Friday, October 7, 2011

ফ্রিল্যান্সিং টিপস : কাজের মুল্য নির্ধারন

ফ্রিল্যান্সিং কাজে মুল্য নির্ধারন সবসময়ই একটি বড় সমস্যা। আপনি কাজের জন্য যে পারিশ্রমিক চাইলেন ক্লায়েন্ট মনে করতে পারে সেটা বেশি। আবার বিপরীতভাবে ক্লায়েন্ট হয়ত নিজে বাজেট ঠিক করেছেন, আপনি তারচেয়ে কম চাইলে তিনি আপনাকে অদক্ষ মনে করবেন।
আপনি কিভাবে মুল্য নির্ধারন করবেন কিংবা কত নেয়া উচিত সেটা এই  পোষ্টের বিষয় না। বরং মুল্য নির্ধারনের সময় যে বিষয়গুলির কারনে মুল্য কমবেশি হয় সে সম্পর্কে ধারনা দেয়াই উদ্দেশ্য। হয়ত এখান থেকে ধারনা নিয়ে আপনার মুল্য নির্ধারনের কাজ সহজ করতে পারেন।


ঘন্টা হিসেবে না প্রোজেক্ট হিসেবে
ফ্রিল্যান্সার অনেকসময়ই ঠিক করতে পারেন না ঘন্টা হিসেবে কাজ করবেন নাকি প্রোজেক্ট হিসেবে করবেন। ঘন্টা হিসেবে কাজ করার সুবিধে হচ্ছে ক্লায়েন্টর কারনে যদি সময়ের অপব্যয় হয় তাহলেও আপনি সেজন্য অর্থ পাবেন। অন্যদিকে প্রোজেক্ট হিসেবে কাজ করার সুবিধে হিসেবে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব। ক্লায়েন্টও অনেকসময় এটা পছন্দ করেন কারন তিনি আগে থেকেই জানেন তাকে ঠিক কত দিতে হবে।
কাজেই দুই পদ্ধতিই ঠিক। বাস্তবে আপনাকে হয়ত কাজ হিসেবে দুটিই ব্যবহার করা প্রয়োজন হতে পারে। যদি শুরুতেই কাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সবকিছু পাওয়া যায় তাহলে প্রোজেক্ট হিসেবে বিল করা সুবিধেজনক। যদি ক্লায়েন্টর সাথে কথা বলা, তারকাছে কিছু নেয়া ইত্যাদি, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ইত্যাদি সম্ভাবনা থাকে তাহলে ঘন্টা হিসেবে কাজ করাই ভাল।

বাজারের সাথে প্রতিযোগিতা
অন্য যারা কাজ করছেন তারা আপনার প্রতিদ্বন্দি। কেউ যতি আপনার থেকে কম টাকায় কাজ করতে চায় তাহলে আপনিও প্রতিযোগিতায় নেমে দাম কমাবেন ?
বাস্তবতা হচ্ছে, এই পদ্ধতি মুদি দোকানে কার্যকর। এক দোকান থেকে আরেক দোকানের জিনিষে পার্থক্য নেই। যেখানে মেধার বিষয় রয়েছে সেখানে কাজে পার্থক্য থাকবেই। কাজেই মুল্যে পার্থক্য থাকবে এটাও স্বাভাবিক। সমস্যা হচ্ছে এটা পরিমান করার কাজটি খুবই জটিল। আপনি যে বিষয়গুলি বিবেচনায় এনে একজন থেকে আরেকজনের পার্থক্য হিসেব করতে পারেন তা হচ্ছে;
.          কাজ করার সামর্থ্য
.          বিশেষ ট্রেনিং
.          অভিজ্ঞতার সময়কাল
.          বিশেষ কাজের জ্ঞান
.          সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কি-না
.          সুনাম
.          সময়ের প্রাপ্যতা
.          নির্ভরযোগ্যতা
.          জীবনযাপনের খরচ
এই বিশাল তালিকা থেকে ধারনা পেতে পারেন ফ্রিল্যান্সারের মুল্য নির্ধারনের বিষয়টি কতটা জটিল হতে পারে। বড় শহরে খরচ বেশি, মফস্বলে কম শুধুমাত্র এই কারনেও বড় শহরে বাস করে কম টাকায় কাজ করতে পারেন না।

