Saturday, December 24, 2011

এফিলিয়েট প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ইন্টারনেটে আয়ের ভাল-মন্দ

ইন্টারনেটে আয়ের যতগুলি পদ্ধতি আছে তারমধ্যে এফিলিয়েট প্রোগ্রাম সবচেয়ে লাভজনক। বিষয়টি হচ্ছে আপনি ইন্টারনেটে অন্যের পন্য বা সেবা বিক্রি করবেন। বিক্রি হলে কমিশন পাবেন। যারা ইন্টারনেটে ব্যবসা করেন তারা নিজেরা যে পরিমান বিক্রি করতে পারেন তারথেকে অনেক বেশি বিক্রি হয় এই পদ্ধতিতে, সেকারনে তাদেরও আগ্রহ থাকে এফিলিয়েশনের দিকে।
এফিলিয়েট প্রোগ্রামে ভাল দিক যেমন রয়েছে তেমনি বেশকিছু সমস্যাও রয়েছেঅ অন্তত বাংলাদেশে সীমাবদ্ধতার অভাব নেই।  সমস্যা এড়িয়ে কিভাবে এফিলিয়েটম প্রোগ্রামকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন সেই বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে।


এফিলিয়েট প্রোগ্রাম কি
সহজ কথায় এফিলিয়েট প্রোগ্রাম হচ্ছে অন্য কোন কোম্পানী হয়ে প্রচার করা। যেমন অনলাইনে সবচেয়ে বড় বিক্রেতা আমাজন। তাদের সদস্য হলে তারা  যাকিছু বিক্রি করে সেগুলি আপনার সাইটে রাখার ব্যবস্থা করবেন। আপনার কাজ এটুকুই। ভিজিটর যখন সেই লিংকে ক্লিক করে পন্য কিনবেন তখন আপনার নামে বিক্রির কমিশন জমা হবে।
বাস্তবে এফিলিয়েশন বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন আমাজন কিংবা বেষ্টবাই এর ক্ষেত্রে তাদের পন্য বিক্রি হলে কমিশন পাবেন, বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আপনি টাকা পাবেন না। পে-পার-সেল নামে পরিচিত এই পদ্ধতি। কোন কোন কোম্পানীর ক্ষেত্রে তাদের সাইটে গিয়ে ফরম পুরন করলে বা কিছু একটা করলে টাকা পাবেন। একে বলা হয় পে-পার-একশন। আর কোন কোন এফিলিয়েশনের ক্ষেত্রে লিংকে ক্লিক করলেই টাকা পাবেন। পিপিসি, পিটিসি এই ধরনের এফিলিয়েশন।

কিভাবে করতে হয়
আপনার প্রচার যত জোড়ালো আয়ের সম্ভাবনা তত বেশি। বড় ধরনের কোম্পানীর জন্য আপনার নিজস্ব ডোমেন সহ ওয়েবসাইট থাকতে হবে, অনেক কোম্পানীর জন্য ব্লগারের মত বিনামুল্যের ব্লগ থাকাই যথেষ্ট, আবার কোন কোন কাজে ফেসবুক বা ইমেইল ব্যবহার করেও আয় করা সম্ভব।
যে কোম্পানীর এফিলিয়েশন নিতে চান তাদের সাইটে গিয়ে নিয়মগুলি দেখে নিন। এরপর এফিলিয়েশনের লিংকে ক্লিক করে সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করুন। প্রায় সমস্ত এফিলিয়েশন নেয়া যায় বিনামুল্যে।

