করুন।

প্রতিটি ব্যবসায়ী বা ফ্রিল্যান্সারের এসব বিষয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়। অন্যদের অভিজ্ঞতার কথা শুনুন, নিজের অভিজ্ঞতা অন্যকে জানান। বিশেষ কোন ক্লায়েন্ট যদি একজনকে ঠকান, তিনি অন্যদেরও ঠকাতে চেষ্টা করবেন। তাদের থেকে সাবধান থাকুন।
একজন ভুল করলে ফলভোগ করতে হয় অন্যদেরও। একজন অপেশাদার ফ্রিল্যান্সার আরেকজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রতিদ্বন্দি মনে করেন। বাস্তবে নিজেদের মধ্যে ভাল যোগাযোগ রেখে সকলেরই উপকৃত হওয়া সম্ভব।

1 comment: