Thursday, November 17, 2011

ফ্রিল্যান্সিং, ক্রাউডসোর্সিং, আউটসোর্সিং : বাংলাদেশে বাস্তবতা

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হচ্ছে এটা পুরনো কথা। একজন নেতা নির্দিস্ট করে বলেছেন বাংলাদেশ ২২ নম্বর ধনী দেশ হবে। আর ধনী হওয়ার উপায় হচ্ছে আউটসোর্সিং। গার্মেন্টস শিল্পের মত এখানেও লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ করবে। আর মিলিয়ন-বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার আসতে থাকবে। আগামী মাসে ঢাকায় ই-এশিয়া সন্মেলন হতে যাচ্ছে।
যারা এবিষয়ে আগ্রহি, সামান্য হলেও জানার চেষ্টা করেছেন বা কাজের চেষ্টা করেছেন তারা জানেন বাস্তবতা আসলে কোথায়। এসব কথাকে রূপকথা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর কথা বলেই মনে হয়।
কোন বিষয় যখন দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে তখন তাকে হঠাত করে বলা কথা মনে করার কারন নেই। বরং খুজলে এর পেছনের কারনগুলিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথমে একটি উদাহরন থেকে দেখা যাক। একজন ইমেইল করে যা লিখলেন তার সারমর্ম হচ্ছে, আমি গ্রামে বাস করি। ব্যাংক একাউন্ট নেই। ইন্টারনেটে আয় করতে চাই। মোবাইল ফোন নাম্বার দিন।
এখানে বিষয় ৪টি। গ্রামে বাস করা, ব্যাংক একাউন্ট না থাক, ইন্টারনেটে আয়ের ইচ্ছে এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার। অনেকে রীতিমত গো ধরে বসেন, নাম্বার দিতেই হবে। তাদের বুঝানো কঠিন মোবাইল ফোনে আলাপ করার মত সময় তার থাকলেও সকলের নেই। যেখানে এই সাইটে প্রয়োজনীয় এসব বিষয় নিয়েই পরিস্কার বাংলায় শতশত লেখা রয়েছে, প্রতিদিন আরো যোগ হচ্ছে।
আরেকটি উদাহরন দেখা যাক। বিশ্বের শীর্ষ ক্রেডিট কার্ড কোম্পানী ভিসা প্রিপেইড মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করলে আফ্রিকায়। এরপর চালু হবে এশিয়া এবং দক্ষিন আমেরিকায়। উল্লেখ করা যেতে পারে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে আফ্রিকার বহু দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একদেশ থেকে আরেক দেশে টাকা পাঠানো যায়। কোটির বেশি গ্রাহক আছে এমন প্রতিস্ঠান কিনেছে ভিসা। সেখানে টাকা লেনদনের জন্য ব্যাংক একাউন্ট প্রয়োজন নেই। যেভাবে প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে টাকা লোড করা যায় সেভাবে লোড করা যাবে, এরপর দোকানে কিছু কেনা থেকে শুরু করে যে কারো কাছে (ভিন্নদেশে হলেও) সরাসরি মোবাইল নাম্বারে টাকা পাঠানো যাবে।
এবারে আউটসোর্সিং বিষয়টি দেখা যাক। আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশ কত মিলিয়ন ডলার আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয় করেছে তার নিখুত হিসেব অনেকে দিতে পারেন। তারা যা করেন না তা হচ্ছে সেই কাজ কি সেটা জানান না। লক্ষ লক্ষ মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য যদিও সেটাই প্রয়োজন ছিল সকলের আগে। যদি বলা গত অমুক কোম্পানীর অমুক কাজ বাংলাদেশের অমুক কোম্পানী করেছে, সেখানে অমুক সফটঅয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে, যারা কাজ করেছেন তাদের অমুক শিক্ষাগত যোগ্যতা, অমুক অভিজ্ঞতা আছে তাহলে অন্যরা সেদিকে পা বাড়াতে পারতেন। যারা মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার আয়ের কথা বলেন তারা মনের ভুলেও কখনো এই গোপন তথ্য ফাস করেন না।
এই সাইটে মুলত ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়। তারপরও আরেকবার বিষয়টি পরিস্কার করে নেয়া ভাল। অন্তত আউসোর্সিং থেকে পার্থক্য কি সেটা বোঝার জন্য।