এফিলিয়েশনের সমস্যা
এফিলিয়েশন প্রোগ্রাম ব্যবহার করে খুব সহজে হাজার ডলার আয় করা যায়। অন্তত কাগজে কলমে। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে এধরনের কাজে সীমাবদ্ধতা অনেক। বিষয়গুলি আগে অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে, আবারও করা হচ্ছে। বিষয়গুলি মাথায় রেখে কাজের চেষ্টা করুন।
.          পেপল না থাকা একটি বড় সমস্যা। অনেকেই টাকা দেবেন পেপলের মাধ্যমে। বাংলাদেশ থেকে পেপল ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় আপনাকে সেই কোম্পানী বাদ দিয়ে ভাবতে হবে।
.          এফিলিয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানী হচ্ছে কমিশন জাংশন। তাদের সদস্য হলে হাজার হাজার পন্য থেকে বাছাই করে নিজের সাইটে বিক্রির জন্য রাখতে পারেন। ক্লিকব্যাংক একটি সেবামুলক সাইট যেখানে সদস্য হলে আপনার কোন লিংকে কতবার ক্লিক হয়েছে সেই তথ্য জমা হয়। এদের কথা উল্লেখ করার কারন হচ্ছে পেপলের মত এই সেবাগুলিও বাংলাদেশ থেকে ব্যবহার করা যায় না। কাজেই আপনার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
.          বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ নেই। ফলে আপনি সাইটে যতকিছুই রাখুন না কেন, বাংলাদেশ থেকে কেউ কেনার জন্য ক্লিক করবেন না। কাজেই আপনার বিক্রির জন্য অন্য দেশের ক্রেতার ওপর নির্ভর করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকতেই পারে, তারা তাদের দেশের সাইট বাদ দিয়ে আপনার সাইট থেকে কিনবেন কেন ?

আপনি কি করতে পারেন
ওপরে উল্লেখ করা সমস্যাগুলি এমনই যার সমাধান আপনার হাতে নেই। বাংলাদেশ সরকার পেপল ব্যবহারের সুযোগ দেবেন না, অনলাইনে লেনদেনের সুযোগ দেবেন না।  ফল হিসেবে অনেক সাইটের দরজা বাংলাদেশের জন্য বন্ধ, ধারনা করা যায় আগামীতে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। সামান্য কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারত, কিন্তু এসব কথা বলা অর্থহীন।
এই সমস্যাগুলি এড়িয়ে আপনার করার সুযোগ খুব বেশি নেই। তারপরও কেউ কেউ নাছোড়বান্দার মত কিছু করছেন। আপনিও তাদের অনুসরন করতে পারেন।
.          যদি নিজস্ব ওয়েবসাইট/ব্লগ না থাকে তাহলে সেটা চালু করুন। সাইটের পরিচিতি যত বেশি আয়ের সম্ভাবনা তত বেশি এবং পরিচিতির জন্য বহু সময় প্রয়োজন হয়। কাজেই যত দ্রুত শুরু করবেন তত এগিয়ে থাকবেন।
.          বিভিন্ন কোম্পানীর এফিলিয়েশনের নিয়মগুলি পড়ে দেখুন। বাংলাদেশ থেকে যেগুলি করা সম্ভব এবং লাভজনক তার সদস্য হোন। সিপিএ থেকে পিটিসি/পিপিসি এফিলিয়েশনের দিকে বেশি গুরুত্ব দিন। নিজের সাইটে তাদের বিজ্ঞাপন/লিংক রাখুন।
.          সাইটে এমন তথ্য রাখুন যেন সেখানে বেশি ভিজিটর যান। ভিজিটর বাড়ানোর জন্য যে পদ্ধতিগুলি রয়েছে সেগুলি কাজে লাগান।
.          যদি ব্ল বা ওয়েবসাইট না থাকে তাহলেও এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে আয় করতে পারেন। ইমেইল ব্যবহার করে লিংককে বিভিন্ন জনের কাছে পাঠাতে পারেন। ই-মেইল মার্কেটিং নিজেই একটি বড় বিষয় (এবিষয়ে লেখা রয়েছে এই সাইটেই)। ফেসবুক-টুইটারের মত সাইটগুলি, অন্যের সাইটে লিংক রাখার মাধ্যমেও প্রচার করতে পারেন। এছাড়া ই-বুক লিখে পিডিএফ ফাইল হিসেবে বিতরন করার সময় সেখানেও লিংক যোগ করে দিতে পারেন। কিংবা এমন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন যা অন্যরা করেনি। চিন্তা করে তেমন কোন পদ্ধতি বের করুন।

এফিলিয়েট প্রোগ্রাম ব্যবহারে একদিকে যেমন বিপুল পরিমান আয়ের সম্ভাবনা অন্যদিকে এটা অত্যন্ত ধীরগতির একটি প্রক্রিয়া। শুরু করলেই সাথেসাথে আয় আসতে থাকবে এটা ধরে নেবেন না। বরং ২/৩ বছর পর সেটাই আয়ের মুল উতস হবে এভাবে ধরে নিয়ে প্রচার বাড়াতে চেষ্টা করুন।

ফ্রিল্যান্সিং এবং ইন্টারনেটে আয়

No comments:

Post a Comment