প্রয়োজন অনুযায়ী আয়ের চেষ্টা করা
অনেক ফ্রিল্যান্সার প্রথমে হিসেব করেন প্রতিমাসে তার ব্যয় কত। তারসাথে মিল রেখে সেই পরিমান আয়ের চেষ্টা করেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, বিষয়টি আপনার ব্যক্তিগত। সাধারনত আপনার ব্যক্তিগত খরচ নিয়ে ক্লায়েন্টের মাথাব্যথা নেই। আপনার খরচ বেশি একথা বলে আপনি বেশি টাকা পাবেন না।
এর সমাধান হতে পারে কাজের মান। আপনি যদি মানের উল্লেখ করেন এবং কথা রাখেন তাহলে আয় বাড়বে।

পরিমান নাকি মান
কম টাকার বেশি কাজ করবেন নাকি বেশি টাকার কম কাজ করবেন, এটা সবসময়ই বড় চিন্তার কারন হয়ে দাড়ায়।
বাস্তবতা হচ্ছে, আপনি যদি কম টাকায় বেশি কাজ করতে চেষ্টা করেন শুরুতে কিছুদিন ভাল ফল পাবেন। ফলে একদিকে যদি দাম কমতেই থাকে, অন্যদিকে ক্লায়েন্ট একসময় সামান্য কাজে খুশি থাকেন না, তিনি একটু একটু করে কাজের উন্নতি আশা করেন। ফলে একসময় সেটা আর কম টাকার কাজ থাকে না। আর যখন কম টাকায় বেশি পরিমান কাজ করবেন তখন যেহেতু আপনি বেশি সময় দেয়ার সুযোগ পাবেন না, স্বাভাবিকভাবেই কাজের মানে তার প্রভাব পড়বে।
আপনি যে কাজই করুন না কেন কাজের মান খারাপের দিকে নিতে পারেন না।

মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবেন কিনা
ফ্রিল্যান্সারদের আরেকটি বড় দ্বন্দ হচ্ছে, আরেকজন ফ্রিল্যান্সারের সাথে কাজ ভাগাভাগি করবেন কিনা। অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করালে অর্থের ভাগ তাকে দিতে হয়, নিজে করলে পুরোটাই নিজে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি বিবেচনায় আনতে পারেন;
.          মধ্যস্থতাকারী হলেও শেষ পর্যন্ত কাজের মানের দায়িত্ব আপনার। হয়ত সাবকন্ট্রাক্টর ব্যবহার করলে কাজের  অংশ বা পুরো কাজ আপনাকে আবারো করতে হতে পারে।
.          একদিকে সাবকন্ট্রাক্টর আরেকদিকে ক্লায়েন্ট দুদিকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
.          সাবকন্ট্রাক্টরকে অর্থ দিয়ে নিজের লাভ রাখার জন্য অতিরিক্ত বিল নিতে হবে।
.          সুবিধের দিক হচ্ছে, কাজ দ্রুত করা সম্ভব হয় এবং বেশি পরিমান কাজ নেয়া যায়।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের নানাবিধ দিকের মধ্যে মুল্য নির্ধারন একটি বিষয়। এখানে যাকিছু উল্লেখ করা হয়েছে তার বাইরেও ভিন্ন পরিস্থিতিতে পরতে হতে পারে আপনাকে। এসব কারনেই ফ্রিল্যান্সার যত বেশিদিন কাজ করেন অভিজ্ঞতা থেকে শিখে তত ভাল করেন।
আপনার ভিন্ন অভিজ্ঞতা বা মতামত থাকলে জানাতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং এবং ইন্টারনেটে আয়

No comments:

Post a Comment