আউটসোর্সিং বলতে এক কোম্পানীর কাজ সরাসরি আরেক কোম্পানীকে দিয়ে করানো বুঝানো হয়। বাংলাদেশের কোন কোম্পানী ইউরোপ বা আমেরিকার কোন কোম্পানীর কাজ করলে সেটা তাদের আউটসোর্সিং। তাদের নিজেদের দেশে করলে খরচ বেশি হয় সেকারনে বাইরে থেকে করানো। ফ্রিল্যান্সিং সেতুলনায় অনেকটা ব্যক্তিগত পর্যায়ের। এজন্য ফ্রিল্যান্সার, ওডেস্ক এর মত বহু সাইট রয়েছে। যার কাজ করানো প্রয়োজন তিনি সেখানে বর্ননা লিখে দেন। যারা কাজ করতে আগ্রহি তারা সেই কাজ দেখে যোগাযোগ করেন। সমঝতা হলে বিশ্বের যে কোন যায়গা থেকে যে কেউ সেই কাজ করতে পারেন।  সকলের সামনে কাজ ছেড়ে দেয়া হয় বলে অনেকে একে বলেন ক্রাউডসোর্সিং।
এবারে মুল বিষয় দেখা যাক। যারা আউটসোর্সিং এর কাজ করে বিলিয়ন ডলার আয় করবেন তারা তাদের প্রতিস্ঠানে গার্মেন্টস এর মত লক্ষ কর্মী চান। মাসে কয়েক হাজার টাকা বেতন দেবেন আর নিজেরা মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার কামাবেন। কাজেই তারা যে সাধারন মানুষকে সরাসরি কাজে জড়াতে দেবেন না এটা কি খুব অবাক হওয়ার মত কিছু ?
এখন পর্যন্ত খুব ভালভাবে পদ্ধতি চালু আছে। ইন্টারনেটে টাকা আয় করা যায় একথা ছড়ানো হয়েছে। ক্লিক করে টাকা আয় হয় একথা গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে। অথচ সেখানে ব্যাংক নেই। বেসরকারী ব্যাংক কোনদিনই গ্রামের দিকে পা বাড়াবে না। সরকারী ব্যাংক ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।
তারপরও যদি কোনভাবে কেউ করতে চায়, সেজন্য পেপল এর মত সেবা বন্ধ। যদি প্রশ্ন করেন উত্তর পাবেন, কাজ চলছে। এই উত্তর একবছর আগে শুনেছেন, দুবছর আগে শুনেছেন, তিন বছর আগে শুনেছেন তিন বছর পরও শুনবেন। ভদ্রলোকের এককথা।
তারপরও যদি ঘুরপথে কাজ করতে চান।
আবারে পুরনো কথায় যেতে হয়। একসময় বলা হত ডাটা এন্ট্রি করে, মেডিক্যাল ডাটা এনক্রিপশনের কাজ করে, ওয়াপ কনভার্শনের কাজ করে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে। শুধু সাবমেরিন কেবল থাকলেই হয়।
সেটা হয়েছে। ওয়াইম্যাক্স নামের ফোরজি চালু হয়েছে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে। তারপরও ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত যায়গায় থেকে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। নির্ভর করতে হয় মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর যার অবস্থা ডায়ালআপ নেটওয়ার্কের থেকেও খারাপ।
বিষয়গুলি একসাথে করলে ভবিষ্যতের একটি চিত্র পাওয়া যায়। কিছু ব্যক্তি সত্যিসত্যিই বিলিয়ন ডলার আয় করতে চান। এই ক্ষমতা তারা কখনোই সকলের হাতে তুলে দেবেন না। এরই মধ্যে অর্থ লেনদেনের কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে, সাথে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে অমুকের অনুমতি নিতে হবে। পেপলের জন্য এমন কোন শর্ত আরোপের সুযোগ পেলে সেটাও সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ডিসি অফিসে এখন স্ক্যান করা দরখাস্ত দেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে (কম্পিউটার ডাটাবেজের কথা ভুলে যান। এদেশে ওসব প্রয়োজন নেই)। কাজেই সারা দেশই ডিজিটাল।
বাংলা-টিউটর সাইটের পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি, যদি কোথাও সামান্যতম সুযোগও থাকে এই মহাপরিকল্পনার বাইরে যাওয়ার, নিজে কাজ করার, সেই পথের বর্ননা তুলে ধরা হবে। ফ্রিল্যান্সারকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মত আউটসোর্সিং ফ্যাক্টরীর কর্মী হওয়া থেকে নিজের পায়ে দাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হবে।

ফ্রিল্যান্সিং এবং ইন্টারনেটে আয়

No comments:

Post a Comment